বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
গত নিবন্ধে আমরা হজ বিষয়ক তিনটি ভুল নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আজ আরও পাঁচটি ভুল নিয়ে আলোচনা করতে চেষ্টা করব।
সেলাইবিহীন কাপড় বা চপ্পলের জন্য ইহরাম বিলম্বে বাঁধা : কেউ কেউ ইহরামের কাপড় না পরে বিমানে উঠে যায়। অথবা মদিনা থেকে গাড়িতে উঠে পড়ে। এরপর যখন গাড়ি বা বিমানের মধ্যে পরিধানের কাপড় বদলিয়ে ইহরামের কাপড় পরা কষ্টকর হয় কিংবা কাপড় লাগেজে থেকে যায়। তখন তারা সেলাইবিহীন কাপড় পরতে না পারার কারণে ইহরাম বিলম্বিত করতে থাকে। এমনকি ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রম করে ফেলে। ফলে দম ওয়াজিব হয়ে যায়। অথচ মীকাত অতিক্রমের আগে সেলাইযুক্ত কাপড়ের অবস্থায়ই যদি ইহরাম বেঁধে নিত এবং গাড়ি বা বিমান থেকে অবতরণের পরেই ইহরামের কাপড় পরে নিত তবে তার অন্যায়টা দম ওয়াজিব হওয়ার মতো বড় হতো না। ইহরাম অবস্থায় এ কয়েক ঘণ্টা (১২ ঘণ্টার কম) সেলাই করা কাপড় পরে থাকার কারণে একটি পূর্ণ সদকা ফিতর আদায় করে দিলেই চলত। -জামে তিরমিযী ১/১৭১।
ইহরামের কাপড় পরিবর্তন করা যাবে না : কেউ কেউ মনে করে, যে কাপড়ে ইহরাম বাঁধা হয়েছে সে কাপড় হালাল (ইহরাম শেষ) হওয়ার আগ পর্যন্ত বদলানো যাবে না। এটা একটা ভুল ধারণা। ওই কাপড় নাপাক না হলেও বদলানো যাবে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদিস : ১৫০১০, ১৫০১১।
তাওয়াফের সময় ছাড়াও ইযতিবা করা : অনেককে দেখা যায়, ইহরামের প্রথম থেকেই ইযতিবা (বাম কাঁধের ওপর চাদর রেখে ডান বগলের নিচ দিয়ে নিয়ে পরিধান করা) করে থাকে এবং হালাল হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থায় থাকাকে শরয়ী হুকুম মনে করে। এটি ভুল। এভাবে নামাজ পড়লে নামাজ মাকরূহ হবে। আবার কেউ কেউ তাওয়াফের সময় ইযতিবা করে এবং এ অবস্থায় সায়ীও করে থাকে এবং তাওয়াফের মতো সায়ীতেও তা করা শরয়ী বিধান মনে করে। অথচ সায়ীতে ইযতিবার বিধান নেই। এমনকি সকল তাওয়াফেও এটি সুন্নত নয়; বরং যে তাওয়াফের পর সায়ী করতে হয় শুধু সেই তাওয়াফেই ইযতিবা করতে হয়। সুতরাং নফল তাওয়াফে ইযতিবা নেই। কেননা নফল তাওয়াফের পর সায়ী নেই। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৫।
ইহরাম অবস্থায় বাইতুল্লাহ স্পর্শ করা : বাইতুল্লাহর দেয়ালে ও গিলাফে নিচ থেকে প্রায় ৭-৮ ফুট পরিমাণ চতুর্দিকেই সুগন্ধি লাগানো থাকে, তাই যেকোনো অংশে হাত লাগানোর দ্বারা হাতে সুগন্ধি লেগে যায়, যা ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ। মুমিন বান্দা যখন বিরাট ত্যাগ-তিতিক্ষার পর অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাইতুল্লাহ শরীফের একেবারে নিকটে পৌঁছে যায় তখন আবেগের বশবর্তী হয়ে ইহরাম অবস্থার কথা ভুলে গিয়ে বাইতুল্লাহয় হাত লাগায়, আলিঙ্গন করে। ফলে ইহরাম অবস্থায় অঙ্গপ্রত্যঙ্গে সুগন্ধি লেগে যায়। তাই ইহরাম অবস্থায় গিলাফে বা কাবাঘরে হাত দেবে না। এ সময় আবেগের বশবর্তী না হয়ে হুঁশকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। একটু সতর্ক হলেই এ বড় ভুল থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। -সহিহ মুসলিম ১/৩৭৩।
বাইতুল্লাহর যত্রতত্র চুম্বন, স্পর্শ ও আলিঙ্গন করা : অনেককে বাইতুল্লাহর কোনো স্থান ফাঁকা পেলেই গিলাফ ধরতে, দেয়ালে চুমু দিতে, সিনা লাগাতে ও স্পর্শ করতে দেখা যায়। অথচ বাইতুল্লাহর সব স্থান স্পর্শ করা বা চুমু খাওয়া সওয়াবের কাজ নয়। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে কেবল সীমিত কিছু স্থান স্পর্শ করা আর কিছু ক্ষেত্রে চুমু খাওয়ার কথা বর্ণিত আছে। যা নিম্নরূপ : ১. হাজরে আসওয়াদ। হাজরে আসওয়াদকে স্পর্শ করা, চুমু খাওয়া হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। ২. রুকনে ইয়ামানী। বাইতুল্লাহর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ হলো রুকনে ইয়ামানী। এই কোণে ডান হাত বা উভয় হাত দ্বারা স্পর্শ করা সুন্নত। কেউ কেউ চুমু খাওয়ার কথাও বলেছে। ৩. মুলতাজাম। এটি হাজরে আসওয়াদ থেকে বাইতুল্লাহর দরজা পর্যন্ত স্থান। এখানে সিনা, গাল ও উভয় হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে দোয়া করার কথা হাদিসে বর্ণিত আছে। ৪. কাবাঘরের দরজার চৌকাঠ ধরা এবং দোয়া করা। -জামে তিরমিযী ১/১৭৪; সহিহ মুসলিম ১/৪১২।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।