বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সকল আম্বিয়ায়ে কেরামের খালেস অনুসারী ও উম্মাত রয়েছে। অনুরূপভাবে শেষ নবী মোহাম্মাদ সা.-এর অনুসারী ও উম্মাতগণকে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত এক বিশেষ মর্যাদা প্রদান করেছেন এবং তাদেরকে এমন সব গুণাবলীর দ্বারা বিভ‚ষিত করেছেন, যা অন্য কোনও উম্মতের ভাগ্যে জোটেনি।
এতদপ্রসঙ্গে আল্লাহপাক আল কোরআনে ইরশাদ করেছেন, তোমরাই হলো সর্বোৎকৃষ্ট উম্মত, তোমাদেরকে বিশ্ববাসীর কল্যাণের জন্য আবিভর্‚ত করা হয়েছে। তোমরা ন্যায় ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার নির্দেশ প্রদান করবে। আর যা অকল্যাণকর ও অমিষ্ট তা প্রতিরোধ ও প্রতিহত করবে।’
উম্মতে মোহাম্মাদীর সদস্যগণ হাশরের দিনে পূর্ববর্তী আম্বিয়াগণের সত্যতার সাক্ষী হবেন। আল কোরআনে এর ঘোষণা এভাবে প্রদান করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে- ‘আর এভাবেই আমি তোমাদের মধ্যমপন্থী উম্মত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি, যেন তোমরা মানবজাতির ওপর সাক্ষী হও।’ হযরত আবু সাইদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, কিয়ামতের দিন হযরত নূহ আ. এবং তার উম্মত আল্লাহর দরবারে হাজির হবেন। তখন আল্লাহপাক তাকে জিজ্ঞেস করবেন, তুমি কি আমার বাণী পৌঁছেয়েছ?
তিনি বলবেন, হে আমার পরওয়ারদিগার, আমি পৌঁছিয়েছি। তখন আল্লাহপাক তার উম্মতগণকে জিজ্ঞেস করবেন, নূহ আ. কি তোমাদের নিকট আমার বাণী পৌঁছিয়েছিল? তারা বলবে, না আমাদের নিকট কোনো নবীই আসেননি। এমতাবস্থায় আল্লাহপাক হযরত নূহ আ. কে লক্ষ্য করে বলবেন, তোমার পক্ষে সাক্ষ্য দেবে কে? তিনি বলবেন, হযরত মোহাম্মাদ সা. ও তার উম্মতগণ। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, তখন আমরা সাক্ষ্য দেব। নিশ্চয়ই নূহ আ. আল্লাহর বাণী পৌঁছিয়েছিল।
হযরত আবু সাইদ খুদরী রা. হতে আরও বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বইজন জাহান্নামী হবে ইয়াজুজ মাজুজের দল থেকে। তোমাদের মধ্য থেকে হবে মাত্র একজন। আবার মানুষদের মধ্যে তোমাদের তুলনা যেমন সাদা গরুর পার্শ্ব মধ্যে যেন একটি কালো পশম অথবা কালো গরুর পার্শ্বে যেন একটি সাদা পশম। আমি অবশ্য আশা রাখি যে, জান্নাতবাসীদের মধ্যে হবে এক চতুর্থাংশ। রাবী বলেন, আমরা সকলে খুশীতে বলে উঠলাম, আল্লাহু আকবার। তারপর রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, তোমরা হবে জান্নাতবাসীদের এক তৃতীয়াংশ। আমরা বলে উঠলাম আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। তারপর বললেন, তোমরা অর্ধাংশ।
হযরত ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘আমার উম্মতের সত্তুর হাজার লোক বিনা হিসাবেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা হবে এমন লোক যারা ঝাড়ফুঁকের আশ্রয় নেয় না, শুভ-অশুভ মানে না, বরং তারা কেবলমাত্র তাদের প্রতিপালকের ওপরই একান্তভাবে ভরসা রাখে।’
উম্মতে মোহাম্মাদীর পৃথিবীতে অবস্থানের মেয়াদকাল সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি, যখন তিনি মিম্মরে উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের আগের উম্মতদের তুলনায় তোমাদের (পৃথিবীতে) অবস্থানের মেয়াদকাল আসরের সালাত ও সূর্যাস্তের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত। তাওরাত কিতাবের ধারকদের তাওরাত দেয়া হলে তারা সে মোতাবেক আমল করল। তবে দুপুর হলে তারা অপারগ হয়ে পড়ল। এ জন্য তাদের এক এক ক্বিরাত করে পারিশ্রমিক দেয়া হল।
তারপর ইঞ্জিল কিতাবের ধারকদের ইঞ্জিল দেয়া হল, তারা সে মোতাবেক আসরের সালাত পর্যন্ত আমল করল। তারপর অক্ষম হয়ে পড়লে তাদেরকে দেয়া হল এক ক্বিরাত ক্বিরাত করে। তারপর তোমাদের কোরআনুল কারীম দেয়া হলো। ফলে এই কোরআন মোতাবেক তোমরা আসর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আমল করেছ। এজন্য তোমাদের দু ক্বিরাত দু ক্বিরাত করে পারিশ্রমিক দেয়া হয়েছে। তাওরাতের ধারকরা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক, উম্মতে মোহাম্মাদীর আমলের সময় তো সবচেয়ে কম, কিন্তু পারিশ্রমিকে আমাদের দ্বিগুণ, সবচেয়ে বেশি?
তখন আল্লাহপাক বলবেন, তোমাদের পারিশ্রমিক পুরোপুরিই দেয়া হয়েছে। তোমাদের ওপর কোনো জুলুম করা হয়েছে কি? তারা বলবে, না। তখন আল্লাহপাক বলবেন, (উম্মতে মোহাম্মাদীর জন্য) সেটি হচ্ছে আমার অনুগ্রহ। আমি যাকে চাই, তাকে দেই। তথ্যসূত্র: আল কোরআন; সহীহ বুখারী ৪/৩৩৩৯; ৬/৪৭৪১; ৮/৬৪৭২; ৯/৭৪৬৭; ৯/৭২৮০; ৭/৫৮১১; ৪/৩২৪৭।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।