Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাট বসানোর প্রস্তুতি

সায়ীদ আবদুল মালিক | প্রকাশের সময় : ৪ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

আর কয়েক দিন পরই রাজধানীতে বসছে কোরবানির পশুর হাট। নিয়ম অনুযায়ী, ঈদের ৩ দিন আগে থেকে কোরবানির হাটে পশু কেনা-বেচা শুরু করা হয়। হাটগুলোর অনুমোদন দেয় ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশন। এবার রাজধানীতে মোট ২৩টি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই সিটি কর্পোরেশন। এর মধ্যে দক্ষিণে ১৪টি, উত্তরে ৯টি। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত ২১টি হাটের ইজারা চ‚ড়ান্ত করেছে দুই সিটি। দক্ষিণ সিটির ১৪ হাটের মধ্যে ১২ হাটের ইজারা চ‚ড়ান্ত হয়েছে বেশ কয়েকদিন আগেই। আর দুইটি হাটের কাক্সিক্ষত দর পাওয়া না যাওয়ায় এগুলোর ভাগ্য এখনও মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করছে। এ ছাড়া উত্তর সিটির ১২টি হাটের মধ্যে ৯টি হাটের ইজারা চ‚ড়ান্ত হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগের কারণে বাকি ৩টি হাটের ইজারা বাতিল করা হয়েছে।

এদিকে কোরবানির হাটের নিরাপত্তাকে আরও নিশ্চিত করতে প্রতিটি হাটকে সিসি ক্যামেরায় নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, হাটগুলোতে তিন স্তরের নিরাপত্তার পাশাপাশি জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন থাকবে। জনদুর্ভোগ ও যানজটের কথা চিন্তা করে এবার নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে রাস্তায় হাট বসালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গতকাল শনিবার এফডিসিতে এক অনুষ্ঠান শেষে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরো এলাকা সিসি টিভির আওতায় আনা হচ্ছে। তিনি আরও জানানছ, হাটে প্রবেশপথ, ক্যাশ কাউন্টার ও আশপাশের এলাকা সিসি ক্যামেরা দিয়ে সব সময় মনিটরিং করা হবে। কাউকে সন্দেহ হলে তল্লাশি করা হবে।

কোরবানির ঈদের এখনও ৮ দিন বাকি। এখনই রাজধানীতে শুরু হয়ে গেছে বৈধ এবং অবৈধ হাটের প্রস্তুতি। অথচ সিটি কর্পোরেশন থেকে ঈদের দিনসহ মোট চার দিনের জন্য এ হাটের অনুমোদ দেয়া হয়। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন হাটের প্রস্তুতি প্রায় শেষের পথে। কমলাপুর রেলওয়ে স্কুলের সামনে অস্থায়ী হাটের গেট রেডি হয়ে গেছে আরও ২-৩ দিন আগে। এখন চলছে বাঁশ গাড়ার কাজ। এই চিত্র শুধু কমলাপুর হাটের নয়, দুই সিটির প্রতিটি হাটই পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে। কোনো কোনো হাটে কোরবানির পশুও উঠতে শুরু করেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমের অংশ এবং ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত উভয় পাশের খালি জায়গায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্ধারিত পশুর হাট। সিটি কর্পোরেশন জায়গা নির্ধারণ করে দিলেও এর বাইরেও (সোনারগাঁ জনপথ রোড) হাট বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন ইজারাদার নূর হোসেন। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ডিএনসিসির ৪৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম এ হাটের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। এর বিরুদ্ধে তুরাগে এলাকাবসীর পক্ষে একটি অভিযোগ পুলিশ উপকমিশনার বরাবর দেয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমের অংশ এবং ২ নম্বর সেতুর পশ্চিমের খালি জায়গাটির ইজারা নিয়েছেন নূর হোসেন। সেই হাটটির দর দিয়েছেন ৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। পশুর হাটটির জন্য সিটি কর্পোরেশন জায়গা নির্ধারণ করে দিলেও এর বাইরে সড়ক ও জনপথ রোডের অনেকাংশ (রূপায়ণ সিটি গেট ও দিয়াবাড়ী মোড়) থেকে পশ্চিমে মেট্রোরেল মোড় পর্যন্ত দখল করে হাট বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন, যা নির্ধারিত জায়গার দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

এ প্রসঙ্গে ইজারাদার নূর হোসেন বলেন, সড়ক ও জনপথ সড়কে হাট বসানোর প্রস্তুতি নেইনি। সম্ভবত পুলিশের ওয়াচ টাওয়ারের জন্য ওরা প্রস্তুতি নিয়েছে। তাহলে, এ এলাকার দোকানপাট কেন গুঁড়িয়ে দেয়া হলো তিনি এর কোনো উত্তর দেননি।
এদিকে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ডিএনসিসির ৪৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম নিজেই এই পশুর হাটটির তত্ত্বাবধান করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সিটি কর্পোরেশন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো কাউন্সিলর হাটের ইজারার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন না। এর আগে টানা গত দুই বছর এ হাটটির ইজারা নিয়েছিলেন তিনি। এবার কাউন্সিলর হওয়ায় সরাসরি হাটের ইজারা না নিয়ে তিনি নূর হোসেনের নাম ব্যবহার করে ইজারা নেন। এ বছর ডিএনসিসির ইজারার তালিকায় নূর হোসেনের নামের পাশে তার মোবাইল নম্বর থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে নম্বর রয়েছে কাউন্সিলর শফিকুল ইসলামের। ইজারার নামের পাশে কাউন্সিলরের মোবাইল নম্বর কেন জানতে চাইলে নূর হোসেন বলেন, এটা হওয়ার কথা না, হয়তো সিটি কর্পোরেশন ভুল করেছে। ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, এটা কখনোই সম্ভব নয়। ইজারাদার যে তথ্য দেন, আমরা সেটাই অনুসরণ করি।

সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাটের ইজারাদার ডিএনসিসির দেয়া অন্যতম শর্ত ছিল, ঈদের দিনসহ মোট চার দিন পশুর হাট বসানো যাবে এবং হাট বসার দুই দিন আগে ইজারাদার হাটের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করতে পারবেন। অর্থাৎ ১২ আগস্ট পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেই হিসাবে ৮ আগস্ট থেকে নগরে হাট বসার কথা। এর দুই দিন আগে অর্থাৎ ৬ আগস্ট থেকে ইজারাদাররা হাটের বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করতে পারবেন। কিন্তু গতকাল দেখা যায়, অনেকে এই শর্তের তোয়াক্কা করছেন না। নির্ধারিত সময়ের আগেই তারা হাটের প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছেন।

গতকাল আরও কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা যায়, ইজারাদারের লোকজন হাটের বিভিন্ন কাজের তদারকি করছেন। শ্রমিকেরা গর্ত খুঁড়ছেন, বাঁশ-কাঠ কাটা হচ্ছে, মাটি-বালু ফেলে উঁচু-নিচু জায়গা সমান করা হচ্ছে, বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হচ্ছে, ওয়াচ টাওয়ার করা হচ্ছে। খাবার হোটেল তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা।

এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির ভারপ্রাপ্ত সম্পত্তি কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম শামীম বলেন, সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত জায়গার বাইরে পশুর হাট বসাতে পারবে না। আর কেউ যদি হাট বসানোর চেষ্টা করেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পশুর হাট

৮ জুলাই, ২০২২
২০ জুলাই, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ