পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্্ নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক লা শারীকা লাক’। অর্থাৎ আমি উপস্থিত হয়েছি তোমার সমীপে হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত হয়েছি। আমি উপস্থিত হয়েছি তোমার আহ্বানে সাড়া দিতে, তোমার কোন শরীক নেই এ ঘোষণা জারী করতেই আমি হাজির হয়েছি। প্রকৃত পক্ষে সকল প্রশংসা ও নিয়ামত তোমার জন্যই নির্ধারিত। আর সকল মালিকানা ও শাসন ক্ষমতা তোমাতেই নিবদ্ধ আছে। তোমার কোন শরীক নেই।’-এই তালবিয়া পাঠের মধ্য দিয়ে আজ আরাফাত ময়দানের আকাশ-বাতাস মুখর করে তুলবেন হজযাত্রীরা। কারণ আজ আরাফা দিবস তথা আজ পবিত্র হজ। ইতোমধ্যে বিশ্বের প্রায় দু’শ দেশের ১৮ লক্ষাধিক হজযাত্রীসহ ২৫ লাখের বেশি মুসলিম চলতি বছর হজ পালন করছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম। এর মধ্যে রয়েছে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিতসহ বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ১ লাখ ২৭ হাজার ১৫২ জন।
ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুছি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযানে থাকার কারণে অতিরিক্ত নিরাপত্তার মধ্যে এবারের হজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পানি, পয়ঃসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় কোন ত্রুটি রাখেনি সউদী কর্তৃপক্ষ। যানজট নিরসনে নেয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। জাবালে রহমতসহ ৩১ বর্গকিলোমিটারের আরাফাতে সূর্যাস্ত অবধি অবস্থান করবেন মুসল্লিরা। এখানে অবস্থান করাই হচ্ছে হজ। মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আল-হাজ্জু আল-‘আরাফাহ’। অর্থাৎ আরাফাতে অবস্থানই হজ। এখানে অবস্থানকালেই আল্লাহ পাক যাদের হজ কবুল করবেন তাদের গুনাহমুক্ত মাসুম করে দেন।
আরাফতে অবস্থানের জন্য আজ শনিবার সূর্যোদয়ের পর আগমন করা সুন্নত। কিন্তু হজযাত্রীদের আধিক্যের কারণে গতকাল শুক্রবার রাতেই মিনা থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হয়েছে তাদের অধিকাংশকে। অনেকে সুন্নাতের পরিপূর্ণ অনুসরণে আজ সকালে পায়ে হেঁটে অথবা ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় প্রাইভেট কারে করে আরাফতে যাবেন। সবার শরীর সাদা কাপড়ে ঢাকা থাকবে। এদিন ‘লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক’ ধ্বনিতে মুখরিত হবে আরাফাতের ময়দান।
এখানে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাবার পর আরাফাত সীমান্তে অবস্থিত মসজিদে নামিরাহ থেকে আযান ধ্বনিত হবে। এখানে এক আজানে দুই ইকামাতে সমবেত হাজীরা কসর করে যোহর ও আসর সলাত আদায় করবেন। এর আগে ইমাম হজ্জের খুৎবা দেবেন। সলাত শেষে হাজীরা নিজ নিজ তাঁবুর আনাচে-কানাচে দাঁড়িয়ে বা বসে গোপনে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে মোনাজাত করবেন। এসময় তারা নিজেদের সব গুনাহের কথা স্মরণ করে আল্লাহর কাছে আকুতি জানিয়ে ক্ষমা চাইবেন। এরূপ চলতে থাকবে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
উল্লেখ্য, আরাফাত ময়দানে ৮ যিলহজ রাত থেকেই বিভিন্ন কোম্পানী হাজীদের জন্য নানা উপঢৌকন নিয়ে হাজির হয়। হাজীদের মাঝে বিলিয়ে দেয় খাঞ্চা ভরে ভরে। খাবারের মধ্যে অনেক ঠান্ডা জিনিস যেমন, জুস, পানি, লাবান ইত্যাদি থাকে। থাকে মাল্টা, আপেল, কমলা, আঙ্গুর। হাজী সাহেবদের উচিত এসময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্রহণ না করা। যাতে অন্যরা নিতে পারেন এবং অপচয় না হয়। সন্ধ্যার পর মুযদালিফায় যাবার সময় খাবারের উচ্ছিষ্টে হাজীদের চলাচলে কষ্ট হয়ে যায়।
আজ আরাফাতের ময়দান থেকে মুসল্লিরা মাগরিবের নামাজ আদায় না করেই রওনা দেবেন মুযদালিফার দিকে। সেখানে পৌঁছে মাগরিব ও এশা একসঙ্গে আদায় করবেন। মুযদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করবেন তারা। এখানে ‘মাশআরিল হারাম’ নামে একটি মসজিদ রয়েছে। কুরআন মাজীদে এখানে আল্লাহর যিকরা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হাজীরা পরবর্তী তিনদিন মিনার জামারাতে নিক্ষেপের জন্য পাথর সংগ্রহ করবেন এখান থেকেই। সউদী কর্তৃপক্ষ হাজীদের সংগ্রহের জন্য প্রচুর কঙ্কর বিছিয়ে রাখেন মুযদালিফার প্রায় প্রতিটি এলাকায়।
আগামীকাল রোববার সকালে মুযদালিফায় ফজরের নামাজ শেষে হাজীরা আবার ফিরে আসবেন মিনায়। হাজীদের অনেকেই সেখান থেকে সরাসরি জামারাতে চলে যাবেন কঙ্কর নিক্ষেপ করতে। আবার অনেকে তাদের সাথে থাকা মাল-সামান রাখতে ফিরে যাবেন তাঁবুতে। ১০ যিলহজে অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে হাদী জবাই করা। অর্থাৎ আমরা যাকে কোরবানী বলে থাকি। এদিন বড় জামারাতে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ ও পশু কোরবানির পর পুরুষরা মাথা মুন্ডন করে ইহরাম ত্যাগ করবেন। এরপর এদিনই অথবা পরদিন পবিত্র কাবা শরিফে ফরজ তাওয়াফ করে ফিরবেন মিনায়। ১১ ও ১২ যিলহজও হাজীরা সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে যাবার পর তিনটি জামারাতে ৭টি করে ২১টি কঙ্কর মারবেন। ১২ যিলহজ মাগরিবের পূর্বেই মিনা ত্যাগ করতে পারলে আর মিনায় ফিরতে হবে না। তবে মিনায় থাকাবস্থায় সূর্য অস্ত গেলে হাজী সাহেবদের ১৩ যিলহজ সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাবার পর ৩টি জামারাতে পাথর নিক্ষেপের পর মিনা ত্যাগ করতে পারবেন। এর মাধ্যমে হজের পূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।
হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষে যারা আগে মদিনায় যাননি তারা বিদায়ী তাওয়াফ সেরে মদিনায় যাবেন। সেখানে হাজীরা সাধারণত ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। পরে শুরু হবে হাজী সাহেবদের দেশে ফেরার পালা। আল্লাহ তা‘আলা সবার হজ কবুল করুন এবং নিষ্পাপ করে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসুন। আমীন।
মক্কায় বাংলাদেশ হজ মিশনের হেল্প ডেস্ক থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, মক্কায় বাংলাদেশ হজ অফিসের কনফারেন্স রুমে গত বৃহস্পতিবার রাতে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব এডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহর সভাপতিত্বে হজ প্রতিনিধি দলের এক বিষেশ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় হজ অফিস মক্কার কাউন্সিলর মুহাম্মাদ মাকসুদুর রহমান বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আগত হজযাত্রী এবং হজের বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বর্ণনা করেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন হজ প্রতিনিধি দলের সদস্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ও রত্মা আহ্মেদ, ধর্ম সচিব মো. আনিছুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক-৩ মো. আজিজুর রহমান। এছাড়াও বিশেষ আমন্ত্রীত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে আব্দুল মোমেন, সাবেক মুখ্যসচিব মো. আবদুল করিম, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী এবং সউদী আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল এফ এম বোরহান উদ্দিন। সভাপতি উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান এবং হজ কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
এদিকে শেষ খবর অনুযায় বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হজযাত্রীদের মধ্যে সউদী আরবে সর্বমোট ইন্তেকাল করেছেন ৪২ জন হজযাত্রী। এর মধ্যে পুরুষ ৩৬ ও মহিলা ৬ জন। তাদের মধ্যে মক্কায় ৩৫, মদিনায় ৬ ও জেদ্দায় ১ জন ইন্তেকাল করেন। সাউদিয়া ও বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ৩৬৫টি ফ্লাইটে সউদী আরবে নেয়া শুরু হয় ৪ জুলাই এবং শেষ হয় গত ৫ আগস্ট। হজ শেষে আগামী ১৭ আগস্ট থেকে বাংলাদেশি হাজীরা বাংলাদেশে ফেরা শুরু করবেন এবং আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর সবার ফেরা শেষ হবে ইন শা আল্লাহ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।