বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
তাওয়াফ অবস্থায় কাবা শরীফের দিকে সীনা করা : তাওয়াফকারী পুরো তাওয়াফ অবস্থায় বাইতুল্লাহকে বাম পাশে রেখে চলবে। শুধু রুকনে ইয়ামানী ছোঁয়ার সময় (যদি ছোঁয়া সম্ভব হয়) যেহেতু উভয় হাত কিংবা ডান হাতে বাইতুল্লাহ স্পর্শ করতে হবে, তাই তখন বাইতুল্লাহর দিকে সীনা ফিরানো যাবে। কিন্তু সীনা বাইতুল্লাহর দিকে করলে ওই স্থান থেকেই আবার বাইতুল্লাহ বাম দিকে রেখে তাওয়াফ শুরু করতে হবে।
তারপর হাজরে আসওয়াদের নিকট গিয়ে আবার সেদিকে ফিরবে। কিন্তু অনেক তাওয়াফকারীকেই এর ব্যতিক্রম করতে দেখা যায়। যেমন : ক. হাজরে আসওয়াদ এবং রুকনে ইয়ামানী ছাড়াও অন্য দুই কোণে বা ফাঁকা পেলেই বাইতুল্লাহর দেয়ালে চুম্বন করে থাকে বা আলিঙ্গন করে থাকে। ফলে তাদের সীনা বাইতুল্লাহর দিকে হয়ে যায়। অথচ তাওয়াফের অল্প অংশও যদি কাবাঘরের দিকে সীনা ফিরিয়ে করা হয় তবে তা শুদ্ধ হবে না। প্রকাশ থাকে যে, তাওয়াফ অবস্থায় হাজরে আসওয়াদ এবং রুকনে ইয়ামানী ব্যতীত অন্য স্থানে বাইতুল্লাহর দিকে সীনা ফিরানো নিষিদ্ধ। খ. দলবদ্ধভাবে চলতে গিয়ে বা দলের অন্যদের খবর নিতে গিয়ে কিংবা ভিড়ের কারণে বাইতুল্লাহর দিকে সীনা ঘুরে যায় এবং ওইভাবেই কিছু দূর চলতে থাকে এতে ঐ অংশের তাওয়াফ সহিহ হয় না। তাই কখনো এমন ঘটে গেলে যেখান থেকে ঘুরে গেছে সেখান থেকে যথানিয়মে পুনরায় তাওয়াফ করতে হবে। - সহিহ মুসলিম ১/৪০০।
নফল তাওয়াফের পর দুই রাকাত নামাজ না পড়া বা বিলম্বে পড়া : অনেককে দেখা যায় একের পর এক নফল তাওয়াফ করতেই থাকে। একটি তওয়াফ শেষ হলে তাওয়াফের দুই রাকাত নামাজ পড়ে না। তাদের এ আমল দেখে মনে হয়, শুধু ফরজ ও ওয়াজিব তাওয়াফের পরই এ দুই রাকাত নামাজ পড়তে হয়। এ ধারণা ভুল। ফরজ ও ওয়াজিব তাওয়াফের মতো নফল তাওয়াফের পরও দুই রাকাত নামাজ পড়া ওয়াজিব এবং বিনা ওজরে একাধিক তাওয়াফের নামাজকে একত্রে পড়া মাকরূহ। - মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ১৩৭০৩।
তাওয়াফ-পরবর্তী দুই রাকাত পড়ার স্থান নিয়ে বিভ্রান্তি : এই দুই রাকাত নামাজ মাকামে ইবরাহীমীকে সামনে রেখে পড়া সুন্নত। কিন্তু অনেককে দেখা যায়, মাকামে ইবরাহীমীকে পেছনে রেখে মাকামে ইবরাহীমী ও বাইতুল্লাহর মাঝের ফাঁকা জায়গায় পড়ে। এক তো এই স্থানে নামাজ পড়লে তওয়াফকারীদের চলাচলে খুব সঙ্কীর্ণতা সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয়ত এ দুই রাকাত নামাজ যে মাকামে ইবরাহীমীর পেছনে পড়া সুন্নত, সে সুন্নতটিও আদায় হয় না। - সুনানে নাসাঈ ২/৩১।
মাকামে ইবরাহীমীর পেছনে তাওয়াফের নামাজ পড়াকে জরুরি মনে করা : অনেকে এই স্থানেই নামাজ আদায় করাকে জরুরি মনে করে বা কার্যত এই জায়গাকেই নামাজের একমাত্র জায়গা মনে করে। ফলে তাদেরকে জান বাজি রেখে সেখানে নামাজ আদায় করতে দেখা যায়। কেউ কেউ দু-তিনজনের সহযোগিতা ও বেষ্টনীতে নামাজে দাঁড়ায়। ফলে হাজার হাজার তাওয়াফকারী ভীষণ চাপের মুখে পড়ে। এগুলো হলো মূর্খতা ও ইবাদতের নামে বাড়াবাড়ি। এতে সওয়াব হওয়া তো দূরের কথা, উল্টো আরো গুনাহ হয়।
তাওয়াফের পর দুই রাকাত নামাজ পড়া ওয়াজিব। কিন্তু মাকামে ইবরাহীমী সামনে রেখে পড়া সুন্নত। এ সুন্নত যেমন মাকামে ইবরাহীমীর নিকট পড়লে আদায় হয়, তেমনি মাকামে ইবরাহীমীকে সামনে রেখে দূরে দাঁড়িয়ে পড়লেও আদায় হয়। অবশ্য ওই বরাবর ভিড় থাকলে মসজিদে হারামের যেকোনো স্থানে পড়া যেতে পারে। এমনকি মসজিদে হারামের বাইরে হেরেমের এলাকায় পড়লেও কোনো অসুবিধা নেই। সুতরাং ওই স্থানে পড়ার সুন্নত আদায় করতে গিয়ে অন্যকে কষ্ট দিয়ে হারামে লিপ্ত হওয়া বোকামি। - সুনানে নাসাঈ ২/৩১।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।