Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঠাকুরগাঁওয়ে দুই বাসের সংঘর্ষে নিহত ৮

বিভিন্ন স্থানে নিহত আরো ৪

রুবাইয়া সুলতানা বাণী, ঠাকুরগাঁও থেকে | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম

দিনাজপুরে থাকেন মঙ্গলী রানী। ছেলে মনেশ্বর পুলিশ কনস্টেবল। থাকেন ঠাকুরগাঁয়ে। অনেক দিন ছেলেকে দেখা হয়নি। তাই ছেলেকে দেখতে ঠাকুরগাঁও এসেছিলেন। গতকাল সকালে শাশুড়িকে দিনাজপুরের কাহারোলে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিশাত পরিবহনে করে রওনা হন পুত্রবধূ জবা রানী। কিন্তু আর বাড়ি ফেরা হলো না মঙ্গলী রানী ও তার পুত্রবধূর। একই পরিবহনে মোস্তফা কামাল ও তার স্ত্রী মনসুরা বেগম চিকিৎসার জন্য লাহিড়ী হাট থেকে দিনাজপুরে যাচ্ছিলেন। তাদেরও আর চিকিৎসা করা হলো না। গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের ঠাকুরগাঁও-ঢাকা মহাসড়কের খোঁচাবাড়ি বলাকা উদ্যানের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে মিনিবাসের চালকসহ পাঁচ জন, ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর দুজন এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরো একজন মারা যায়। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়বার আশংকা করছেন হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিসের সূত্র।

নিহতরা হলেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সাংরোলা জিয়াবাড়ী গ্রামের আলী মৌতরের ছেলে মোস্তফা (৪২), মোস্তফা’র স্ত্রী মনসুরা (৩৫), সদর উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের শুকিয়া মোহাম্মদের ছেলে আব্দুল মজিদ (৬২)। দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার রসুলপুর গ্রামের গলিয়া রাম রায়ের স্ত্রী মঙ্গলী রাণী (৬৬), একই গ্রামের মনেস্বর রায়ের স্ত্রী জবা রাণী রায় (৩৫), ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সনগাঁও গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে আব্দুর রহমান তরুণ (৪০), সদর উপজেলার লক্ষীপুর দেবাডাঙ্গী গ্রামের তরণী চন্দ্র বর্মনের ছেলে ক্ষিতিশ চন্দ্র বর্মন (৩৬) ও নিশাত নামে বাসের চালক চায়না (৩৫)।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ডিপজল এন্টারপ্রাইজের বাসটি ঢাকা থেকে ছেড়ে ঠাকুরগাঁও যাচ্ছিল। আর নিশাত পরিবহনের বাসটি ঠাকুরগাঁও থেকে ছেড়ে দিনাজপুর যাচ্ছিল। খোঁচাবাড়ি এলাকায় পৌঁছলে বাস দুটি মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।এ সময় দুই বাসের মধ্যখানে পড়ে যায় একটি মোটরসাইকেল ও একটি যাত্রীবাহী থ্রি হুইলার। দুর্ঘটনার পর ঠাকুরগাঁও-ঢাকা সড়কে যান চলাচল তিন ঘণ্টা বন্ধ ছিল।

সদর উপজেলা জগন্নাথপুর ইউপি সদস্য আনিসুর রহমান বলেন, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ডিপজল পরিবহন নামের নৈশ্য কোচের চালকের অসতর্কতার জন্য এ ঘটনা ঘটে। তিনি জানান, নিশাত পরিবহন বাসের মালিক ঠাকুরগাঁওয়ের মিন্টু। তার বাড়ি আশ্রমপাড়া মহল্লায়।

এদিকে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের ছবিটি আরো করুণ। নিহত আহত ও নিখোঁজদের স্বজনদের চিৎকারে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। হাসপাতালে ছোট্টো জরুরি বিভাগের কক্ষটিতে মারাত্মক আহতদের জায়গা না হওয়ায় অনেককে করিডোরের বারান্দায় চিকিৎসা দিচ্ছিলেন হাসপাতাল কর্মীরা। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় এমনিতেই তাদের উপস্থিতি ছিল কিছুটা কম, তবে খবর পেয়ে ছুটি বাদ দিয়ে পড়িমড়ি করে ঢুকছিলেন হাসপাতাল কর্মচারি কর্মকর্তারা । সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যে আহতদের বাঁচার চেষ্টা করতে গিয়ে কোনো কোনো লাশ পড়ে ছিল অবহেলায় যতক্ষণ না স্বজনরা এসে চিৎকার করে কান্না বিলাপে সেগুলো সরাচ্ছিলেন।

ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশিকুর রহমান টেলিফোনে বলেছেন, মারাত্মক আহতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, অন্যরা স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
ঘটনাস্থাল পরিদর্শন করে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান সেলিম সাংবাদিকদের বলেন, আহতদের চিকিৎসার জন্যও সহায়তা করা হবে।

সাভার : ঢাকার সাভারে চলন্ত বাস থেকে পড়ে চট্টগ্রাম পলিটেকনিকেলের এক ছাত্রী নিহত হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। গতকাল শুক্রবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের বেতার কেন্দ্রের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত শিল্পী আক্তার (২০) কুমিল্লা জেলার দ্বেবিদার থানার গুলাইনগর গ্রামের মৃত শাহ আলম মুন্সীর কন্যা। সে চট্টগামের চট্টগ্রাম মহিলা ইনস্টিটিউট পলিটেকনিকেলের ছাত্রী।
সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন জানান, শিল্পী চট্টগাম থেকে আশুলিয়ার শ্রীপুরে বড় ভাই আমির হেসেনের বাড়িতে বেড়ানোর জন্য যাচ্ছিল। দুপুর আনুমানিক সোয়া একটার দিকে তাকে বহনকৃত বাসটি সাভারের বেতার কেন্দ্রের সামনে পৌছলে বাসটি সজোরে ব্রেক করে। তখন বাসের ইঞ্জিন কভারে বসা শিল্পী নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে নাপেরে বাসের দরজা দিয়ে সড়কে পড়ে মাথায় আঘাত পায়। পরে তাকে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এছাড়া বাথুলী এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের ২ আরোহী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতের এ ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় তিন জনকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাতেই একজন মারা যান। পরে সকালে আরও একজনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- কোরবান আলীর ছেলে সেলিম (২০) ও আব্দুল খালেকের ছেলে মাসুদ (২০)। তারা উভয়ই উপজেলার সুতিপাড়া ইউনিয়নের বালিথা গ্রামের বাসিন্দা। এছাড়া দুর্ঘটনায় আহত একই এলাকার কাজীমুদ্দিনের ছেলে শাওন মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়েরের পাশাপাশি ঘাতক ট্রাকটি শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা এলাকায় বেসরকারি সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডের কনটেইনার ডিপোতে লরির চাপায় এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। গতকাল সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শ্রমিকের নাম রাসেল (৩৫)। তিনি নগরীর মধ্যম হালিশহর এলাকার মোজাফফর রহমানের ছেলে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক হামিদুর রহমান বলেন, কনটেইনার ডিপোতে নতুন আসা কনটেইনার পরীক্ষার সময় দুর্ঘটনাবসত একটি লরি রাসেলকে চাপা দেয়। পরে রাসেলকে গুরুতর অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিহত

২৯ ডিসেম্বর, ২০২২
২২ ডিসেম্বর, ২০২২
৭ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ