মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারত সরকার ঢালাও কারফিউ আরোপ এবং সকল যোগাযোগ ও ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে অধিকৃত কাশ্মীরের নিকট থেকে তার সীমিত স্বায়ত্তশাসনটুকুও কেড়ে নিল। ঠিক তখন উপসাগরীয় আরব দেশগুলো তাদের মুখ একেবারে বন্ধ করে রাখল। এই মুখবন্ধ করে রাখার কারণ ভারতের সাথে তাদের বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা। ভারতকে আরব উপদ্বীপের সবচেয়ে লোভনীয় অর্থনৈতিক অংশীদার করেছে।
আঞ্চলিক মোড়ল সউদী আরব কাশ্মীর বিষয়ে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ও ঘনীভূত সঙ্কটে উদ্বেগ ব্যক্ত করেছে। অন্য উপসাগরীয় দেশগুলো কুয়েত, কাতার, বাহরাইন ও ওমান কোনো বিবৃতিই দেয়নি। সংযুক্ত আরব আমিরাত আরো এগিয়ে গিয়ে কাশ্মীর বিষয়ে ভারতের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছে, কাশ্মীরের মর্যাদা বিলোপ ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।
ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে সামরিক দমন অভিযানের ব্যাপারে সউদী আরবের জবাবের বিষয়টি বেশ জটিল। কারণ ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের সাথেই তার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। আবার মুসলিম বিশ্বে নেতৃত্ব দান নিয়ে তুরস্ক ও ইরানের সাথে সউদী আরবের রয়েছে প্রতিদ্ব›িদ্বতা।
কাশ্মীরে ভারতের পদক্ষেপ বিষয়ে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সউদী আরব ও বাহরাইনের নেতাদের সাথে কথা বলেছেন। কিন্তু এটা স্পষ্ট নয় যে তিনি যদি কাশ্মীর সমস্যা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করেন তাহলে আরব সমর্থন পাবেন কিনা।
ইমরান খান গত বৃহস্পতিবার কাশ্মীর বিষয়ে আন্তর্জাতিক নীরবতা সমালোচনা করেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন যে বিশ^ শীঘ্রই আরেকটি স্রেব্রেনিসা ধরনের গণহত্যা ও জাতিগত নিধন দেখতে চায় কিনা।
ইমরান খান টুইটে বলেন, আমি হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি তা ঘটতে দেয় তাহলে মুসলিম বিশে^র ওপর তার ভয়াবহ প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া পড়বে। জন্ম দেবে উগ্রপন্থা ও অব্যাহত সহিংসতার।
এদিকে কাশ্মীর বিষয়ে সউদী আরবের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে সামরিক কারফিউ বা যোগাযোগ বন্ধ করে ভ‚খন্ডটিকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার কোনো উল্লেখ নেই। এতে বলা হয়, তারা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে আন্তর্জাতিক প্রস্তাবের ভিত্তিতে তারা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছে।
উপসাগরীয় আরব দেশগুলোতে প্রায় ৭০ লাখ প্রবাসী ভারতীয় কর্মরত যারা ভারতের অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখছে। ভারতীয় ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক, গাড়ি চালক, নির্মাণ শ্রমিক ও অন্যান্য শ্রমিকরা উপসাগর অঞ্চলের নগর-শহরগুলো সচল রেখেছে।
তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) সাথে ভারতের সম্পর্ক সবচেয়ে জোরালো। আমিরাতে ভারতের ৩ঃ১ অর্থাৎ আমিরাতিদের চেয়ে ভারতীয়দের সংখ্যা ৩ গুণ বেশি। ২০১৮ সালে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৫০ বিলিয়ন ডলার। ইউএই ভারতের দ্বিতীয় বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আমিরাতে ভারতের বিনিয়োগের পরিমাণ ৫৫ বিলিয়ন ডলার এবং দুবাই রিয়েল এস্টেট বাজারে ভারতীয়রা বৃহত্তম বিদেশী বিনিয়োগকারী। এদিকে দুবাইর বৈশ্বিক বন্দর অপারেটর ডিপি ওয়ার্ল্ড ভ‚স্বর্গ কাশ্মীরে একটি লজিস্টিক-হাব গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে।
ইতোমধ্যেই বিশ্বের অন্যতম সামরিকীকৃত অঞ্চলে আরো হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পদক্ষেপে প্রতি সমর্থন জানানোর ইঙ্গিত দিয়ে আমিরাত ভারতের সাথে তার কৌশলগত সম্পর্ক দ্বিগুণ জোরদার করেছে।
ভারতে আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আহমেদ আল বান্নার বক্তব্য দুই দেশের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, কাশ্মীরের পরিবর্তন সামাজিক ন্যায় বিচার ও নিরাপত্তার উন্নয়ন করবে এবং স্থিতিশীলতা ও শান্তি আরো জোরদার করবে।
গত ৫ আগস্ট ভারত কাশ্মীরের সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিল করে। এর অর্থ কাশ্মীরের চাকরি এতদিন শুধু কাশ্মীরীরাই পেত, এখন থেকে আর পাবে না। একই পরিণতি হবে শিক্ষাবৃত্তি ও জমির মালিকানার ক্ষেত্রে। এতদিন বাইরের কেউ কাশ্মীরে জমি কিনতে পারত না, এখন সে বাধা উঠে গেল। সরকারের সমালোচকরা বলছেন, এখন বাইরের যে কেউ এসে জমি কিনে কাশ্মীরে স্থায়ী ভাবে বাস করতে পারবে। এটা কাশ্মীরের সংস্কৃতি এবং হিন্দু বসতি স্থাপনের মাধ্যমে জনসংখ্যা পাল্টে দেয়ার চেষ্টা।
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে উপসাগরীয় অঞ্চল-ভারত সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ হাসান আল-হাসান বলেন, এই ধর্মীয় উত্তেজনা কাশ্মীরকে বিশ্ব মুসলিম নেতৃত্ব দানের ক্ষেত্রে সউদী আরব, তুরস্ক ও ইরানের মধ্যে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, তুর্কিরা কাশ্মীরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। ইরানিরাও তাই করছে। অতএব এটাই স্বাভাবিক যে সউদীরাও একই চেষ্টা করবে। তারা তুরস্ক ও ইরানের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে কাশ্মীর তাদের প্রভাবে থাকুক সে চেষ্টা করছে। এভাবে সেখানে চলছে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা।
ভারতের সাথে তুরস্কের বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৭০০ কোটি ডলারেরও কম। তাই তুরস্ক পাকিস্তানের প্রতি তার সমর্থন প্রদান করেছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মধ্যে সাম্প্রতিক কথাবার্তায় উভয়ে কাশ্মীরের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
ইরান গত সপ্তাহে তেহরানে ভারতের দূতাবাসের সামনে ৬০ জন ছাত্রের এক প্রতীকী বিক্ষোভ প্রদর্শনের অনুমতি দেয়। একজন উর্ধ্বতন ধর্মীয় নেতা গতকাল শুক্রবার জুমআর নামাজের সময় মুসল্লিদের বলেন যে কাশ্মীরে ভারতের পদক্ষেপ এক কুৎসিত ঘটনা। প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ও ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উভয়েই মেজাজি বিবৃতিতে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সংলাপ ও শান্তির আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, ইরানের এ ধরনের জবাব এল ভারত ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানি তেল কেনা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়ায় দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার পর।
এদিকে সউদী আরবে ২৭ লাখ ভারতীয় শ্রমিক কর্মরত। ভারতের সরকারি পরিসংখ্যান মতে, সউদি আরব ইরাকের ভারতের দ্বিতীয় বৃহৎ তেল সরবরাহকারী দেশ। গত বছর ভারতে সউদী তেল রফতানির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলার।
গত সোমবার কাশ্মীরে কারফিউর অষ্টম দিনে ভারত দেশে এ যাবতকালের বৃহত্তম বিদেশী বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করে। তা হচ্ছে সউদী আরবের রাষ্ট্র মালিকানাধীন তেল কোম্পানি আরামকে ১৫ বিলিয়ন ডলারে ভারতের রিলায়েন্স তেল ও রাসায়নিক ব্যবসা কিনে নিয়েছে। এর বাইরে সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ২০২১ সালের মধ্যে ভারতে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছেন।
লাফায়েত কলেজে দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে সহকারি অধ্যাপক কাশ্মীরী আমেরিকান হাফসা কানজওয়াল বলেন, উপসাগরীয় আরব দেশগুলো কাশ্মীরীদের অধিকারের প্রতি সমর্থন দিতে শঙ্কিত। কারণ এটা হচ্ছে তাদের নিজেদের স্বাধীনতার অধিকারের লড়াই।
সম্প্রতি আরব বসন্ত বিক্ষোভে কম্পিত বাহরাইনে গত রোববার ঈদুল আযহার পর কাশ্মীরের সমর্থনে ও ভারতের বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশীয়রা বিক্ষোভ প্রদর্শন করলে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়।
কানজওয়াল বলেন, কাশ্মেিরর আন্দোলন আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার এবং জনগণের অধিকার ও গণতন্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট। এসব উপসাগরীয় দেশ ও ইসরাইল এ সবের প্রচন্ড বিরোধী এবং শঙ্কিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।