Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৫২ মণ ওজনের সিনবাদ বিক্রি হয়নি

মো: সোহেল রানা খান, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

এবারের কোরবানীর ঈদে দেশীয় পদ্ধতিতে পালন করা সব চেয়ে বড় গরু মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দড়গ্রাম ইউনিয়নের সাফুল্লী এলাকার বিল্লাল হোসেনের ৫২ মন ওজনের সিনবাদ বিক্রি হয়নি। এতো বড় গরু বিক্রি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পরেছে এর মালিক কৃষক বিল্লাল।
বিশালাকৃতির গরু (হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান) ষাঁড় সিনবাদ কোরবানি ঈদে বিক্রি না হওয়ায় এর লালন পালন নিয়ে চিন্তায় পরেছে বিল্লাল।

বুধবার দুপুরে সিনবাদের মালিক বিল্লাল হোসেন জানায়, সিনবাদকে বিক্রি করতে গত বুধবার রাতে ঢাকার গাবতলীর পশুর হাটে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে সিনবাদের যোগ্য দাম কেউ বলেনি। একজন মাত্র ক্রেতা ১০ লাখের নিচে দাম চাইতে বলে চলে গেছে। পরে সোমবার সকালে গরুটিকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ৫ দিন গাবতলীর হাটে থাকায় ও সিনবাদকে আনা নেওয়া করতে ৬৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গরুটি বিক্রি না হওয়ায় আমি হতাশ ও চিন্তিত হয়ে পরেছি।
সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভেটেনারি সার্জন ডা. সেলিম জাহান জানায়, বিশালাকৃতির গরু সিনবাদের দৈর্ঘ্য ৯৬ ইঞ্চি, উচ্চতা ৬ ফিট ৭ ইঞ্চি, ওজন প্রায় ৫২ মন।
জানা যায়, বিল্লাল হোসেন ২ বছর আগে পার্শ্ববর্তী এলাকা গোপালপুর থেকে সে সময় আড়াই বছর বয়সী হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটি ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে কেনে। পরে পরিবারের সবাই মিলে গরুটির নাম রাখে সিনবাদ। এরপর থেকেই সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে লালন পালন করা হচ্ছে তাকে।

সিনবাদের থাকার ঘরটাও বেশ রাজকীয়। ঘরের মেঝে সম্পূর্ণ পাকা, পায়ে ব্যাথা যাতে না পায় সে জন্য ফ্লোরে চটের কার্পেট এবং গরম থেকে সুরক্ষার জন্য মাথার উপরে তিনটি সিলিং ফ্যান ও একটি বড় ফাইটার ফ্যানের বাতাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তার জন্য। দিনে আর রাতে মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ বার সিনবাদকে গোসল করানো হয়। তার দেখাশেনিার জন্য একজন স্থায়ী লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সিনবাদের বর্তমান বয়স ৪ বছর ৭ মাসের মতো। রুটিন অনুযায়ী দীর্ঘ একটি খাবার তালিকা রয়েছে তার।

সিনবাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রয়েছে দশ কেজি ভুসি, দুই কেজি মালটা, দুই কেজি আপেল, ছয় হালি কলা, এক কেজি গুড়, নালি হাফ কেজি, ভুট্টার ফাকি দুই কেজি, ছোলার ফাকি এক কেজি, মিষ্টি কুমড়া এবং পাঁচ হালি লেবু এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কাঁচা ঘাস।
বর্তমানে প্রতিদিন সিনবাদের খাবারের পেছনে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।
বিশালাকৃতির গরুটি দেখার জন্য আশেপাশের অঞ্চল থেকে হাজারও মানুষ প্রতিনিয়ত ভিড় করছে বিল্লাল হোসেনের বাড়িতে। কেউ ছবি তুলছে কেউ ভিডিও করছে গরুটির।

সিনবাদের মালিক বিল্লাল হোসেন বলেন, কৃষি কাজ ও ধানের ব্যবসার পাশাপাশি গরু পালন করেন দীর্ঘদিন ধরে। তবে সিনবাদ গরুটিই তার সেরা গরু। এর জন্য প্রচুর শ্রম ও টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে তাকে। সখ করে গরুটির নাম রেখেছে সিনবাদ। গত (১ বছর আগে) ঈদুল আজহার সময় সিনবাদের ওজন ছিল ২৭ মনের মতো। সে সময় গরুটি ক্রেতারা সাড়ে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলেছিল কিন্তু বিক্রি করে নি সে। সিনবাদের দেখবাল করার জন্য একজন রাখাল রেখেছি, তাকে প্রতি মাসে সাড়ে ১২ হাজার টাকা বেতন দিতে হচ্ছে। এ পর্যন্ত সিনবাদের পেছনে ১৮ থেকে ১৯ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এবারও গরুটি বিক্রি করতে না পেরে হতাশ সে। সিনবাদের বিক্রি এখন কি ভাবে করা যায় তাই চিন্তা তার।

সিনবাদের পরিচর্যাকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, সিনবাদ অপরিষ্কার স্থানে থাকতে চায় না। সে যেখানে শুবে সেখানে সব সময় পরিষ্কার রাখতে হয়। সিনবাদকে সারাদিনই কিছু না কিছু খেতে দিতে হয়। এ ছাড়া তাকে (সিনবাদ) রাত দিন মিলিয়ে ৮ থেকে ১০ বার গোসল করাতে হয়। ও অনেক শান্ত, তবে বেশি মানুষ দেখতে পারে না সিনবাদ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিনবাদ বিক্রি হয়নি
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ