Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শরিয়তপুরে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনরোধে ব্যাপক কার্যক্রম অব্যাহত

ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ৭৭ কোটি টাকা

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৪ আগস্ট, ২০১৯, ২:০৮ পিএম

পদ্মায় স্মরনকালের ভয়াবহ ভাঙন থেকে শরিয়তপুরের নড়িয়া ও জাজিরার বিশাল জনপদ রক্ষায় ১হাজার ৭৭ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ ভাঙন রোধ প্রকল্পটি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে এখনো নতুন করে কোন ভাঙন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। ইতোমধ্যে ভাঙন কবলিত ৮.৯ কিলোমিটার এলাকায় ৪০ লাখ ১০ হাজার জিও ব্যাগ ছাড়াও বিভিন্ন সাইজের ৩২ লাখ ৪৭ হাজার সিসি ব্লক ফেলার কাজ চলছে। একইসাথে দেশের সর্ববৃহৎ, ৩৪ ইঞ্চি ডায়ার ড্রেজার দিয়ে পলি অপসারনের মাধ্যমে পদ্মার গতিপথ পরিবর্তন করে ভাঙন রোধে কাজ করছে খুলনা শিপইয়ার্ড। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে চূক্তির আলোকে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী’র অধিভূক্ত খুলনা শিপইয়ার্ড নড়িয়া-জাজিরা ভাঙন রোধ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ২০২১-এর ৩০ এপ্রিলের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নকশা ও তত্ত্বাবধানে শরিয়তপুরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধ কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করার কথা জানিয়েছে খুলনা শিপইয়ার্ড কতৃপক্ষ। তবে সম্প্রতিক প্রবল শ্রোত-এর সাথে পদ্মা দুকুল ছাপিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ব্লক তৈরীর সহ ড্রেজিং কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তবে চরম প্রতিকুলতার মধ্যেও এলক্ষ্যে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে পদ্মার তীরে।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশ ‘ডিপার্টমেন্টাল প্রকিউরমেন্ট মেথড-ডিপিএম’এর ভিত্তিতে শরিয়তপুরের নড়িয়া-সুরেশ্বর এলাকার ভাঙন রোধে গত বছর গত ২৯ অক্টোবর নৌ বাহিনীর অধিভূক্ত খুলনা শিপইয়ার্ডের সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। গত ৮ ডিসেম্বর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব শরিয়তপুরের ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে জিওব্যাগ ফেলার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাঙন প্রতিরোধ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রী একাধীকবার শরিয়তপুরের ভাঙন কবলিত এলাকায় প্রতিরোধ কার্যক্রম সরেজমিনে প্রত্যক্ষ্য করে একাধীক নির্দেশনাও প্রদান করেছেন। পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় পুরো প্রকল্পটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন সহ সার্বক্ষনিক পর্যালোচনা করছে।
গতবছর বর্ষা মৌশুমে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে শরিয়তপুরের নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার ঠাকুর বাজার, বাঁশতলা, কুন্ডেরচর সংলগ্ন প্রায় ৯ কিলোমিটার এলাকার হাজার হাজার বসতবাড়ী ছাড়াও হাসপাতাল সহ বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে যায়। অথচ এ ভয়াবহ ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রস্তাবিত ১হাজার ৯৭ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে গতবছর জানুয়ারীর প্রথমভাগে জতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক’এর অনুমোদন লাভ করে। কিন্তু বিগত বর্ষা মৌসুমের আগে ভাঙন রোধে ন্যূনতম কোন কার্যক্রম গ্রহণ করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে বিগত বর্ষার শেষভাগে এসে প্রমত্তা পদ্মা ফুসে উঠে শরিয়তপুরের নড়িয়া ও জাজিরার বিশাল এলাকাকে গ্রাস করে।
এরপরেই পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কিছুটা বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহন করে এবং প্রকল্পÑপ্রস্তাবনাটি মন্ত্রী পরিষদের ক্রয় সংক্রান্ত কমিটিতে পাঠানো হয়। একনেক-এর অনুমোদনের সাড়ে নয় মাস পরে গত ১৯ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ক্রয় কমিটির অনুমোদন লাভ করে। এরও একমাস ১০ দিন পরে খুলনা শিপইয়ার্ডের সাথে চুক্তি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পাদ্মার ভাঙন রোধ প্রকল্পের আওতায় জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক দিয়ে স্রোত থেকে ভাঙন রোধ সহ নদী তীর রক্ষা এবং একই উদ্দেশ্যে আরো পৌনে ১০ কিলোমিটার এলাকায় ড্রেজিং করে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
গত ৩০ জুলাই পর্যন্ত ভাঙন কবলিত এলাকায় ৪০লাখ জিও ব্যাগের মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ ফেলার কাজ শেষ করেছে শিপইয়ার্ড নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান। এ লক্ষে ভাঙন কবলিত এলাকায় ২০টি বার্জ ও ২২টি বোট কাজ করছে। জিও ব্যাগ ফেলার অগ্রগতি প্রায় ৭৪%। এছাড়াও ৩২ লাখ ৪৭ হাজার সিসি ব্লকের মধ্যে ইতোমধ্যে সোয়া লাখ ব্লক তৈরী সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মার অব্যাহত শ্রোত সহ পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সিসি ব্লক তৈরী কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ভাঙন রোধে সমুদয় জিও ব্যাগ ফেলার কাজটি সম্পন্ন করার পাশাপাশি পানি সরে যাবার সাথেই সিসি ব্লক তৈরীর কাজেও যথেষ্ঠ গতি আসবে বলে আশা করছেন কতৃপক্ষ।
পাশাপাশি প্রকল্পের আওতায় পৌনে ১০ কিলোমিটার এলাকায় ড্রেজিং করে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের লক্ষে ৩৪ইঞ্চি ডায়ার একটি ড্রেজার ছাড়াও মাঝারী সাইজের আরো ৮টি ড্রেজার ভাঙন কবলিত এলাকার বিপরিতে অবস্থান করছে। ঘন্টায় প্রায় ৫Ñ৭ নিটক্যাল মাইল বেগে পদ্মার শ্রোতে ড্রেজিং কাজ অব্যাহত রাখা দুরুহ হয়ে পড়েছে। ফলে এপর্যন্ত ৭ লাখ ঘন মিটার পলি অপসারন করা সম্ভব হয়েছে। প্রকল্প প্রস্তাবনায় পদ্মার গতিপথ পরিবর্তনে ৩ কোটি ৩৩ লাখ ঘন মিটার পলি অপসারনের কথা বলা হলেও প্রীওয়ার্ক সার্ভে অনুযায়ী ১ কোটি ৫৪ লাখ ঘন মিটার ড্রেজিং করার হিসেব করা হয়েছে। গত ২৯ মার্চ পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল(অবঃ) জাহিদ ফারুক শামিম এ ড্রেজিং কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পদ্মার শ্রোত হ্রাস সহ পানি বিপদ সীমার নিচে নামার সাথেই ব্যাপকভাবে ড্রেজিং শুরুর কথা জানিয়েছেন খুলনা শিপইয়ার্ডের জিএমÑডিএন্ডপি ক্যাপ্টেন শহিদুল্লাহ আল ফারুক-বিএন। আগামী মার্চের মধ্যেই প্রিওয়র্ক সার্ভে অনুযায়ী ড্রেজিং-এর সিংহভাগ কাজ সম্পন্ন হবে বলে কতৃপক্ষ আশাবাদী ।
২০২১-এর ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শরিয়তপুরের ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পটির বাস্তবায়নের লক্ষে ২০২০-এর জুনের মধ্যে ২৩ লাখ ২৭ হাজার ও ২০২১-এর এপ্রিলের মধ্যে ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ব্লক ফেলার কাজ শেষ করতে হবে। সে লক্ষে সব প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন শিপইয়ার্ড কতৃপক্ষ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ