Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ০৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

দক্ষিণাঞ্চলে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত

হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, ঈদের পরে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০১৯, ৩:২৭ পিএম

দক্ষিণাঞ্চলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমবনতি অব্যাহত থাকার মধ্যেই আসন্ন ঈদ উল আজহার পরে এ অঞ্চলে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞগন। রাজধানী ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা নৌযান ছাড়াও বাসগুলোতে করে এডিস মশা দক্ষিণাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। পাশাপাশি আসন্ন ঈদ উল আজহার আগে যে অন্তত ৫ লাখ মানুষ ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে ফিরবে, তাদের অনেকেই ডেংগুর জীবানু নিয়ে এ অঞ্চলে এসে রোগের বিস্তার ঘটাতে পারে বলে আশংকা চিকিৎসকদের। আর সে ধরনের পরিস্থিতি সামাল দেয়ার ক্ষমতা দক্ষিনাঞ্চলের চিকিৎসা প্রশাসনের নেই বলেও মনে করছেন ওয়াকিবাহাল মহল।
বর্তমানে প্রতিদিনই বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা উপজেলা হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এসব রোগী নিয়ে রিতিমত হীমশীম খাচ্ছে চিকিৎসা প্রশাসন। এখনো আক্রান্তদের ৯৫ভাগ রোগীই ঢাকা থেকে আসার পর দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলাগুলোতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে নিকট অতীত ঢাকা যাননি এমন বেশ কিছু রোগীরও সন্ধান মিলছে বিভিন্ন হাসপাতালে। ডেংগু সনাক্তে ‘এনএস-ওয়ান’ কিট সংকটের মধ্যে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাত্র ৫শ কিট পৌছেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় পণ্যাগার থেকে ‘আর কোন কিট সরবরহ সম্ভব নয়’ জানিয়ে তা তালিকাভূক্ত কোম্পানী থেকে সংগ্রহ করতেও বলা হয়েছে। তবে সরকার নির্ধারিত দরে এধরনের কিট সরবারহ করতে অসম্মতি জানিয়েছে ঐসব কোম্পানীগুলো।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত দক্ষিনাঞ্চলের ৬টি জেলা উপজেলা হাসপাতালগুলোতে আরো ১২৪ রোগী ডেংগু জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন আরো ৭১রোগী। এ হাসপাতালটি সহ দক্ষিণাঞ্চলের হাসপাতালে ডেংগু জ্বর নিয়ে রোগীর আগমন ও ভর্তি ক্রমশ বাড়ছে। শুধুমাত্র মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা মঙ্গলবার সকালে আগের ২৪ঘন্টার তুলনায় দ্বিগুনেরও বেশী বেড়েছে। গত সোমবার সকাল পর্যন্ত ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৩। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত এ হাসপাতঅলটিতে ১৬৪ডেংগু রোগী চিকিৎসাধীন ছিল।
তবে এসময়ে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলা উপজেলার হাসপাতালগুলোতে নতুনকরে আরো ১২৪জন ভর্তি হলেও চিকিৎসাধীন ছিল ৩১০জন। এনিয়ে গত ১জুলাই থেকে দক্ষিণাঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে মোট ডেংগু রোগী ভর্তির সংখ্যা ৫৬৫ বলে জানান হয়েছে বিভাগীয় পরিচালক-স্বাস্থ্য’র দপ্তর থেকে। গত জানুয়ারী থেকে এ রাগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা প্রায় ৭শ বলে জানা গেছে। তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে গত জুলাই থেকে ।
শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এপর্যন্ত ৩৭৭ রোগী ভর্তি হলেও দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত এ হাসপাতালটিতে ডেংগু রোগীদের চিকিৎসা চলছে অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ এবং অমানবিক অবস্থায়। হাসপাতালটির মেডিসিন ওয়ার্ডের মেরামত ও পূণর্বশন কাজ চলছে গত কয়েক মাস ধরে। ফলে হাসপাতাল ভবনের দুটি ব্লকের মাঝের খোলা করিডোরে ডেংগু জ্বর আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা চলছে। যেখানে কোন ফ্যান ও শৌচাগার পর্যন্ত নেই। আবার করিডোরের কিনারার দিকে খোলা যায়গায় বৃষ্টির পানি সহ রাতের বেলা ঠন্ডায় রোগীদের কষ্ট বেড়ে যাচ্ছে। ফলে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা নিউমোনিয়া সহ ঠান্ডাজনিত যেকোন ধরনের কঠিন রোগে আক্রান্ত হবারও আশংকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন চিকিৎসক। তবে এ ব্যাপারে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি এক সপ্তাহের মধ্যে একটি মানসম্মতস্থানে ডেংগু ওয়ার্ডটি স্থানন্তর করতে’। এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসার পরে ২১৩জন সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরলেও চিকিৎসাধীন আছেন ১৬৪। তবে এ সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। হাসপাতালটিতে ভর্তিকৃত বেশীরভাগ রোগীর জন্যই কোন মশারীর ব্যাবস্থা করতে পারেননি কতৃপক্ষ।
বরিশাল সহ দক্ষিনাঞ্চলের জেলাগুলোতে এপর্যন্ত ডেংগু আক্রান্ত হয়ে ৪জনের মৃত্যু ঘটেছে। যার মধ্যে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই দু জন ছাড়াও বরগুনা সদর হাসপাতালে এক জনের মৃত্যু ঘটেছে। এছাড়া গৌরনদীর একটি ক্লিনিকে রক্ত পরিক্ষা করে বের হবার সময় এক মহিলার মৃত্যু ঘটে। এরা সকালেই ঢাকা থেকে আগত।
শেবাচিম হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনামূল্যে না পাবার অভিযোগ রোগীদের। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ হাসপাতাল থেকে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল ও ওমিপ্রাজল ঔষধ বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসাধীন রোগীদের গ্লুকোজ স্যালাইনও বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।
বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মোঃ মনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বরিশালের ৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সহ সদর হাসপাতালে এপর্যন্ত ৪৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। বরিশাল সদর হাসপাতাল এবং ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য মাত্র ১২০টি এনএস-ওয়ান কিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে। যা বন্টন করে দেয়া হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কিটসগুলো শেষ হয়নি।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রবিউল ইসলাম, নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে প্রতিদিন সকালে এবং বিকালে ৩০টি টিম মশা নিধনে ঔষধ স্প্রে করছে জানালেও বাস্তবতার সাথে তার ফাড়াক অনেক। নগরীর সদর রোড ও আসেপাশের বিশেষ কিছু এলাকার বাইরে মশক নিধনে তেমন কোন কার্যক্রম চোখে পড়ছে না বলে নগরবাশীর অভিযোগ। এছাড়া মশার প্রজনন প্রতিরোধে নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডের ড্রেন, খাল, ঝোপ-জঙ্গল পরিস্কার করার কথাও জানান ডাঃ রবিউল। তার মতে, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম অব্যহত রাখতে ১২০ জন কর্মী প্রতিদিন ওয়ার্ডগুলোতে ঘুরে ঝোপ-জঙ্গল পরিস্কার করছে। পাশাপাশি ড্রেন, খাল পরিস্কারের জন্য নিয়োজিত আছে ৮০ জন কর্মী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডেঙ্গু

২৭ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ