মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
এই উত্তেজনার কিছুটা ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায়। মানবাধিকার কর্মী ও পন্ডিতরা পশ্চিমের এই অংশে ল্যাটিনোদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অতীত সন্ধান করতে গিয়ে এক শতাব্দী আগে উন্মত্ত অ্যাংলোদের দ্বারা মেক্সিকানদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বা গণপিটুনিতে হত্যার কথা পেয়েছেন। এ বিতর্কে আরো অতীতে গিয়ে টেক্সাসে আগ্রাসন বিষয়ে ঐতিহাসিকরা দেখতে পেয়েছেন যে এটার জন্য আসলে দায়ী হচ্ছে অ্যাংলো দাস-ব্যবসায়ীরা যারা ১৯ শতকে এ অংশে আগমন করে। তখনো এটা মেক্সিকোর অংশ ছিল। তারপর ১৮৩৬ সালে তা বিচ্ছিন্ন হয়। টেক্সাসের প্রথম সংবিধানে সাদা শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়।
সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ঘটনাগুলো শুধু বছরের পর বছর ব্যাপী আইনি মামলারই সূচনা করেনি। উপরন্তু তা টেক্সাস হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস-এর ফ্লোরে সাদা ও হিস্পানিকদের মধ্যে দৈহিক সংঘর্ষের ঘটনারও জন্ম দিয়েছে। টেক্সাসে সাদা রিপাবলিকান কর্মকর্তারা প্রকাশ্যেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে তাদের ভাষায় টেক্সাস সীমান্তে অভিবাসীদের ছড়িয়ে দেয়া রোগের আগ্রাসন চলছে।
এল পাসোর অধিবাসীরা এখন দেখছেন যে বিতর্কের সবচেয়ে ঘৃণ্য অংশটা সহিংসতাকে তাদের দরজায় নিয়ে এসেছে। আদ্রিয়ানা রুইজ আরেকটি ওয়ালমার্ট স্টোর থেকে ফুলের তোড়া এনে নিহতদের স্মরণে অর্পণ করেন। তিনি কান্নাজড়িত গলায় বলেন, এ ঘটনায় আমার বুকটা ভেঙে গেছে।
৫০ বছর বয়স্কা রুইজ এল পাসো নিয়ে যে জাতীয় বিতর্ক শুরু হয়েছে, তাতে বেদনাহত। মধ্য আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যেভাবে অভিবাসীরা ছুটে আসছিল তার ফলে এল পাসো হয়ে উঠেছিল গ্রাউন্ড জিরো। এই শহরেই তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। এখানে গত শনিবার যে ঘৃণ্য ঘটনা সংঘটিত হল তা এখানকার মানুষের স্বভাব চরিত্রের সম্পূর্ণ বিপরীত। এদিন তিনি তার মা, নানী ও খালাসহ মেক্সিকোর সিউদাদ জুয়ারেজে কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, কারা নিহত হয়েছে সেটা ব্যাপার নয়। আমরা যেন আমাদের স্বজনকেই হারিয়েছি। গুলির ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এল পাসোর বাইরে যে বিষবাষ্প জমে উঠেছিল, তা অবশেষে এ শহরে পথ করে নিয়েছে। তিনি বলেন, এ শহর সম্পর্কে যে সব মন্তব্য করা হয়েছে, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যা বলেছেন তা তার জানার সাথে মেলে না।
লারি স্কট (৪০) গুলিবর্ষণের কয়েক ঘণ্টা আগে খুব সকাল বেলায় ওয়ালমার্টে ছিলেন। সম্প্রতি তিনি তার বাম হাতে দুটি নতুন ট্যাট্টু করিয়েছিলেন। তিনি সেনাবাহিনীতে কাজ করেন। কাছেই ফোর্ট ব্লিস-এ মোতায়েন ছিলেন তিনি। গত রোববার ওয়ালমার্টে গিয়ে তার ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায়।
এল পাসো তার নিজের শহর নয়। তিনি ডালাসের মানুষ। কিন্তু এল পাসোর সাথে তার গভীর সংযোগ ছিল। তিনি বলেন, এটা কোনো বড় শহর নয়। কিন্তু এটা আমাদের বাড়ি।
ইন্টারস্টেট ১০-এ এল পাসো শহরের পূর্ব দিকে ওয়ালমার্ট অবস্থিত। এ শহরে আছে কয়েকটি হোটেল, চেইন রেস্টুরেন্ট ও একটি মল। আমেরিকা জুড়ে থাকা আরো শত শত ওয়ালমার্টের মতই এটি। এ স্টোরে বন্দুক বিক্রি হয় না, কিন্তু গুলি বিক্রি হয়।
গত রোববার পুলিশ কর্মকর্তারা ওয়ালমার্ট বন্ধ করে রাখেন। তারা ভিতর থেকে হত্যাকান্ডের নানা আলামত সংগ্রহ করছিলেন। সেখানকার পার্কিং লটটি বহু গাড়িতে পূর্ণ ছিল। কিছু গাড়ি ছিল যেগুলো গুলির দিনেও সেখানে ছিল।
পাশ দিয়ে গাড়ি চলাচল অব্যাহত ছিল। কেউ কেউ ক্যামেরায় ছবি তুলছিলেন। এক ব্যক্তি গাড়ি থেকে নেমে এলেন। এক মিনিট দাঁড়িয়ে রইলেন, তারপর চলে গেলেন।
স্টোরের পিছনে খানিকটা জায়গা গার্ডরেইল দিয়ে ঘিরে শ্রদ্ধা নিবেদনের জায়গা করা হয়েছে। কয়েকটি পোস্টার সেখানে দেখা যাচ্ছিল। একটিতে লেখা ছিল-‘এল পাসো একটি পরিবার।’ আরো ছিল নিহত শিশুদের জন্য নিবেদিত টেডি বিয়ার। প্রার্থনার মোমবাতি এবং ভার্জিন অব গুয়াডালিউপের ছবি।
জেসিকা উইন্ডহ্যাম (৩৫) তার দুই বছরের মেয়েকে ফুল দিতে সাহায্য করেন। তার আরো দুটি ছেলেও সাথে এসেছিল নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। তিনি বলেন, আমি ছেলেমেয়েদের এখানে এনেছি এটা শেখাতে যে আমাদের এ কাজগুলো করতে হবে। কারণ, এ বিশে^ তাদের কারো বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা নেই। (শেষ)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।