Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নারায়ণগঞ্জে সরকারি হিসেবে ৭০ ডেংগু রোগী সনাক্ত বেসরকারি হিসেবে ১১২, মৃত্যু ৩

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০১৯, ৬:১৬ পিএম

ঢাকার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে নারায়ণগঞ্জেও বাড়ছে ডেংগু রোগীর সংখ্যা। জেলায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বেসরকারি হিসেবে ১‘শ ১২ জন ডেংগু রোগী সনাক্ত হলেও সরকারি হিসেবে মতে এই সংখ্যা ৭০ জন। সরকারি হিসেবে, ডেংগু আক্রান্ত ৭০ জনের তাদের মধ্যে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫১ জন। এবং বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৯ জন। তাদের প্রত্যেকের অবস্থাই উন্নতির দিকে। এমন তথ্য জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। অপরদিকে ডেংগু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ফতুল্লার দেলপাড়া এলাকার প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেন মিন্টু (৪৫), শহরের ইসদাইর এলাকার শাওন কবীর সালেহীন (৩৮) এবং সর্বশেষ ফতুল্লার বক্তাবলি এলাকার শান্ত ডেংগু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। সূত্র বলছে, ২৫ জুলাই রাজধানীর মহখালী এলাকার একটি হাসপাতালে ডেংগু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেন মিন্টু। ৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি মারা যান। ৬ জুলাই ডেংগু আক্রান্ত হয় ইসদাইর এলাকার কায়কোবাদ সিদ্দিকীর ছেলে শাওন কবীর সালেহীন। পরে ৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি মারা যান। এছাড়াও সর্বশেষ ফতুল্লার বক্তবালীর ছমিরনগর এলাকার জসিম উদ্দিনের ছেলে শান্ত ২৮ জুলাই মারা যায়। ঈদের পর তার কোরিয়া যাওয়ার কথা ছিলো।

তবে জেলা সিভিল সার্জন জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জে ডেংগু রোগ এখনও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। এই রোগটি যাতে মহামারি আকার ধারণ করতে না পারে সে ব্যাপারে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। এদিকে জানা গেছে নগরীর ৩‘শ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে এ পর্যন্ত ডেংগু রোগের চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন ২১ জন। তাদের মধ্যে ১০ বাড়ি ফিরেছেন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১১ জন। তাদের মধ্যে ৮ জন পুরুষ ও ৩ জন নারী। নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ডেংগু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৯ জন। এরমধ্যে ৮ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এবং চিকিৎসাধীন রয়েছেন একজন পুরুষ। অপরদিকে নগরীর বেসরকারি মেডিস্টার জেনারেল হাসপাতালে ডেংগু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা ভর্তি হয়েছিলেন ৩০ জন। তাদের মধ্যে ২৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও এখনও পর্যন্ত ভর্তি রয়েছেন ৫ জন। তাদের মধ্যে ৩ জন পুরুষ এবং ২ জন নারী।

এছাড়া ডেংগু আক্রান্ত হয়ে নগরীর পলি ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছিলেন ১০ জন। তাদের মধ্যে ৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এছাড়া এখান থেকে ২ জনকে উন্নত চিকিৎস্বার্থে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে এবং এখনে ভর্তি রয়েছেন ২ জন। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চিকিৎসাধীন ১৯ জনের অবস্থার উন্নতির দিকে। তারা দ্রুত বাড়ি ফিরতে পারবেন। তবে, ডেংগু রোগ পরীক্ষা নিরীক্ষা ও নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতাল দুটিতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ জরুরি অবস্থায় সিসিইউ এবং আইসিইউ সুবিধা না থাকায় কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে বলে চিকিৎসকেরা জানান।

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মো. আসাদুজ্জামান জানান, হাসাপাতালে ডেংগু সংক্রান্ত দুই একটি পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। সেগুলো এখানে করা হচ্ছে। অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো থেকে করিয়ে আনা হচ্ছে। এছাড়া চিকিৎসার সার্বিক অবস্থা ভালো। কোনো রোগীর অবস্থা খারাপ হলে সেক্ষেত্রে ঢাকায় পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। অপরদিকে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. ইমতিয়াজ জানিয়েছেন, ডেংগু রোগ বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে শহরকেন্দ্রিক এবং নিয়ন্ত্রনের মধ্যেই রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো উপজেলায় কেউ আক্রান্ত হয়নি। ডেংগুর প্রকোপ যাতে বৃদ্ধি পেতে না পারে সেজন্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জনসচেতনামূলক কার্যক্রমসহ নানামূখী কার্যক্রম শুরু করেছে।

তিনি আরও জানান, ডেংগু বিষয়ে শিক্ষার্থীসহ সর্বসাধারণকে সচেতন করতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে সেমিনারের আয়োজন করা হবে। এছাড়া ডেংগু রোগ শনাক্ত করণের যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা সরকার নির্ধারিত ফি রাখতে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সাথে বেসরকারি হাসপাতাল গুলোকেও ডেংগু চিকিৎসা বাবদ নূন্যতম ফি রাখতে বলা হয়েছে। সিভিল সার্জন বলেন, শহরের বড় মাপের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খবর নিয়ে দেখা গেছে, গেলো এক সপ্তাহে ৭‘শ জনের ডেংগু রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা করা হলেও তাদের মধ্যে ১‘শ ১২ জন ডেংগু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭০ জন নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল চিকিৎসা নিয়েছেন এবং ৩০ জনকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, ডেংগু রোগে আক্রান্ত হয়ে যারা ইতোমধ্যে মারা গেছেন তাদের একজন ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। তাই বলা হচ্ছে, তিনি ঢাকা থেকেই আক্রান্ত হয়েছিলেন। অপরজন শিক্ষক সে-ও ঢাকার থেকে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া সর্বশেষ মারা যাওয়া শান্ত জেলা থেকেই আক্রান্ত হয়ে ৫ দিন চিকিৎসাধিন ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডেঙ্গু

২৭ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ