Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টাঙ্গাইলের ‘গান্ধিনা জান্নাতুল ফেরদাউস মাদ্রাসা’ প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালনা পরিষদ দ্বন্দ্বে বন্ধ হওয়ার উপক্রম

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০১৯, ১২:১৮ পিএম

মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পরিষদের দ্বদ্বে বন্ধ হতে চলেছে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার ‘গান্ধিনা জান্নাতুল ফেরদাউস মাদ্রাসা’। মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মো. ফেরদৌস আলম ফিরোজ মাদ্রাসার জমি তার স্ত্রী’র নামে দাবি করে মাদ্রাসায় তালা ঝুলিয়ে দিলে এই দ্বদ্বের সূত্রপাত হয়। ফলে প্রায় আড়াইশ’ শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। মাদ্রাসাটি বন্ধ থাকায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। মাদ্রাসা খুলে দেওয়ার দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছে কমিটির সভাপতি ও এলাকাবাসী।

মামলার নথি, এলাকাবাসী ও মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ব্যবসায়ী মো. ফেরদৌস আলম ফিরোজ ‘গান্ধিনা জান্নাতুল ফেরদাউস’ নামে একটি হাফিজিয়া ও কওমি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিন বছর পর্যন্ত মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা মো. ফেরদৌস আলম ফিরোজ সভাপতির দায়িত্ব পালন করলেও তারপর থেকে অদ্যবদি তারই বড় ভাই মো. আনোয়ার হোসেন বাদল সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

সম্প্রতি ফেরদৌস আলম মাদ্রাসার ২৬ শতাংশ জায়গা তার স্ত্রী মোছাঃ পারভিন ফিরোজের নামে ক্রয় করা হয়েছে বলে দাবি করে জায়গাটি ছেড়ে দিতে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জায়গাটি ছেড়ে না দেওয়ায় উভয় পক্ষের মধ্যে দ্বদ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়। ফলশ্রুতিতে মো. আন্তাজ আলীকে বাদি করে গত ৩০ জুন টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে সাত জনের নামে চাঁদাবাজী মামলা দেওয়া হয়। আদালত ১০ জুলাইয়ের মধ্যে পুলিশকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। পুলিশ গত ৮ জুলাই ছয়জনকে অভিযুক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়।

অপরদিকে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. ওসমান গনি বাদি হয়ে গত ২৩ জুলাই মো. ফেরদৌস আলম ফিরোজসহ ৮ জনকে অভিযুক্ত করে চুরি, ছিনতাই, হামলার অভিযোগ এনে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে মামলা দায়ের করে। আদালত আগামী ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পিবিআইকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করে।

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসীর দাবি মাদ্রাসার ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার কথা বিবেচনা করে তারা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ফেরদৌস আলমের সাথে আপোষ-রফার চেষ্টা করে। কিন্তু ফেরদৌস আলম নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকে এবং মাদ্রাসায় লাগানো তালা খুলে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে মাদ্রাসাটি দ্রæত খুলে দিতে মাদ্রাসার সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন বাদল এলাকাবাসীর পক্ষে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেন।
মাদ্রাসার সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন বাদল বলেন, দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি সমাজের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হয়ে আসছে। এই মাদ্রাসায় সরকারি
অনুদানে উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন জনের সাহায্যে অর্ধকোটি টাকার বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এখন একজন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানটিকে তার নিজের বলে দাবি করলেই তার হয়ে যায় না। প্রতিষ্ঠাতা জমি দেওয়া ছাড়া আর কোন কাজ করেননি। মাদ্রাসাটি চালু রাখার জন্য জমিটি ওয়াক্ফ করে দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। না দিলে সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জমিটি কিনে নিয়ে হলেও ধর্মীয় এই প্রতিষ্ঠানটি চালু রাখা হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠাতা ফেরদৌস আলমের মুঠোফোনে একাধিক নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করে বন্ধ পাওয়া যায়।

নাগবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান সিদ্দিকী মিল্টন বলেন, আমি চেষ্টা করেছি উভয় পক্ষকে এক করে বিষয়টির সুরাহা করতে। কিন্তু তারা কঠোর অবস্থান নেওয়ায় সম্ভব হয়নি। তবে ঈদের পরে আবারও চেষ্টা করবো যাতে সমস্যার সমাধান করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা করা যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্ধ

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ