Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যেভাবে দাঁড়াব প্রিয় নবীর (সা.) সামনে

| প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০২ এএম

ইসলাম-পূর্ব যুগে মদিনা শরীফের নাম ছিল ইয়াসরিব। রাসুলে কারিম (সা.) এর হিজরতের পর এই শহরের নাম হয় মদিনাতুন্নবী বা নবীজির শহর। এখন বলা হয় মদিনা। সোনার মদিনা, প্রাণের মদিনা। মুমিন-মুসলমানদের প্রাণের ভূমি। মদিনা শরীফ হলো নবীজি (সা.) এর প্রিয় শহর; শান্তির নগর।

হাদিস শরিফে রাসুলে কারিম (সা.) বলেন, ‘যে আমার রওজা জিয়ারত করল, তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল।’ (বায়হাকী : ৩৮৬২)। তিনি আরও বলেন, যে হজ করল কিন্তু আমার রওজা জিয়ারত করল না; সে আমার প্রতি অন্যায় করল। (ইবনে হিব্বান, দারা কুতনী, দায়লামী শরিফ।) ফকিহগণের মতে, হাজিদের জন্য মদিনা শরিফ জিয়ারত করা সুন্নাত। পাকিস্তানের প্রখ্যাত মুফতি এবং হানাফি মাজহাবের জবরদস্ত আলেম আল্লামা ইউসুফ ইসলাহি তার আসান ফিকাহ গ্রন্থে লিখেছেন, হাজি সাহেবদের জন্য রওজা শরিফ জিয়ারত করা ওয়াজিব।

জান্নাত প্রত্যাশী প্রতিটি মুমিন মুসলমানদের অন্তর সর্বদা উন্মুখ হয়ে থাকে নবী পাক (সা.) এর রওজা মোবারক যিয়ারত ও পবিত্র মদীনা মুনাওয়ারা দেখার জন্য। হুজুর পাক (সা.) এর রওজা পাকের সবুজ গম্বুজ তো বেহেশতের একটি নিদর্শন যা দর্শনে কেবল চোখ পবিত্র হয় না, প্রশান্তিতে ভরে ওঠে হৃদয় ওমন। সবুজ গম্বুজের চতুর্দিকে রহমতের এমন ¯্রােতধারা প্রবাহমান, যার প্র¯্রবণে কার না অবগাহন করতে ইচ্ছে করে। কার না মন চায় হৃদয় উজাড় করে বাদশাহর বাদশাহ কামলীওয়ালা নবীকে (সা.) কে সালাতু সালাম জানাতে! কারণ এখানেই শুয়ে আছেন সুলতানে মাদীনা, রাহমাতুল্লিল আলামীন, হায়াতুন্নাবী মোহাম্মদ মোস্তফা আহমাদ মোজতবা (সা.)।

জান্নাতী নিশান রওজা পাকের যিয়ারতে রয়েছে অধিক পূণ্য ও ফজিলত। যা কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস দ্বারা সমর্থিত ও উত্তম ইবাদত হিসেবে গণ্য। রওজা পাকের যিয়ারতের ফজিলত কোরআন-সুন্নাহর আলোকে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।

আল কুরআনের আলোকে

আল-কুরআনে রওজা পাকের যিয়ারতের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, (হে মাহবুব!) যদি তারা নিজেদের আত্মার উপর জুলম করে তাহলে যেন তারা আপনার দরবারে আসে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং রাসুল (সা.) যদি তাদের জন্য ক্ষমা চেয়ে সুপারিশ করেন তবে তারা অবশ্যই আল্লাহকে তওবা কবুলকারী ও দয়ালু পাবে। (সুরা নিসা, আয়াত : ৬৪।)

এ আয়াতের ব্যখ্যায় আল্লামা কাজী আয়াজ তার আশ-শিফা গ্রন্থে বলেন, নবিজীর জীবদ্দশায় যেমন এই আয়াতের আমল প্রযোজ্য ছিলো, তেমনি হুজুরের ওফাতের পরও এই আয়াতের আমল হুবহু অবিকল কার্যকর থাকবে। হুজুরপুর নূরের রওজা শরিফের কাছে গিয়ে তার অসিলা দিয়ে ক্ষমা চাইলে, দোয়া করলে হুজুর (সা.) ওই উম্মতের জন্য সুপারিশ করবেন এবং আল্লাহতালা তাঁকে ক্ষমা করবেন, তার দোয়া কবুল করবেন।

আল হাদিসের আলোকে

হুজুরপুর নূর (সা.) ইরশাদ করেছেন, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার রওজা মোবারক
যিয়ারত করল তার জন্য আমার শাফায়াত (সুপারিশ) ওয়াজিব হয়ে গেল। (বায়হাকী।) আরেক বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি একনিষ্ঠভাবে মদীনার
উপস্থিত হয়ে আমার যিয়ারত করবে কিয়ামত দিবসে আমি তার পক্ষে সাক্ষী ও সুপারিশকারী হব। (বায়হাকী।) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে , যে ব্যক্তি
বাইতুল্লাহ শরীফ হজ্জ করল অথচ আমার যিয়ারত করল না, মূলত সে আমার উপর জুলুম করল। (ইবনু হিব্বান, দারা কুতনী এবং দায়লামী,)

যেভাবে দাঁড়াবো প্রিয় নবীর (সা.) সামনে

রাসুল (সা.) এর রওজা পাক হাজারো বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। তার শান ও মর্যাদা মহান আল্লাহ প্রদত্ত। এই মহিমান্বিত পূণ্যস্থান যিয়ারতে আদব বজায় রাখা ঈমানের দাবী। আসুন জেনে নিই কীভাবে আদবের সঙ্গে রওজা শরীফ যিয়ারত করব। দেহ-মনে পবিত্র হয়ে নিন। সুন্দর পোশাকে সুসজ্জিত হোন। খুশবু মেখে নিন মন ভরে। দুরু দুরু বুকে পা ফেলুন। প্রবেশ করুন মসজিদে নববীতে। বারবার মনকে বলুন, এই মসজিদেই জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন দু’জাহানের বাদশাহ সরকারে কায়েনাত উম্মতের কান্ডারী নবী (সা.)।

রিয়াজুল জান্নাতে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়–ন। ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় বিগলিত হয়ে নূর নবিজির প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করতে থাকুন। খুব আদবের সঙ্গে বিনয়ের সুরে বলুন- ‘আস-সালাতু আস-সালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ’। তারপর হজরত আবু বকর (রা.) ও হজরত উমর (রা.) এর প্রতি সালাম পেশ করুন এবং তাদের মাজার যিয়ারত করুন।

যিয়ারতের সময় হৃদয়-মন পরিপূর্ণ বিনয়াবনত ও সম্পূর্ণ ন¤্র করে ফেলুন। সাবধান! রওজাপাকে উচ্চ আওয়াজে কথা বলা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকুন। প্রিয় নবীকে অসিলা করে আল্লাহর কাছে প্রাণ খুলে দোয়া করুন। নবীপ্রেমে সিক্ত হৃদয়ে অঝোরে কাঁদুন। দুই চোখের অশ্রæতে নিজের ভেতরের সব পাপ-তাপ ধুয়ে-মুছে সাফ করে নিন। বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করুন। আরো বেশি সালাত সালাম পেশ করুন।

হজরত আবু বকর (রা.) ও হজরত উমর (রা.) এবং জান্নাতুলবাকীসহ সহ সকল সাহাবী, উম্মাহাতুল মুমেনীন, সারা বিশ্বের মুসলমান নর-নারীর জন্য দোয়া করুন। দোয়ায় একথাও বলুন, ওগো আমার প্রেমময় প্রিয় আল্লাহ! এই যিয়ারতই যেন আমার শেষ যিয়ারত না হয়। বারবার যেন তোমার প্রিয় হাবিবের রওজা শরীফ যিয়ারত এবং প্রিয় নবী (সা.) এর দীদার নসিব হয়।

হে আমার পাঠক! আপনার দোয়ায় এ অধমকে শরিক করার আকুল এবং বিনীত আবেদন রইল। আল্লাহ যেনো তার এ গোলামকে ক্ষমা করে দেন। সারা জীবন যেনো নবিজীর গোলামি করে যেতে পারি সে তাওফিক তিনি আমাকে দান করেন। হে আল্লাহ! তোমার যে বান্দা তার দোয়ায় এ অধমকে স্মরণ করবে, নূর নবীজীর ওসিলায় তার সব দোয়া তুমি কবুল করে নিও। তার জীবন সুখ-শান্তিতে ভরপুর করে দিও। আখেরাতের প্রতিটি মঞ্জিলে তুমি তার জামিন ও জিম্মাদার হয়ে যেও। হে আল্লাহ! এমন মর্তবা তাকেও দান করো, যে এ লেখা পড়ে হৃদয়ের গভীর থেকে বলবে ‘আমিন!



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নবীর (সা.)
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ