Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভ্রাম্যমাণ আদালতকে উপেক্ষা করার অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম


বাগমারায় যত্রতত্র পুকুর খননে পানিপ্রবাহ বন্ধ ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা
আলতাফ হোসেন বাগমারা থেকে : রাজশাহীর বাগমারায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা খাল, দাড়ি ও বিলে ফ্রি স্টাইলে যত্রতত্র পুকুর খনন করছে। সরকারী নির্দেশ উপেক্ষা করে ফসলী জমিতে পুকুর খননে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে পড়েছে। মাছ চাষের নামে পানিপ্রবাহের নালায় পুকুর করায় ব্রিজ, কালভাট ও স্লুইস গেট অকেজো হয়ে পড়ছে। পানিবদ্ধতায় নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এলাকার শত শত বিঘা ফসলি জমি পানিবদ্ধতার আশঙ্কায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বর্ষায় ফসলি জমির আবাদ নষ্ট হলেও তাদের দুরবস্থায় কেউ এগিযে আসছে না বলে কৃষকরা অভিযোগ করেছেন। প্রভাবশালীদের হাত থেকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ও ফসলি জমিতে অপরিকল্পিত পুকুর খনন বন্ধের জন্য ভুক্তভোগী কৃষকরা স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের একটি লিখিত আবেদন করেছেন।
অভিযোগ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের নন্দনপুর, বালানগর, সগুনা, দেউলিয়া, তক্তপাড়া, গ্রামে ফসলি জমি লিজের মাধ্যমে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল প্রশাসনকে ম্যানেজ করে যত্রতত্র পুকুর খনন করছে। এতে করে এলাকার হাজার হাজার ফসলি জমি দু’বাবে ক্ষতি হচ্ছে। প্রবাবশালীরা পানি প্রবাহিত দাড়ি ও কারের মধ্যে পুকুর করাতে পানি নামতে পাছে না অন্য দিকে উপরের জমির পানি পুকুরের পাড়ের কারণে পানিবদ্ধতা হচ্ছে। অভিযোগকারীরা জানান, যুগ যুগ ধরে গণিপুর ইউনিয়নের পুড়াকয়া, মাধাইমুড়ি, আক্কেলপুর বাসুপাড়া ইউনিয়নের নন্দনপুর, বালানগর, সগুনা, গোপালপুরসহ পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন নিয়ে ১৫/১৬টি গ্রামের নীচু এলাকার পানি বালানগর-দেউলিয়া হয়ে এই পথে গোপারপুর হয়ে রানী নদীতে পড়ে। পানি নিষ্কাশনের কোন বিকল্প পথ না থাকায় বর্ষাকালে এলাকার পানি নদীতে যাবার একটি মাত্র পথ। বর্তমানে বিল খালে অপরিকল্পিত নতুন নতুন পুকুর খননের ধারাবাহিকতায় এলাকার কিছু প্রভাবশালী সুবিধাভোগীরা ফসলের এই নীচু জমিতে কিছু পরিমান খুড়ে খননকৃত পুকুরের চারিধারে মাঠি দিযে বাঁধ দিয়ে গভীর নলকূপ নিয়ে পানি জমা করে দেদারছে মাছ চাষ করছে। কৃষকরা জানান, এর আগের খননে গত আষাঢ় মাস অধিক বৃষ্টিতে নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর ভরে যায়। টানা বর্ষনে খাল-বিল পুকুর পরিপূর্ণ হয়ে পানি নামার অব্যবস্থাপনায় বৃষ্টিতে নিম্ন অঞ্চলের ধান ও পাট, পানবরজ, মরিচ, শাক-শবজির ক্ষেত তলিয়ে কৃষককের ব্যাপক ক্ষতি হয়। উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের মোহম্মাদপুর গ্রামের আবেদ আলী, খলিলুর রহমান, জয়েন উদ্দিন, মোহম্মাদ আলী, হাতেম আলী, শাহাদত হোসেন, বালানগর গ্রামের এমদাদুল হক, আবদুল ওয়াহেদ, কৃষক সিদ্দিকুর রহমান, কাজেম আলী, অছির উদ্দিন সগুনা গ্রামের বাবুল হোসেন,নূর মোহম্মাদসহ অর্ধশত কৃষক জানান, গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া দাঁড়িতে অন্তত ১৫টি পুকুর খনন করা হয়েছে। এতে করে পানিপ্রবাহের জায়গা বন্ধ হয়ে আশেপাশের জমিতে গত বর্ষায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তারা। একই সাথে খরা মওসুমে উচ্চু অসমতলের কারণে জমিতে পানি পানি সেচের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। মোহম্মাদপুর গ্রামের সাজেদুর রহমান, মোজাম্মেল হক, গনিপুর ইউনিয়নের মাধাইমুড়ি গ্রামের কৃষক রমজান আলী, আইউব আলীসহ অনেকে জানান, অতিরিক্ত বৃষ্টিতে পানি নামতে না পেরে তার জমির ধান, পানবরজ, শবজি ক্ষেত গত বর্ষা মওসুমে ডুবে গেছে। একইভাবে বালানগরের পান চাষি হাতেম আলী, আব্দুর হাকিম, বয়েন উদ্দিন জানান, অপরিকল্পিতভাবে খালে পুকুর নির্মাণ করায় পানি নামে না। এতে গত বছর এলাকার ৫ কোটি টাকার ফসলের হানি হয়েছে। বর্তমানে ফসলি জমিতে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে মোহম্মাদপুর, সগুনা, দ্বীপনগর, মাধাইমুড়ি, বালানগরসহ উপজেলার শত শত বিঘা বেশীর ভাগ জমি অকেজ হয়ে পড়ে থাকছে। মোহম্মাদপুর গ্রামের কৃষক আবেদ আলী, খলিল উদ্দিন, সগুনা গ্রামের নুর মোহম্মাদ, বালানগর গ্রামের ওয়াহেদ আলী, আবদুল কুদ্দুসসহ শতাধিক কৃষক দাবি করেন স্থানীয় চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান, বালানগর গ্রামের পুকুর ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন, ভবানীগঞ্জ এলাকার আজাহার আলী, নন্দনপুর গ্রামের বাবুল, সাঁইপাড়া গ্রামের আব্দুল জব্বারসহ ৭/৮ জন পুকুরের ব্যবসার নামে পানি প্রবাহিত দাড়ি (খালে) বাঁধ দিয়ে পুকুর সৃষ্টি করে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে মাছচাষ শুরু করেছে। মাছ চাষের নামে মাথা ভাঙ্গা কালভার্ট, বালানগরের দয়ের কালভাট, মোহম্মাদপুর সগুনাসহ অন্তত ৭/৮ ব্রীজ কালভার্ট পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। এতে করে যেমন কমছে ফসলি জমির পরিমান তেমনি বাড়ছে ভোগান্তীর শিকার। এই ধারা বাহিকতায় স্থানীয় সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরিকুল ইসলাম উপজেলার মাধাভাঙ্গা নামক স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতে আব্দুল জব্বারের পুকুর খনন বন্ধ করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা ও খনন কাজ বন্ধ এং খননকৃত জায়গা ভরাট করে নেন। এর পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বদলি হলে এ সুযোগে আবারো যথা স্থানে প্রভাব খাটিয়ে পুনরায় পুকুর খনন অব্যাহ রেখেছেন। এব্যপারে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন আকতারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কৃষককের একটি অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানান। তিনি বিষয়টি ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট পুকুর ব্যবসায়ীদের অবহিত করবেন। প্রয়োজনে মোবাইল কোট স্থাপন করবেন বলে জানান। পুকুর খননের ব্যাপারে আগে তিনি জানেন না এমনকি কয়েক দিন তার ছুটির সুযোগে প্রভাবশালীরা নতুন করে সুযোগ নিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। এছাড়া বিষয়টি ব্যবস্থা নিতে উপজেলা চেয়ারম্যান ও কমিশনারসহ (ভূমি) সংশ্লিষ্ট বিভাগের কমিটিকে নিয়ে সত্বর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।




 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভ্রাম্যমাণ আদালতকে উপেক্ষা করার অভিযোগ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ