বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোরআন শরীফে আল্লাহর ইলম সম্পর্কে এমন দুটি আয়াত আছে যেখানে আল্লাহ তাআলা খোদ ঘোষণা করেছেন যে, “দুনিয়ার সমস্ত গাছ যদি কলম হয়ে যায় এবং সাত সমুদ্রের পানি কালি হয়ে যায় এবং সেগুলো দ্বারা আল্লাহর বাক্যগুলো লেখা শুরু করা হয়, তাহলে কালি তো শেষ হয়ে যাবেই এবং কলমগুলো ভোতা হয়ে যাবে, ভেঙ্গে যাবে কিন্তু আল্লাহর কথাগুলো শেষ হবে না।” প্রথমটি সূরা ক্বাফ এর শেষ আয়াত।
পরবর্তী আয়াতের অনুবাদ এই; “বলো, আমার প্রতিপালকের কথা লিপিবদ্ধ করবার জন্য সমুদ্র যদি কালি হয়, তবে আমার প্রতি পালকের কথা শেষ হবার পূর্বেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে, আমার সাহায্যার্থে এর অনুরূপ আরও সমুদ্র আনলেও।” (সূরা ক্বাফ, আয়াত: ১০৯)
কাশশাফ ও জাললাইন ইত্যাদি অনুযায়ী, লিপিবদ্ধ করবার এবং আরও সমুদ্র বাক্যগুলো মূল আরবীতে উহ্য রয়েছে। দ্বিতীয় আয়াতটি সূরা লুকমানে যার অর্থ হচ্ছে; আল্লাহ অন্যত্র বলেন; “পৃথিবীর সমস্ত বৃক্ষ যদি কলম হয়, আর সমুদ্র হয় কালি এবং এর সাথে আরও সাত সমুদ্র যুক্ত হয় তবুও আল্লাহর বাণী নিঃশেষ হবে না। আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। (আয়াত: ২৭)
আয়াতদ্বয়ের অর্থ এতই স্পষ্ট যে, আলাদা ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়ে না। কোরআন এর প্রতিপাদ্য বিষয়বস্তু ইত্যাদির নতুনত্ব, অভিনব চিরন্তন ও জীবন্ত হয়ে থাকবে। আল্লাহর বাণী ও কথা মালার বিশালতা ও ব্যাপৃতিকে সীমাবদ্ধ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আর মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও কোরআন এর অসংখ্য ব্যাখ্যা তফসীর গ্রন্থ দুনিয়ার বহু ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত হতে থাকবে।
তবে এ বক্তব্যের উদ্দেশ্য এই নয় যে, যার যা খুশি অর্থ করবে, মনগড়া বিকৃত অর্থ করবে, যা ইহুদী, খ্রিস্টান ও এক শ্রেণীর মুসলমানের ভ্রান্ত গোমরাহ সম্প্রদায়গুলো করে থাকে। তফসীর শাস্ত্রের নীতিমালা ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের এবং আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ (সা:) কে উদ্দেশ্য করে বলেন, “বল, আমি তোমাদের মত একজন মানুষই, আমার প্রতি (ওহী) প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমদের ইলাহ একমাত্র। (সূরা: ১৮ কাফের আয়াত: ১১০)
এই আয়াতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, নাবীর ইলমও সীমিত এবং প্রদত্ত। আল্লাহ তাআলার ইলম এর ন্যায় জাতিও অসীম, ব্যাপক নয়। আল্লাহর জাত, সত্ত্বা এমন যে সর্ব প্রকারের ইলম ও পরিপূর্ণতায় বেষ্টিত, তার পক্ষ হতে যা তাকে ওহী করা হয়, যার মূল হচ্ছে তওহীদের ইলম, সে দিকেই তিনি সকলকে আহ্বান জানান। এ তওহীদের আসল হচ্ছে আল্লাহর অস্তিত্ব একত্ববাদ- অর্থাৎ আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় এবং তার কোন শরিক বা অংশীদার নেই। তিনি ইতিবাচক গুণাবলীর দ্বারা সুপ্রতিষ্ঠিত ইত্যাদি অসীম ক্ষমতার অধিকারী।
তাঁর হামদ ও নাত প্রশংসা করে শেষ করা যাবে না। তাঁর সঠিক পূর্ণ পরিচয় তুলে ধরার ক্ষমতা মানুষের নেই। হাক্কানী উলামা মোফাসসিরীনের ব্যাখ্যার বিরুদ্ধে হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। ‘ইসরাইলিয়াত’ এর অনুসরণ করে যারা কোরআন এর তফসীর রচনা করেছেন সেগুলো সম্পর্কে হাক্কানী উলামায়ে কেরাম তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন সেগুলোও জানা থাকতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।