Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতের প্রবৃদ্ধির হার বিষয়ক পরিসংখ্যান হয়ত অতিরঞ্জিত

ব্লমবার্গ বিজনেসউইক | প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০১৯, ১২:০০ এএম

সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত ভারত ছিল দ্রুত বর্ধমান বিশ্বের প্রধান অর্থনীতি। তার বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ বা তার বেশি ছুঁই ছুঁই করছিল। জল্পনা কল্পনা শোনা যাছিল যে ভারত শিগগগিরই যুক্তরাজ্য ও জার্মানিকেও ছাড়িয়ে যাবে।

এখন দেখা যাচ্ছে যে দ্রুত প্রবৃদ্ধির বিষয়টি অতিরঞ্জিত হতে পারে। প্রবৃদ্ধির সরকারি তথ্যের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে নরেন্দ্র মোদির এক সাবেক মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রামনিয়ান কর্তৃক প্রণীত একটি একাডেমিক পেপারে ২০১১-১২ থেকে ২০১৬-১৭ পর্যন্ত আর্থিক বছরে প্রতি বছর বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৪.৫ শতাংশের কাছাকাছি ছিল বলে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি যে পন্থায় জিডিপি পরিমাপ করা হচ্ছে তা সমস্যাপূর্ণ।

এই তথ্য বিতর্ক, যা ব্যাপক ভাবে জাতীয় সংবাদপত্রে প্রচারিত হয়েছে। আর তা মোদির জন্য এক আঘাত যিনি ভারতের অর্থনীতিকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতি করার দিকে চোখ রেখেছেন। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লায়েড ইকনোমিক্সের প্রফেসর এবং কঠোর তথ্য মান-এর প্রবক্তা আন্তর্জাতিক সংস্থা অর্থনৈতিক পরিমাপ সমিতির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য স্টিভ হ্যাংক বলেন, ভারতীয় তথ্যের এই লুকোচুরির ব্যাপারে মানুষ কথা বলছে এবং সেটাই হচ্ছে আসল সমস্যা। তিনি বলেন, পরিসংখ্যান তথ্যে একবার আস্থা হারালে তা বাজারে বিরাট অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করে। বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিতে এটা লাল পতাকা উত্তোলন।

তথ্য বিতর্ক
সরকারের তথ্য হচ্ছে : গড় বার্ষিক জিডিপি ৬.৭ শতাংশ। কিন্তু অরবিন্দ সুব্রামনিয়ানের তথ্য হচ্ছে : বার্ষিক গড় জিডিপি ছিল ৪.৫ শতাংশ। অনেকটা চীনের সরকারি তথ্যের মতই ভারতের পরিসংখ্যান নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। সরকার তার পদ্ধতিগত পরিবর্তনের প্রতিফলন দেখাতে তথ্য সংশোধন করার পর জিডিপির পরিমাণ নিয়ে ২০১৫ সাল থেকেই বিতর্ক চলছে।

হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কেন্দ্র কর্তৃক প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রে অরবিন্দ সুব্রামনিয়ান যুক্তি দেখিয়েছেন যে স্ফীত জিডিপি সংখ্যার জন্য বড় রকম দায়ী নির্মাণ উৎপাদন হিসেব করার পদ্ধতির পরিবর্তন। সুব্রামনিয়ান যানবাহন বিক্রি ও বিদ্যুৎ ব্যবহার তথ্যসহ বিকল্প তথ্য পেশ করেন এটা দেখাতে যে ২০১২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত অর্থ বছরের প্রত্যেক বছরে গড় প্রবৃদ্ধি প্রায় ২ শতাংশ পরিমাণ কম ছিল।

শুধু জিডিপি তথ্যই যাচাইয়ের আওতায় আনেনি। গত মে মাসে সাধারণ নির্বাচনের আগে এক সরকারি রিপোর্ট ফাঁস দ্বারা সরকার দিশেহারা হয়ে পড়ে যাতে দেখানো হয় যে ২০১৮ সালে শেষ হওয়া আর্থিক বছরে বেকারত্বের হার ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ভোটারদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া পরিহার করার উদ্দেশ্যে তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তার অব্যবহিত পরই ভারত ও ভারতের বাইরের ১০০’রও বেশি অর্থনীতিবিদ এক নজিরবিহীন পদক্ষেপ গ্রহণ করে ভারতের তথ্যে রাজনৈতিক অনধিকার চর্চার সম্ভাবনার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বেকারত্ব বাড়ছে
ভারতে বেকারত্বের হার ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তথ্য : ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিস, লেবার ব্যুরো, ভারত সরকার, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড নিউজপেপার। বছরগুলো কঠোর ভাবে আর্থিক বছর নয়। ২০১৪/১৫ সালে কোনো সার্ভে হয়নি। ২০১৬/১৭-র বেকারত্বের হারের তথ্যের ভিত্তি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড রিপোর্ট।

তাদের একজন হচ্ছেন অমর্ত্য লাহিড়ি। তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে সম্পৃক্ত মুম্বাই থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর অ্যাডভ্যান্সড ফিনান্সিয়াল রিসার্চ অ্যান্ড লার্নিং-এর প্রধান। লাহিড়ি বলেন যে অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় ও বিনিয়োগে ঘাটতি তহবিল যোগাতে আন্তর্জাতিক পুঁজির উপর ভারতের অব্যাহত নির্ভরতার প্রেক্ষিতে দেশের সর্বশেষ যা দরকার তা হচ্ছে প্রধান অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান বিষয়ে অনিশ্চয়তা দূর করা। তিনি বলেন, তথ্য প্রতিবেশ ব্যবস্থার অপটিক্স সমালোচনার উর্ধে। ভারতের এখন কাজ করা দরকার।

১৩০ কোটিরও বেশি লোকের দেশ জরিপ চালানো এক কঠিন ব্যাপার। অনেকেই কাজ করে মা ও বাবার ব্যবসায়ে যেগুলো কোনো কর দেয় না। সরকার অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান সংগ্রহে বার্ষিক বাজেটের মাত্র ০.২ শতাংশ বিনিয়োগ করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু শীর্ষ কর্মকর্তা তাদের কাজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে হতাশ হয়ে চাকরি ত্যাগ করেছেন। ভারতে এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, যেমন খুচরা বিক্রি বা বাড়ি নির্মাণ বিষয়ে সরকারি তথ্য মেলে না। সিঙ্গাপুরের নোমুরায় মুখ্য ভারতীয় অর্থনীতিবিদ সোনাল ভারমা বলেন, স্পর্শ করা হয়নি অর্থনীতির এমন বহু দিক আছে। ভারত যে গতিতে বাড়ছে, তাতে সব বিষয়ের ভালোভাবে পরিমাপ করতে সক্ষম হওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয় সুব্রামনিয়ানের তথ্যে আপত্তি জানিয়েছে। মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ প্রভিন শ্রীবাস্তব বলেন, সংস্থা জিডিপি কম্পিউটিংয়ে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করেছে। নিরপেক্ষ অর্থনীতিবিদরা সুব্রামনিয়ানের গবেষণাপত্রের ভিত্তি গবেষণার সমালোচনা করেছেন। পরবর্তী প্রকাশনায় তিনি তার কাজের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেন এবং উল্লেখ করেন যে তিনি সরকারি পদ্ধতির ব্যাপারে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি আরো যুক্তি দেন যে ২০১৬ সালের শেষদিকে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের ফলে দেশে অর্থ সঙ্কট সৃষ্টিসহ বিদেশী ও অভ্যন্তরীণ প্রতিক‚ল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে ভারত এত বলিষ্ঠ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছিল কিনা তাতে সন্দেহ আছে।

বিনিয়োগকারিদের জন্য যা ক্ষতি তা ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। নেদারল্যান্ডসের ইউট্রেক্ট-এ র‌্যাবো ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল-এ সিনিয়র অর্থনীতিবিদ হুগো এরকেন বলেন, ভারতের জিডিপি তথ্য রাজনীতিকীকৃত হওয়ার ব্যাপারে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন।
সুব্রামনিয়ান বর্তমানে ওয়াশিংটন ভিত্তিক পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকনোমিকস-এর সাথে জড়িত রয়েছেন। তিনি বলেন, ভারতকে অবশ্যই জিডিপি সংগ্রহের পদ্ধতি পরিবর্তন এবং সংখ্যার সত্যতা নিশ্চিত করতে নিরপেক্ষ টাস্কফোর্স নিয়োগ করে সুনামের ক্ষতি পুনরুদ্ধার করতে হবে।

মোদির সরকারের দ্রুত কাজ করার জন্য প্রণোদনা আছে : সরকার আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের প্রথম সার্বভৌম বন্ড ছাড়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে। যা ১০ বিলিয়ন ডলার অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। তার সফল বিক্রয়ের একটি পূর্বশর্ত হবে সরকারি পরিসংখ্যানের বৃহত্তর স্বচ্ছতা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ