Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সৈয়দপুরে কুরবানির জন্য ৬ হাজার পশু প্রস্তুত

নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে | প্রকাশের সময় : ৪ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০২ এএম

ঈদুল আজহা বা কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে সৈয়দপুর উপজেলায় ৬ হাজার পশু প্রস্তুত রেখেছে খামার মালিক ও গৃহস্থরা। কুরবানির বাজারে স্বাস্থ্যসম্মত মোটাতাজা গরু-ছাগলের চাহিদা থাকায় খামারিরা প্রাকৃতিক উপায়ে প্রস্তুত করেছেন তাজামোটা গরু। ভালো দামের আশায় নিজেদের ও ব্যাংকের ঋণে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করে পশু বিক্রির অপেক্ষায় আছেন। খামারে খামারে এখন চলছে পশু পরিচর্যার ব্যস্ততা। খামারের বাইরেও গৃহহস্থরা লাভবান হতে ৪ হাজার গরু-ছাগল প্রতিপালন করছেন। ইতোমধ্যে কুরবানির বাজারে পশু আসা শুরু হয়েছে। তবে হাট বাজার জমতে আরও কয়েকদিন দেরি হবে বলে জানিয়েছেন খামারি ও গৃহস্থরা। এরই মধ্যে গরু ব্যবসায়ী ও বেপারীরা খামারে খামারে গিয়ে চাহিদামত গরু দরদাম করে কিনতে শুরু করেছেন। এবার ক্রেতাদের মাঝে দেশি এবং শংকর জাতের গরুর চাহিদা বেশী থাকায় ব্যাপারীরা এ জাতের গরুই কিনছেন সর্বাধিক। প্রতিদিনই ব্যাপারীরা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মোটাতাজা স্বাস্থ্যসম্মত গরু কিনতে খামারে ভিড় করছেন।

সৈয়দপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, উপজেলায় নিবন্ধিত মোট ২৭৮টি পশুর খামার রয়েছে। এসব খামারে ২ হাজার গরু-ছাগল প্রস্তুত করেছে খামারিরা। এর বাইরেও গ্রামাঞ্চলে গৃহস্থ পরিবারগুলো প্রস্তুত করেছে আরও ৩ হাজার গরু। এসব গরু-ছাগল মোটাতাজা করতে দেশিয় প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। কুরবানির বাজারে দেশিয় পদ্ধতিতে লালন-পালন করা হৃষ্টপুষ্ট গরুর চাহিদা থাকায় গৃহস্থ ও খামারিরা দেশি পদ্ধতি অনুসরণ করছেন। এজন্য প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পক্ষ থেকে পরামর্শ ও তদারকি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে পশু মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার না করতে খামার ও গৃহস্থদের মাঝে সতর্কতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এতে করে খামারিরা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পশু মোটাতাজা করেছেন। গ্রামাঞ্চলে পশু পালনকারী গৃহস্থদেরও দেশি পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলা হচ্ছে। লালন-পালন করা গরু অধিকাংশ দেশি ও শংকর জাতের।

সরেজমিনে শহরের বাঁশবাড়ি এলাকার শেষ প্রান্তে অবস্থিত মেসার্স ইউসুফ হৃষ্টপুষ্ট খামার ও ইউসুফ ডেইরি ফার্ম ঘুরে দেখা যায়, প্রাকৃতিক পরিবেশে ফার্মটি গড়ে তোলা হয়েছে। খোলামেলা উন্নত পরিবেশে লালন-পালন করা হচ্ছে বিভিন্ন জাতের গরু ও ছাগল। এ ফার্মের মালিক তরুণ উদ্যোক্তা রোটারিয়ান জামিল আশরাফ মিন্টু। খামার সম্পর্কে মিন্টু জানান, আসন্ন কুরবানির পশুর চাহিদা মেটাতে তার খামারে ১৫৩টি গরু ও ৩৬টি ছাগল প্রস্তুত করা হয়েছে। ক্রেতাদের সামর্থ্য চিন্তা করে বড়, মাঝারি ও ছোট আকৃতির গরু রয়েছে। খামারে সর্বনিম্ন ৩০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকার গরু রয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকার গরু ব্যবসায়ী ও বেপারীরা গরু পছন্দ করে কেনার অর্ডার দিয়েছেন। খামারে গরুর পাশাপাশি ৩৬টি ছাগল প্রস্তুত করা হয়েছে।ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের এসব ছাগল ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। অনেক ক্রেতা গরু ছাগল কিনতে দরদাম করে তাদের পছন্দের পশু অর্ডার দিয়ে গেছেন। এ খামার সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করা হয়েছে। খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে খড়, তাজা ঘাস, খুদি ভাত, সিদ্ধ আলু, ভূষি, মসুর ও খেসারী ডাল ও ধানের গুড়া। পশুর রোগবালাই চিকিৎসার জন্য রয়েছে প্রশিক্ষিত পশু চিকিৎসক।

এছাড়াও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পশু লালন-পালনে নিয়মিত তদারকি করছে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মীরা। তাদের তত্ত্বাবধানে বিক্রিত পশুর স্বাস্থ্য সনদ দেয়া হচ্ছে পশু ক্রেতাকে। সনদে দেশিয় পদ্ধতিতে পশু মোটাতাজাকরণ এবং পশুর মাংস স্বাস্থ্যসম্মত বলে উল্লেখ রয়েছে। মিন্টু জানান, তার খামারসহ নিবন্ধিত অন্যান্য খামারে পালিত পশুর মাংস নিরাপদ বলে নিশ্চয়তা দেন। সৈয়দপুরের তরুণ উদ্যোক্তা মিন্টু তার ব্যবসা শুরু প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, তাদের পারিবারিক ব্যবসা থাকলেও ভিন্ন কিছু করার চিন্তা থেকে শুরু করেন খামার ব্যবসা।
তার ব্যবসায়ী বাবা আলহাজ শাহাব উদ্দিন ও চাচা সাবেক পৌর কমিশনার মোস্তফা কামালের উৎসাহ ও নিজের মনোবলের উপর ভর করে শুরুতেই সাফল্য পান। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রতি বছরই খামারের পরিধি বাড়ছে, বাড়ছে পশুর সংখ্যাও। শুরুতে নিজের বিনিয়োগে ব্যবসায় সাফল্য পাওয়ায় বেসরকারি ঢাকা ব্যাংকের স্থানীয় শাখা তার খামারে বিনিয়োগ করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদুল আজহা

৯ জুলাই, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ