Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের এক বছর : বিশৃঙ্খলা আগের মতোই

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৯, ১২:১০ পিএম

দুই বাসের রেষারেষিতে বিমানবন্দর সড়কে এক কলেজছাত্রী নিহতের ঘটনায় গত বছরের জুলাইয়ে রাজধানীজুড়ে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ১৮টি নির্দেশনা দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিট। পুলিশ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোও সড়কে শৃঙ্খলা আনতে নিয়েছিল নানা উদ্যোগ। তবে সেই ছাত্র আন্দোলনের এক বছর পার হলেও ঢাকার সড়কে বিশৃঙ্খলা আগের মতোই রয়ে গেছে। বরং এই দুই বছরে আরও এরকম অনেক ঘটনায় বহুজনের প্রাণহানী ঘটেছে।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের একটা বড় দাবি ছিল, সড়ক থেকে ফিটনেসবিহীন যানবাহন উচ্ছেদ করা। কিন্তু দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে চলাচলরত যানবাহনের ফিটনেসের করুণ অবস্থার যে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি, বিআরটিএর এক প্রতবেদনেই তা স্পষ্ট। হাইকোর্টে জমা দেয়া ওই প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, দেশে এখনো আনফিট মোটরযান আছে প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার, যার সিংহভাগই চলাচল করছে রাজধানীতে।
ছাত্র আন্দোলনের পর ঢাকায় বাস স্টপেজের জন্য ১২১টি স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিল দুই সিটি করপোরেশন। প্রথম কয়েক দিন এসব স্টপেজে বাস দাঁড়ালেও বর্তমানে বেশির ভাগ স্টপেজেই বাস থামছে না। একই অবস্থা চলন্ত অবস্থায় বাসের দরজা লাগিয়ে রাখার ক্ষেত্রেও। বেশির ভাগ বাসই দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্যদের ফাঁকি দিতে নামকাওয়াস্তে দরজা লাগানোর ভান করে চলে।

ঢাকার বেশির ভাগ ফুটপাত আগেও হকারদের বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। এখনো তা-ই আছে। যে যার মতো যানবাহন পার্কিংও করছেন। হাইকোর্টের নির্দেশনায় ঢাকার আন্ডারপাসগুলোয় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি আয়না লাগানোরও নির্দেশ ছিল। গত বছরের ৩০ আগস্টের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। বাস্তবে ঢাকার আন্ডারপাসগুলো ঘুরে সে রকম কিছু চোখে পড়েনি।
আন্দোলনের পর ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি প্রবর্তনে নড়েচড়ে বসে সরকার। ২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো এসব সিগন্যাল বাতি যথাযথ ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়, যেগুলো এখনো জ্বলেনি।
এখনো ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে মানুষ। যাত্রীর জন্য বাসগুলোর প্রতিযোগিতায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। ফুটপাতগুলো এক বছরেও পথচারীবান্ধব হয়নি। রাস্তার ওপর বন্ধ হয়নি পার্কিং। রঙ হারাতে শুরু করেছে এক বছর আগের জেব্রা ক্রসিং। গুলশানের মতো অভিজাত এলাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার হচ্ছে দড়ি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর পরই সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ পাস করে সরকার। তবে সে আইনটি প্রয়োগে সরকার গাফিলতি করছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী তড়িঘড়ি করে ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ পাস করা হলেও আজও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। চালক প্রশিক্ষণ, যানবাহনের ফিটনেস আধুনিকায়ন, রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ সিস্টেমে বাস চলাচল নিশ্চিত করা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ করা, সড়কে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা বন্ধ করা, শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিশ্চিত করতে সরকারের অঙ্গীকারও দৃশ্যমান নয়।
তবে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছেন, গত এক বছরে ঢাকাসহ দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনা অনেকটাই বদলে গেছে। এক্ষেত্রে তারা উদাহরণ হিসেবে মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহী-উভয়েরই হেলমেট ব্যবহার করার উদাহরণটাই বেশি দিচ্ছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ