বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত সিফাতে ইরাদার সম্পূর্ণ অধিকারী। এ কথার অর্থ হলো, তিনি স্বীয় ইচ্ছায় যা চান তা-ই করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা অস্তিত্ব দান করেন, যাকে ইচ্ছা নিশ্চিহ্ন করে দেন। তার অনাদি ইচ্ছা মোতাবেক সব কিছু হচ্ছে এবং হতে থাকবে। তিনি যা চাইবেন তা অবশ্যই হতে হবে। তার ইচ্ছা ও মর্জির বাইরে কিছুই হবে না। সিফাতে ইরাদা সম্পর্কে কোরআনুল কারীমে আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন, ক. আল্লাহপাক তোমাদের ব্যাপারে সহজতার ইচ্ছা করেন, জটিলতার ইচ্ছা করেন না। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৮৫)। খ. ইরশাদ হয়েছে, এ ব্যতীত আর কিছুই নয় যে, আমি যখন কোনো কিছুর ইচ্ছা করি তখন সে ব্যাপরে বলি ‘কুন’ হয়ে যাও, তখন তা হয়ে যায়। (সূরা নাহল : আয়াত ৪)। গ. আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মাযহাব বা অভিমত হলো, আল্লাহপাক যার অস্তিত্ব দানের ইচ্ছা করেন, তা অস্তিত্ব লাভ করবে। অস্তিত্ব ধারন হলো তার ইচ্ছার বাস্তবায়ন। যদিও বিষয়টি তার সন্তুষ্টির পরিচায়ক নাও হয়। তা ছাড়া সালফে সালেহীনের এটাই প্রসিদ্ধ আকিদা যে, আল্লাহপাক যা ইচ্ছা করেন তাই হয়। আর তিনি যা ইচ্ছা করেন না, তা হয় না।
আল্লাহ তায়ালা শ্রবণশক্তির গুণেও গুণান্বিত। অর্থাৎ আল্লাহপাক সৃষ্টির সব কথা শোনেন। একের কথা শ্রবণকালে অন্যের কথা শ্রবণে কোনো রকম বাঁধার সৃষ্টি হয় না। তিনি একই সাথে মানব, দানব, ফিরিশতা, চতুস্পদ প্রাণী, গাছের পাখি, পানির মাছ, কীট-পতঙ্গ এমন কি সৃষ্টি জগতের সকল সৃষ্টির কথা শোনেন এবং বোঝেন। মানুষ এবং অন্য সৃষ্টির ভাষার ভিন্নতা তাকে সংশয়ে ও সন্দেহে ফেলতে পারে না। বিভিন্ন ভাষার মিশ্রন-হেতু দুর্বোধ্যতা তাকে স্পর্শ করতে পারে না। এমন অত্যাশ্বর্য ও অতুলনীয় স্মরণশক্তির অধিকারী হওয়া সত্তে¡ও তিনি শ্রবণেন্দ্রিয় হতে মুক্ত ও পবিত্র এবং মুখাপেক্ষীহীন।
এতদসম্পর্কে কোরআনুল কারীমে আল্লাহপাক সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ক. তুমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় কামনা কর, নিশ্চয়ই তিনি সব শব্দ শোনেন এবং সব দৃশ্য দেখেনে। (সূরা গাফির : আয়াত ৫৬)। খ. ইরশাদ হয়েছে, তিনি কোনো বস্তুর তুল্য নন, বা কোনো বস্তু তার তুল্য নয়। (সূরা শোরা : আয়াত ১১)। গ. তিনি তার অনাদী শ্রবণশক্তি গুণের মাধ্যমে সকল শব্দ, বর্ণ উত্তমরূপে শ্রবণ করেন। (শরহে ফিকহে আকবার : পৃ. ১৮)। ঘ. তিনি চিরঞ্জীব, সর্বশ্রোতা ও মহান স্রষ্টা। এ ব্যাপারে সকল আসমানী কিতাবে সাক্ষ্য রয়েছে। সকল আম্বিয়ায়ে কেরাম ওলামায়ে মুহাক্কেকীন, জমহুল ওলামাগণ এ ব্যাপারে একমত। (শরহুল মাকাসিদ : খন্ড ৩, পৃ. ১০০)।
আল্লাহপাক সিফাতে ‘বাছর’ অর্থাৎ দেখার গুণেও গুণান্বিত। আল্লাহপাক সকল বস্তুকেই দেখেন। কোনো বস্তু আধারে হোক বা আলোতে, নিকটে হোক বা দূরে, দিনে হোক বা রাতে, ক্ষুদ্র হোক বা বৃহৎ, সৃষ্টির দৃষ্টিযোগ্য হোক বা না হোক, আল্লাহপাক সবকিছুকে সর্বাবস্থায় একই সমান দেখেন। কোনো বস্তু কখনোই তার দৃষ্টি থেকে আত্মগোপন করতে পারে না। তবে তিনি সৃষ্টিজীবের চোখের মত চোখ এবং চোখের সর্বপ্রকার রূপ, আকার-আকৃতি ইত্যাদি হতে মুক্ত ও পবিত্র।
এতদপ্রসঙ্গে আল্লাহপাক কোরআনে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ক. নিশ্চয়ই আল্লাহপাক তার বান্দাহগণের খবর রাখের এবং দেখেন। (সূরা বনী ইসরাঈল : আয়াত ৩০)। খ. ইরশাদ হয়েছে, তার সাথে কোনো বস্তুর তুলনা হয় না। তিনি উপমাহীন। (সূরা শোরা : আয়াত ১১)। গ. হযরত আবু হোরায়রা রা. এর বর্ণনায় হাদীসে জিব্রাঈলে উল্লেখ আছে, হযরত জিব্রাঈল আ. জিজ্ঞাসা করলেন, হে মোহাম্মাদ সা., ইহসান কি? রাসূলুল্লাহ সা. উত্তর দিলেন, তুমি এমন একাগ্রতার সাথে আল্লাহর ইবাদত করবে, যেন তুমি তাকে দেখছ। যদি তুমি তাকে নাও দেখ, তিনি অবশ্যই তোমাকে দেখে থাকেন। (সহীহ বুখারী : খন্ড ১, পৃ. ১২)। ঘ. আল্লাহপাক সকল রূপ, আকার ও রং এমন অনাদি দৃষ্টিতে দেখে থাকেন, যা তার আমলী সিফাত। তার দেখা ও শোনাতে কৃত্রিমতা ও নতুনত্ব নেই। এক কথায় বলা যায়, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। তিনি শোনেন ও দেখেন। শোনার কোনো বিষয় তা যতই গোপন হোক, তার কাছে গোপন নয়। এবং দেখার কোনো বস্তু তা যতই সু² হোক তার দৃষ্টি হতে অদৃশ্য থাকতে পারে না। তিনি অন্ধকার রাতে কৃষ্ণ প্রস্তর খন্ডের ওপর চলমান কৃষ্ণ পিপিলিকার পদ শব্দ পর্যন্ত শোনেন ও তার পদচারণা দেখেন। (শরহে ফিকহে আকবার : পৃ. ১৮)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।