পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঈদ উপলক্ষে আজ থেকে ঘরমুখী মানুষের যাত্রা শুরু হচ্ছে। তবে এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি সড়ক-মহাসড়ক। এখনো চলছে মেরামতের কাজ। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশ ছিল ঈদের এক সপ্তাহ আগে সড়ক-মহাসড়ক পুরোপুরি প্রস্তুত রাখতে হবে।
অন্যদিকে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথ কোনোমতে ট্রেন চলাচলের উপযোগি করা হলেও গাইবান্ধা-বাদিয়াখালি সেকশনে ডুবে যাওয়া রেলপথ এখনো মেরামত সম্পন্ন হয়নি। এতে ওই সেকশনে ঢাকার সাথে সরাসরি দুটো ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ কারণে এবার ভোগান্তির শঙ্কা নিয়েই ঘরমুখী মানুষদের যাত্রা শুরু করতে হবে। পথিমধ্যে কোথায় কতক্ষণ যানজটে আটকে থাকতে হয় অথবা ৯টার ট্রেন কয়টায় ছাড়বে তা কেউ জানে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফেনী ও সীতাকুন্ডুর কিছু অংশে ভাঙাচোরা রয়েছে। বড় বড় গর্তগুলো মেরামত করা হয়েছে। যদিও বৃষ্টি ও গাড়ির চাপে আবারও সেখানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। চার লেনের এই মহাসড়কে তিনটি নতুন সেতু চালু হওয়ার পর গত ঈদযাত্রায় কোনো ঝামেলা হয়নি। এবারই নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে এবার ভোগান্তির শঙ্কা আছে।
জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের খানাখন্দগুলো এখনও মেরামত হয়নি। মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। ২০০৫ সালের পর এই মহাসড়কে বড় ধরনের মেরামত হয়নি। ফলে স্থানে স্থানে খানাখন্দ আছে। কোথাও ১০০ মিটার, কোথাও কোথাও এক কিলোমিটার বা তার কিছু বেশি অংশজুড়ে বেহাল। মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহবাজপুরে তিতাস নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর কাজ শেষ হয়নি। সেতুর সংযোগ সড়ক এখনো পিচের ঢালাই করা হয়নি। কোথাও মাটি, কোথাও খোয়া-বালুর পথ। ফলে যান চলাচল করছে বেশ ধীরগতিতে। এর বাইরে এই মহাসড়কের ভুলতা-গাউসিয়া অংশে গত কয়েকদিন ধরেই যানজট লেগেই আছে। এ অংশ ঈদে ঘরমুখি যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলবে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী সেতু থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশ এখনো বেহল। এই অংশে বিআরটি ও সড়কের পাশে ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। টঙ্গীর চেরাগ আলী এলাকা থেকে দুর্ভোগের শুরু। ড্রেনের পানি উপচে পড়ার পাশাপাশি সড়কেও খানাখন্দও আছে। এখানে যানবাহন চলাচল করছে একটি লেন ধরে। চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত একই অবস্থা। এ ছাড়া এবার গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকায় মহাসড়ক ঘেঁষে কোরবানির পশুর হাট বসছে। এতে দুর্ভোগের শঙ্কা থাকছেই।
সওজের কর্মকর্তারা জানান, মহাসড়কের যেসব অংশ বেশি বেহাল, সেখানকার বেশির ভাগই কোনো না কোনো প্রকল্পের অধীনে কাজ চলছে। এ কারণে জোড়াতালির মেরামত দিয়ে চালাতে হচ্ছে। প্রকল্প শেষ হলে হয়তো এই অবস্থা থাকবে না। সওজের দাবি, ঈদের আগে গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে সব মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে গত কয়েক দিনে বেহাল সড়কের যে সব স্থান মেরামত করা হয়েছে তার বেশিরভাগই ইট, বালু ও খোয়া ঢেলে উপর দিয়ে রোলার চালানো হয়েছে। কিছু স্থানে পিচ ঢালা হয়েছে। মহাসড়কে চলাচলকারী দুরপাল্লার বাসের চালকরা জানান, ঈদযাত্রায় যানবাহনের চাপ বেড়ে গেলে এবং বৃষ্টি হলে এসব মেরামত টিকবে না। আবারও একই অবস্থার সৃষ্টি হবে। এতে দুর্ঘটনা ভোগান্তি দুটোরই শঙ্কা রয়েছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে নলকা সেতুতে গত ঈদুল ফিতরেও যানজট হয়েছে। গত সোমবার সেতুর এক্সপানশন জয়েন্ট মেরামত করা হয়েছে। যানবাহন চলাচল করছে একাংশ দিয়ে। এতে সেতুর দুই পারেই যানজট ছিল। মহাসড়কের এলেঙ্গা অংশে রাস্তার বেহাল অবস্থা মেরামত করা হয়েছে। তবে চার লেনের কাজ শেষ না হওয়ায় এ অংশে যানজট লেগেই থাকে। ঈদ যাত্রায়ও এখানে যানজটের ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত অসংখ্য গর্তের কিছু অংশ মেরামত করা হয়েছে। তবে এখনো স্থানে স্থানে গর্ত আছেই। এই অংশের ঘুরখা থেকে রয়াহাটা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার পথে ইট বিছানো। ফলে যানবাহন চলে ধীরগতিতে। ঈদযাত্রায় এই অংশে যানজট ও ভোগান্তির শঙ্কা আছে।
ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বগুড়া অংশের ৬৫ কিলোমিটার অংশে ব্যাপক খানাখন্দ ছিল। সওজের দাবি, গত কয়েক দিনে মেরামতে কিছু স্থান চলাচলের উপযোগী হয়েছে। তবে এখনো প্রায় ১৭ কিলোমিটার পথে খানাখন্দ আছে। বিশেষ করে বগুড়ার গোকুল বাজার থেকে মহাস্থানগড় করতোয়া সেতু পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার অংশে ইট বিছিয়ে মেরামত করা হয়েছে। সড়কের এক লেন বন্ধ করে চলছে সংস্কারকাজ। ঈদযাত্রা শুরু হওয়ার আগে থেকেই এ অংশে যানজট লেগেই আছে। যা আজ থেকে ভয়াবহ রুপ ধারন করতে পারে বলে অনেকেরই আশঙ্কা। মহাসড়কের গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের ধাপেরহাট বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকার পিচ উঠে গেছে। আছে খানাখন্দও। এখানেও ভোগান্তি বাড়াতে পারে দীর্ঘ যানজট।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে এবার ভোগান্তি বাড়াতে পারে পাটুরিয়া ঘাট। ঘাটে ফেরি পারাপারে দেরি হওয়ায় গাড়ির দীর্ঘ সারি কয়েক কিলোমিটার ছাড়য়ে যায়। এবার সে আশঙ্কা তুলনামূলক বেশি। দৌলতদিয়া ঘাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পথ এখনো বেহাল আছে। কোথাও কোথাও পাথর ও খোয়া বেরিয়ে এসেছে। আছে ছোটবড় গর্তও।
যশোরের পালবাড়ি থেকে অভয়নগরের রাজঘাট পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার মহাসড়ক পুননির্মাণ চলছে। এর মধ্যে ১৪ কিলোমিটার পিচের ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে। তবে বাকিটা এখনো ইট-বালু-পাথরের সড়কই আছে। বৃষ্টি হলেই দুর্ভোগ বাড়বে।
এদিকে, এবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সেকশন। এর মধ্যে ঈদের আগে দুটো সেকশনে বন্ধ হওয়া ট্রেন চালু করা সম্ভব নাও হতে পারে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সেকশনগুলো হলো বোনারপাড়া-বাদিয়াখালী, বাদিয়াখালী-গাইবান্ধা, বালাবাড়ি-রমনা, হাসিমপুর-দোহাজারী ও মেলান্দহ দেওয়ানগঞ্জ। ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথগুলো ঈদের আগেই সংস্কার করে ফেলা সম্ভব হবে বলে দাবি করছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাঁচটি সেকশনের মধ্যে বোনারপাড়া-বাদিয়াখালি, বাদিয়াখালি-গাইবান্ধা সেকশনের পানিতে ডুবে যাওয়া রেলপথ আজকালের মধ্যেই মেরামত করা সম্ভব হবে।
রেলভবন সূত্র জানায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ও বন্ধ হয়ে যাওয়া রেলপথ গত ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে সংস্কার করার কথা ছিল। সে অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথগুলো কোনোমতে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে সংস্কার করা হয়েছে। জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের অনেক জায়গায় রেললাইনে বন্যার পানি ছিল। সেখানে বালির বস্তা ফেলে পানির গতিপথ বদলে লাইনগুলোকে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলোয় ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১০-১৫ কিলোমিটারের বেশি তোলা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে অন্তত ১১টি আন্তঃনগর ট্রেন ঈদের সময় শিডিউল বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। যেসব ট্রেন নিয়ে শিডিউল বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে সেগুলো হলো ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটের তিস্তা এক্সপ্রেস, ঢাকা-তারাকান্দি রুটের অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস, ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটের এগারসিন্দুর প্রভাতী ও এগারসিন্দুর গোধূলি এক্সপ্রেস, ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটের ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস, ঢাকা-লালমনিরহাট রুটের লালমনি এক্সপ্রেস, ঢাকা-রংপুর রুটের রংপুর এক্সপ্রেস, ঢাকা-মোহনগঞ্জ রুটের হাওড় এক্সপ্রেস, ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটের কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস এবং চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটের বিজয় এক্সপ্রেস।
এদিকে বোনারপাড়া-বাদিয়াখালি এবং বাদিয়াখালি-গাইবান্ধা সেকশনের রেললাইন মেরামতের কাজ চলছে। বাদিয়াখালির একটা অংশে রেললাইনের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে রেললাইন ঝুলে ছিল। বন্যার পারি সরার পর সেখানে প্রথমে মাটি ফেলে ভরাট করা হয়। এরপর সেখানে রেললাইন স্থাপন করার কাজ শুরু হয়। গতকাল পর্যন্ত সেখানে রেললাইন সংস্কারের কাজ চলছিল। আজকালের মধ্যেই এ অংশে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। বন্যার পর থেকে বগুড়ার সাথে গাইবান্ধার রেল সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। ঢাকা থেকে লালমনিরহাটগামী লালমনি এক্সপ্রেস এবং ঢাকা থেকে রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন দুটিও গাইবান্ধা দিয় না চলে কাউনিয়া-রংপুর-পার্বতীপুর-সান্তাহার হয়ে চলাচল করছে।
এ প্রসঙ্গে রেল ভবনের একজন কর্মকর্তা বলেন, বন্যায় সারা দেশে রেলওয়ের চারটি সেকশনের সাতটি স্পট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথগুলো সংস্কার করে ট্রেন চলাচল সচল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। ঈদের কথা মাথায় রেখেই দ্রুত সংস্কারের কাজ চলছে। ঈদের সময় ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলোতে ট্রেন সর্বোচ্চ ১০-১৫ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে। এ কারণে কয়েকটি ট্রেন ঈদের সময় শিডিউল বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।