Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

র‌্যাব কাণ্ডে হতবাক শাখারিয়া বাসি ঃ লিমন হোসেনর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ?

বগুড়ায় সদ্য নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানের ভাইকে কোরবানির হাট থেকে সন্ধ্যায় ধরে রাতে অস্ত্র উদ্ধার !

বগুড়া সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০১৯, ৭:৪৮ পিএম

বগুড়া সদরের শাখারিয়া ইউনিয়নের সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান প্রভাষক কামরুল হুদা উজ্জ্বলের ছোট ভাই প্রকৌশলী ( ডিপ) নাজমুল হাসান শামীমকে শুক্রবার সন্ধ্যায় বগুড়া সদরের জয়বাংলা হাটে শত শত মানুষের উপস্থিতিতে একটি প্রাইভেট কারে তুলে নিয়ে যায়। এসময় সে তার বড় ভাই সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান কামরুল হুদা উজ্জল সহ কজন পরিচিত জনের সাথে নিজেদের কোরবানির জন্য গরু কিনে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এসময় হঠাৎ র‌্যাবের কয়েকজন সদস্য তাঁর হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে ঢাকা মেট্র খ- ১২-২০২৪ নম্বরের একটি প্রাইভেট কারের দিকে টেনে হেঁচড়ে নেওয়ার চেষ্টাকালে চেয়ারম্যান উজ্জল ও হাটের লোকজন বাধা দিলে র‌্যাব সদস্যরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে বলে শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব অফিসে নিতে হবে। র‌্যাব সদস্যরা এসময় শামীমের দেহ তল্লাশী করে কিছু টাকা ও মোবাইল ফোন বের করে সেটা তার বড় ভাইয়ের হাতে বুঝিয়ে দিয়ে শামীমকে উঠিয়ে নিয়ে যায় ।

এই ঘটনায় চেয়ারম্যান উজ্জল সহ সবাই হতভম্ব হয়ে পড়ে। এসময় উজ্জলের পক্ষ থেকে খবর পেয়ে তার আত্মীয় স্বজন শুভাকাংখীরা র‌্যাবের সাথে ফোনে যোগায়োগ করলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে হ্যাঁ না কিছুই বলা হয়নি। পরে উজ্জল ও তার পরিচিতজন ও আত্মীয় স্বজন যে গাড়িতে শামীমকে উঠিয়ে নেওয়া হয় ওই গাড়িটির নম্বর প্লেট সহ স্টিল ছবি ও একটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে পোষ্ট দেয়। দ্রুতই তা’ ভাইরাল ও হয়।

এরপর শুক্রবার রাতে সাংবাদিকদের কাছে শামীমকে আটকের বিষয়টি স্বীকার করে র‌্যাব কর্তৃপক্ষ । কি কারণে আটক সে সম্পর্কে বলা হয় খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। পরে জানানো হবে ।

এদিকে এর আগেও র‌্যাব একই কায়দায় শামীমকে উঠিয়ে নিয়ে মেরে পায়ের হাড় ভেঙ্গে এবং একটি কানের পর্দা ফাঠিয়ে দেয় এবং আশংকাজনক অবস্থায় অস্ত্র উদ্ধার দেখিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে । এবারও ওই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বা ক্রসফায়ারে মেরে ফেলা হতে পারে এমন আশংকায় শামীমের অন্তস্বত্তা স্ত্র্রী সহ পরিবারের সদস্যরা সারারাত কান্না কাটি করে । সকালে শামীমের পরিবারের মহিলা সদস্যরা র‌্যাব ১২ এর ক্যাম্প অফিসে যেযে কান্নাকাটি করলে র‌্যাব সদস্যরা তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে ও থানায় খোঁজ নিতে বলে ।

থানায় এসে স্বজনরা জানতে পারে রাতে শামীমের দেখানো জায়গা থেকে একটি শর্ট গান ও ১টি রিভলবার উদ্ধার দেখিয়ে অস্ত্র মামলা দিয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে ।

এপ্রসঙ্গে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম বদিউজ্জামান বলেছেন, বিধি মোতাবেক মামলাটির তদন্তভার এসআই মঞ্জুর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি শামীমকে কোর্টের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠোনো হয়েছে।

তবে র‌্যাবের এই অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাটি সম্পর্কে শামীমের বড় ভাই শাখারিয়া ইউনিয়নের সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান কামরুল হুদা উজ্জল নিজের ফেসবুক পোষ্ট ও মিডিয়ার কাছে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাটিকে সাজানো বলে সরাসরি দাবি করেছেন । এজন্য তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বদ্বি একই ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান শফিককে দায়ী করেছেন । একই সাথে শামীমের আটক ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাটি র‌্যাবের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিশেষ তদন্ত দাবি করেছেন ।

এদিকে ২৫ তারিখের ইউপি উপনির্বাচনে বিপুল ভোটে উজ্জলের জয়ের পর এবং ঈদ উপলক্ষে ২হাজার ৩শত ভিজিএফ কার্ডের চাল বিতরণের আগের দিনে নতুন চেয়ারম্যানের ছোট ভাইকে র‌্যাব ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে ইউনিয়ন জুড়ে তোলপাড় চলছে । কারণ যে ২হাজার ৩শত ভিজিএফ কার্ড প্রস্তত করা হয়েছে তার প্রায় পুরোটাই ভুয়া দাবি করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি আপত্তি পত্র দিয়েছিল কামরুল হুদা উজ্জল। শনিবার এই কার্ড বিতরণ নির্বিঘœ করতেই শামীমকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানো হল বলে মনে করছে শাখারিয়া ই্উনিয়ন বাসি। শাখারিয়া ইউপির উলিপুর গ্রামের বাবলু মিয়া (৬৫) , চালিতা বাড়ির নুরু মুহুরির ভাষ্যমতে কোরবানি ঈদের মাত্র ২দিন আগে তাদের ভোটে নির্বাচিত নতুন চেয়ারম্যানের ভাইয়ের এই গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় তারা মর্মাহত ও হতবাক ।
একই এলাকার ইব্রাহীমের মতে এটা যেন র‌্যাবের নির্যাতনে ঝালকাঠির লিমন হোসেনের পা’ হারানোর ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হল বগুড়ায় !

এদিকে এই ঘটনায় র‌্যাব-১২ বগুড়া সুত্রে জানান হয়েছে , ১০ আগস্ট গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১২, সিপিএসসি বগুড়া ক্যাম্পের আভিযানিক দল বগুড়া সদর থানার ২য় বাইপাস জোড়গাছা জয়বাংলা হাটে অভিযান পরিচালনা করে সন্ত্রাসী নাজমুল হাসান শামীমকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে জোড়গাছা জয়বাংলা হাটের পাশের কলাগাছের ঝোপের ভিতর থেকে ১ টি বিদেশী পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন, ২ রাউন্ড গুলি, ১টি একনলা বন্দুক এবং ৩ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করে। শামীম এর বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় শিশু অপহরণ, অস্ত্র এবং বিস্ফোরক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেফতার শামীম বগুড়া সদর উপজেলার উলিপুর নয়াপাড়ার নজরুল ইসলামের ছেলে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ