পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পুঁজিবাজারের অস্থিরতা, বিনিয়োগের পরিবেশের অভাব, আর ব্যাংকে মেয়াদি হিসাবে সুদের হার কম থাকায় গত কয়েক বছর ধরেই সঞ্চয়পত্র সাধারণের কাছে ‘বিনিয়োগের নিরাপদ ক্ষেত্র’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের উপকারভোগীদের অধিকাংশই হলেন-পেনশনভোগী, বৃদ্ধ, দুস্থ ও অসহায় নারী।
স্বল্প আয়ের মানুষের সামাজিক সুরক্ষার অন্যতম নাম সঞ্চয়পত্র। কিন্তু বাজেটে সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশের উপর উৎসে কর দ্বিগুন করা হয়। অর্থাৎ আগে উৎসে কর (চূড়ান্ত দায়) দিতে হতো ৫ শতাংশ, এখন দিতে হবে ১০ শতাংশ। গত ১ জুলাই থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) লভ্যাংশের উপর উৎসে কর আগের ৫ শতাংশসহ মোট ১০ শতাংশ গণহারে কেটে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। এরপর ৪ জুলাই বলা হয়, পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের বিপরীতে কোনো উৎসে কর নেওয়া হবে না। তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সবসময়ই সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগকারীদের পক্ষে ছিলেন। তাই ধারণা করা হচ্ছিল সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশের উপর উৎসে কর আগের মতোই থাকছে। কিন্তু গত ২৯ জুলাই অর্থমন্ত্রী এনবিআর চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে উৎসে কর ৫ শতাংশ কাটা হবে। ৫ লাখের উপরের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ উৎসে কর দিতে হবে। নতুন করহার চলতি বছরের ১ জুলাই থেকেই কার্যকর হবে।
দু’দিন পর আবার এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া জানান, সঞ্চয়পত্রে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফার ওপর যাঁরা ইতোমধ্যে ১০ শতাংশ উৎসে কর দিয়ে ফেলেছেন, বাড়তি টাকা তাঁরা সমন্বয় করতে পারবেন। কিন্তু সঞ্চয়পত্রের মুনাফার উৎসে কর চূড়ান্ত দায় হিসেবে বিবেচিত হয়। একবার সঞ্চয়পত্রের কর কেটে নেওয়া হলে আর সমন্বয় করা যায় না। ফলে এটা নিয়ে আবার ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়। সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের জন্য সরকার একেকবার একেক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কিন্তু জটিলতা আর গ্রাহকদের পিছু ছাড়ছে না। আর তাই গ্রাহকদের ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছে।
এদিকে যে প্রশ্নের সমাধান এখনো হয়নি, সেটি হচ্ছে ১ জুলাইয়ের আগে পর্যন্ত ৫ শতাংশ উৎসে কর থাকার সময় যে গ্রাহকেরা মুনাফার টাকা প্রাপ্য হয়েছেন কিন্তু বিদেশে থাকাসহ নানা কারণে ওই টাকা তুলতে পারেননি, তাঁদের কাছ থেকে ১০ শতাংশ কর কাটা হচ্ছে। গ্রাহকেরা বলছেন, এটা বেআইনি। এতে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহক বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষ, পেনশনার ও গৃহিণীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। নিয়মিত আয় উপার্জন নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেছেন তারা। সকলের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে।
একাধিক বিনিয়োগকারীর মতে, পুঁজিবাজারের অস্থিরতা আর ব্যাংকে মেয়াদি হিসাবে সুদের হার কম থাকায় গত কয়েক বছর ধরেই ‘বিনিয়োগের নিরাপদ ক্ষেত্র’ হিসেবে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন। একই সঙ্গে ঝুঁকি এড়াতেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন। সূত্র মতে, নিরুপায় আমানতকারীরা নিরাপত্তার মাধ্যম হিসেবে ঝুঁকছেন সঞ্চয়পত্রের দিকে।
সূত্র মতে, সঞ্চয়পত্রে ৫ লাখ টাকার উপরে বিনিয়োগ করে গ্রাহক যদি মাসে ৫ হাজার টাকা মুনাফা পেয়ে থাকেন, গত ১ জুলাই থেকে তিনি ৫ হাজার থেকে ৫০০ টাকা কম পাবেন। ব্যাংকের কাছ থেকে এ টাকা বুঝে নেবে এনবিআর।
সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর নতুন আরোপিত ৫ শতাংশ উৎসে কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন খাদিজা বেগম নামে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারী এক গৃহিণী। তিনি বলেন, বিনিয়োগের নিরাপদ খাত হিসেবে বিবেচিত সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগকারীদের মাঝে নতুন করে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। গ্রাহকরা জানান, ব্যাংকের প্রতি আস্থা নেই। ফলে সঞ্চয়পত্রই ছিল বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম। কিন্তু বর্তমান সামগ্রিক আর্থিক খাতে চরম অস্থিরতা চলছে। ব্যাংক খাতে নগদ টাকার সংকট। গ্রাহকদের জমানো আমানত ফেরত দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এই অবস্থায় আমাদের সঞ্চয়পত্রে করা বিনিয়োগ নিয়েও দু:চিন্তা হচ্ছে।
আগের চেয়ে কম মুনাফা পাওয়ায় নাখোশ অনেকেই। এদেরই একজন নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা উম্মে হানি সূচনা বলেন, সঞ্চয়পত্রে আমার বিনিয়োগ ছিল ৭ লাখ টাকা। এতোদিন ১ লাখ টাকায় ৯১২ টাকা অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার এসএমএস আসতো। এখন এসেছে ৮৬৪ টাকা। হঠাৎ করেই এমন করে মাসের আয় কমবে ভাবতে পারিনি। তিনি বলেন, আমার শাশুড়ির নামেও ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ ছিল। তারও একই অবস্থা। ফলে সংসারের ও ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়ার খরচ কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি।
আরেক গ্রাহক জসিম উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি এখন কর্ম করতে পারি না। বৃদ্ধ বয়সে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার উপর নির্ভরশীল ছিল পরিবার। তারপরও যদি বাড়তি উৎসে করের বোঝা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়- তাহলে সেটা হবে চরম অমানবিক।
সরকারি অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হানিফ মিয়া বলেন, আমার কথা বাদ দেন। অনেক বিধ্বা আছে এই মুনাফার উপর ভরসা করে টিকে আছে। এছাড়া আমাদের মতো সামান্য মুনাফা থেকে ১০ শতাংশ উৎসে কর কেটে নেয়া হলে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তাই সরকারের উচিৎ আমাদের দিকে সুনজর দেয়া।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতীয় সঞ্চয়পত্র দেশের সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলেরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সমাজে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলদের কিছু সুবিধা জোগাতেই এ ধরনের বিনিয়োগে উচ্চ সুদ পরিশোধ করে যাচ্ছে সরকার। পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র হচ্ছে নিরাপদ বিনিয়োগ। যাদের অল্প কিছু টাকা আছে। ব্যবসা-বাণিজ্য করার মত সামর্থ্য নাই। আবার সামর্থ্য থাকলেও ঝুঁকি সামাল দেওয়ার মত সাহস নাই। বয়স হয়ে গেছে। বিধবা বা স্বামী অসুস্থ্য। সংসারে কর্মক্ষম কোনো ব্যক্তি নাই। তাদের জন্য একমাত্র ভরসা হচ্ছে জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরোর এই স্কিম। এছাড়া আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা বলয় খুবই দুর্বল। সামাজিক নিরাপত্তাবলয় তৈরি হলে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হারও কিছু হ্রাস করা যাবে। তা না করে এতে হাত দিলে হাজার হাজার পরিবারের দুর্ভোগ বাড়বে এবং সামাজিক নিরাপত্তা আরও দুর্বল হবে। সঞ্চয়পত্র সাধারণের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা হিসেবেও কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা। আর তাই বিশেষজ্ঞদের বলছেন, সাধারণ মানুষ থেকে সকলেরই আশা ছিল স্বল্প আয়ের মানুষের সামাজিক সুরক্ষায় সঞ্চয়পত্রের মুনাফার উপর নতুন আরোপিত উৎসে কর বাদ দেওয়া হবে। এছাড়াও সাধারণ উপকারভোগীদের সুরক্ষার জন্যই সঞ্চয়পত্রের মতো প্রকল্প চালু রাখা হয়েছে। এ কারণে উৎসে কর দ্বিগুণ না করে বরং এই প্রকল্পে ব্যবসায়ী ও বিত্তশালীদের আসার পথ বন্ধ করতে হবে। উৎসে কর দ্বিগুণ করার ঘোষণাটি কার্যকর হওয়ায় সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেছেন, পুরনো সঞ্চয়পত্রে নতুন উৎসে কর হার ধার্য করা অনৈতিক। কারণ পুরনো সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হলেও সেই অর্থের কোনো সুবিধা গ্রাহক ভোগ করেননি। বরং সেই অর্থ সরকারের কাছে ছিল। ফলে, গ্রাহককে অতিরিক্ত সময়ের মুনাফা সুবিধা না দিয়ে দ্বিগুণ উৎসে কর ধার্য করা সম্পূর্ণ অনৈতিক।
অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠনের (ইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, পুঁজিবাজারসহ আর্থিক খাত নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তাই সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশে নতুন করে উৎসে কর অমানবিক। এটা জনস্বার্থে বাদ দেওয়া উচিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।