Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘বন্দুক হাতে তুলে নিতে তৈরি কাশ্মীর’

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম

ভারত শাসিত কাশ্মীরে আজ ৭ দিন ধরে কারফিউ বহাল রয়েছে। গোটা রাজ্য অবরুদ্ধ, স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে জনজীবন। কিন্তু তার মধ্যেই বিবিসির কয়েকজন সাংবাদিক যেতে পেরেছেন শ্রীনগরে, তারা দেখতে পেয়েছেন সেখানকার মানুষের মধ্যে কতটা ক্ষোভ-ক্রোধ জমা হয়েছে। এমনকি তারা হাতে বন্দুক তুলে নিয়ে সশস্ত্র বিক্ষোভের জন্যও প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন অনেকে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের সংবিধান থেকে কাশ্মীর রাজ্যের স্বায়ত্বশাসন দানকারী ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার পর থেকে রাজ্যটি কার্যত অবরুদ্ধ এবং বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে। টেলিফোন-ইন্টারনেট সংযোগ ছিন্ন, রাজনৈতিক নেতাসহ শত শত লোক গহবন্দী বা আটক অবস্থায় আছেন। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের রাজধানী শ্রীনগরের পথে পথে এখন চলছে সেনা টহল ও তল্লাশি, দোকানপাট বন্ধ, জনজীবন স্তব্ধ। তবে তার মধ্যেও সেখান থেকে বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ-সহিংসতার খবর আসছে।

শ্রীনগরে বেশ কয়েকজন কাশ্মীরি বিবিসির প্রতিবেদক গীতা পান্ডেকে বলেন, ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বন্দুক হাতে তুলে নিতে তারা প্রস্তুত। এক যুবক তার শিশুপুত্রকে দেখিয়ে বলেন, ‘এ আমার একমাত্র ছেলে, যদিও এখনো একেবারেই শিশু, কিন্তু ও যেন বড় হয়ে বন্দুক হাতে নিতে পারে তেমনভাবেই ওকে তৈরি করবো।’ সেখানে তাদের একেবারে কাছেই পুলিশ দাঁড়ানো ছিল। কিন্তু তারা যে এসব কথা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে- ব্যাপারটা পাত্তাই দিলেন না যুবকটি, এতই ক্ষেপে আছেন তিনি।

একজন বয়স্ক কাশ্মিরী জানান, তারা দিন কাটাছেন সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ অবস্থায়। তাদের ভাষায় সরকার যা করেছে তা হচ্ছে ‘চরম গুন্ডামি।’ এ সময় আধাসামরিক বাহিনীর সৈন্যরা এসে তাদের সরিয়ে দেবার চেষ্টা করে। কিন্তু এই লোকেরা সরতে রাজী নন। তারা আঙুল তুলে পুলিশের দিকে চিৎকার করতে লাগলেন, ‘তোমরা দিনের বেলা আমাদের আটকে রাখছো, রাতের বেলাও আটকে রাখছো।’ পুলিশ তাদের বলতে লাগলো, ‘কারফিউ জারি আছে, আপনারা এক্ষুণি ঘরের ভেতর ঢুকে যান।’ তারা সাংবাদিকদেরও সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।

কারফিউ জারি থাকলেও শুক্রবার নামাজের জন্য লোকজনকে মসজিদে যাবার সুযোগ করতে দিতে নিরাপত্তা শিথিল করা হয়। এ সময় শ্রীনগরে হাজার হাজার লোক বিক্ষোভে যোগ দেয়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর ছররা গুলি এবং টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে বলে খবর পাওয়া যায়। প্রায় এক সপ্তাহ হলো, রাজ্যের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী এবং একজন এমপি গৃহবন্দী।

বুধবার দিল্লি থেকে বিমানে শ্রীনগর এসে নেমেছেন রিজওয়ান মালিক। তার ৪৮ ঘন্টারও কম সময় আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তিনি জানান, রোববার সরকার ইন্টারনেটসহ সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেবার কয়েক ঘন্টা আগে তিনি তার বাবা-মার সাথে শেষ কথা বলেছিলেন। এরপর যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি আর কারো সাথেই কথা বলতে পারছিলেন না। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন, শ্রীনগর ফিরে যাবেন। তিনি বলছিলেন, তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদে বিশ্বাসী নন, কখনো সৈন্যদের দিকে একটি ঢিলও ছোঁড়েননি। তিনি ভারতের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন, জীবনে উন্নতি করাই ছিল তার লক্ষ্য। কিন্ত এখন যা হচ্ছে তা তিনি মানতে পারছেন না। রিজওয়ান মালিক বলেন, ‘ভারত যদি আমাদের এটা বিশ্বাস করাতে চায় যে, এটা একটা গণতান্ত্রিক দেশ, তাহলে তারা আমাদের বোকা ভাবছে। কাশ্মীরের সাথে বাকি ভারতের সম্পর্ক সব সময়ই অস্বস্তিকর ছিল, কিন্তু এই বিশেষ মর্যাদাই ছিল এ দুয়ের মধ্যে সেতুর মতো। সেটা বাতিল করে আমাদের আত্মপরিচয় কেড়ে নেয়া হয়েছে, কোন কাশ্মীরির কাছেই এটা গ্রহণযোগ্য নয়।’ তিনি বলেন, ‘এই অবরোধ যখন উঠবে, আর বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নামতে পারবে তখন প্রতিটি কাশ্মীরি তাদের সাথে যোগ দেবে। বলা হতো, এখানে সব পরিবারেই এক ভাই যদি বিচ্ছিন্নতাবাদী হয়, তো আরেক ভাই ভারতের মূলধারার পক্ষে। এখন ভারতের সরকার দু’ ভাইকে এক করে দিয়েছে।’

রিজওয়ানের বোন রুখসা রশিদ (২০) কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যের ছাত্রী। তিনি জানান, টিভিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণা শোনার পর তার হাত কাঁপছিল, আর তার মা পাশে বসে কাঁদতে শুরু করেছিলেন। তিনি আরো বলেন, ‘আমার মা বলছিলেন এর চেয়ে মৃত্যুও ভালো। আমি এখন ঘুমের মধ্যে আঁতকে উঠি। আমার দাদা-দাদীরা বাটমালু এলাকায় থাকেন। তারা বলছেন, এটা এখন আফগানিস্তান হয়ে গেছে।’

ভারতের সরকার অবশ্য দেখানোর চেষ্টা করছে যে, কাশ্মীরে সবকিছুই ঠিক আছে। বুধবার টিভি চ্যানেলগুলোতে দেখানো হয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ‘জঙ্গীবাদের উর্বর ক্ষেত্র’ বলে কথিত সোপিয়ান শহরে কয়েকজন লোকের সাথে মধ্যাহ্নভোজ সারছেন। কিন্তু কাশ্মীরিরা বলছেন, এটা একটা স্টান্ট ছাড়া আর কিছুই নয়। ‘লোকে যদি এতই খুশি হবে তাহলে কারফিউ জারি করতে হলো কেন? সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে হলো কেন?’ প্রশ্ন করলেন রিজওয়ান মালিক।
পুলওয়ামার বাসিন্দা আইনজীবী জাহিদ হোসেইন দার বলেন, ‘কাশ্মীর এখন অবরুদ্ধ। কিন্তু যে মুহ‚র্তে এটা উঠে যাবে, তখনই শুরু হবে গোলমাল।’

ভারতের কিছু সংবাদমাধ্যম বলছে, কাশ্মীরে এখন পর্যন্ত বড় কোন বিক্ষোভ হয়নি। যার অর্থ তারা সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে। কিন্তু বিবিসির প্রতিবেদক জানান, যে কাশ্মীর তার চোখে পড়েছে, তা ভেতরে ভেতরে ফুঁসছে। তিনি গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে এই অঞ্চল দেখেছেন, কিন্তু এবার যে ক্ষোভ-ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে তা নজিরবিহীন। প্রতিবেদক জানান, ‘কাশ্মীরের লোকদের ন্যূনতম চাওয়া হচ্ছে, সরকারকে এ আদেশ বাতিল করতে হবে, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হবে। অবশ্য মোদি সরকারকে সিদ্ধান্ত নিয়ে পিছিয়ে আসার পাত্র বলে মনে করা হয় না। কাশ্মীরের লোকেরাও মোদির ‘নতুন যুগের সূচনার’ কথা শুনে পিছু হটতে রাজি নয়।’

শ্রীনগরের একটি হাইস্কুলের ছাত্রী মুসকান লতিফ জানান, সেখানকার অবস্থাটা আসলে ঝড়ের আগেকার শান্ত অবস্থার মতো। ‘সাগর শান্ত, কিন্তু সুনামি আঘাত হানলো বলে’, বলেন তিনি। সূত্র : বিবিসি বাংলা।



 

Show all comments
  • Md Sohrawardy ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১:০৯ এএম says : 0
    সাংবাদিক এবং সংবাদ মাধ্যমেের কাজ সাধারণ নিপিড়ীত মানুষের দূর্দশা তুলে ধরা। এক্ষেত্রে বিবিসি এবং বিবিসির সাংবাদিকগণ খুব ভালো কাজ করছেন। তারা স্যালুট পাওয়ার যোগ্য। অন্যদিকে ভারতের সংবাদ মাধ্যম তাদের সরকারের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। ভারতের সাংবাদিকদের মানবিক গুণাবলি এবং সত্য বলার ক্ষমতাও লোপ পেয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Usaching Chowdhury ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১:১০ এএম says : 0
    কাশ্মীরের জন্য সংবিধানের ৩৭০ এর মতো আটিক্যাল তথা ভূমিগত অধিকারের থেকে বঞ্চিত করা উচিত হয়নি!এতে অকাশ্মীরিদের অবৈধ প্রবেশ বৈধতা পাবে।পাশাপাশি কাশ্মীরি পন্ডিতদের যথাযথ পুর্ণবাসনও সম্ভব হবে না বলে মনে হচ্ছে।এতে প্রকৃত পক্ষে কাশ্মীরিদের নিজস্ব সংস্কৃতি,ঐতিহ্য হুমকির মুখে পড়বে।ভারত সরকার এবং কাশ্মীরিদের ন্যায্য অধিকার বিশেষত ভূমি অধিকার নিশ্চিত হই,সেক্ষেত্রে নজর দেওয়াটা উচিত বলে আমি মনে করি।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Jamil ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১:১৫ এএম says : 0
    কাশ্মিরকে স্বাধীন রাস্ট্রে পরিণত করা এখন সময়ের দাবি
    Total Reply(0) Reply
  • Firdaus Alam ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১:১৫ এএম says : 0
    বর্তমান পরিস্হিতিতে কাশ্মীর সম্পর্কে জানতে হলে কেবলমাত্র আন্তর্জাতিক মিডিয়ার ওপরেই ভরসা করতে হবে৷
    Total Reply(0) Reply
  • Soayeb Mansur ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
    কাশ্মীরী স্বাধীনতা কামী মজলুম মুসলমানদের বিজয় ই কাম্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahi Bin Josim ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১:২৬ এএম says : 0
    আল্লাহ সর্ব শক্তিমান ইনশাআল্লাহ মুসলমানের জয় হবে, কাশ্মীর মুক্তি পাক, ভারত নিপাত যাক,
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Manik ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩২ এএম says : 0
    ইসলামের ইতিহাসে যতগুলো যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে সেগুলোতে কখনোই মুসলিমদের সংখ্যা কাফেরদের চেয়ে বেশি ছিলোনা। তবুও প্রায় সবগুলো যুদ্ধেই মুসলিমরা বিজয়ী হয়ে ইসলামের পতাকা উড়িয়েছিলো শুধুমাত্র ঈমানের শক্তি দিয়ে। আজ সেই ঈমানী শক্তির বড়ই অভাব..!
    Total Reply(0) Reply
  • df madrasah ১১ আগস্ট, ২০১৯, ৮:২০ এএম says : 0
    Allah Kashmir muslimder kallan karun
    Total Reply(0) Reply
  • Yourchoice51 ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১০:১৮ এএম says : 0
    Kashmiris are fighting for liberation. What is UNO doing to support Kashmiris? If UNO could support for liberation of East Timor; why it cannot help Kashmiris get the freedom they are fighting for decades? What a pity......
    Total Reply(0) Reply
  • asif ১২ আগস্ট, ২০১৯, ৩:০৬ পিএম says : 0
    বিবিসি তো গ্রেট ব্রিটেন এর পত্রিকা আর গ্রেট ব্রিটেন তো নিজেই আয়ারল্যান্ড দখল করে বসে আছে , বালুচিস্তান, হংকং এগুলোর কথা কি কখনো এরা বলবে ??? চোরের মায়ের গলা বড়!!!!!!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ