Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রমজান কোরআন নাজিলের মাস ও আমাদের করণীয়

প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

॥ আতিকুর রহমান নগরী ॥
আরবি বারো মাসের মধ্যে রমজান হচ্ছে নবম মাস। আসমানী রহমতের বার্তা আর অফুরন্ত মাগফিরাতের আহ্বান নিয়ে এ মোবারক মাহিনা আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে। বছরের বাকি এগারো মাসের তুলনায় এ মাসটির ফজিলত ও বরকত অনেক বেশি।
মানব জাতিরা যখন সারাটি বছর খোদার নাফরমানি আর উল্টোমি করে কাটিয়ে দেয়, ঠিক তখনই সেসব ভুলের মাশুল দিতে ক্ষমার স্লোগান নিয়ে মানুষকে নিষ্পাপ আর পাপরাশিকে ভস্ম করার জন্য আগমন করেছে মাহে রমজান।
‘রমজান’ আরবি শব্দ। যা বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু মূলত এর অর্থ হচ্ছে ভস্ম করে দেয়া, ঝলসে দেয়া। এ মাসটির নামকরণের কারণ হচ্ছে, সর্বপ্রথম রোজার বিধান যে মাসে এসেছিল সে মাসটি ছিল প্রচ- গরমের। ঝলসে দেয়ার মতো গরম, তাই এর নাম রাখা হয়েছে ‘রমজান’। তবে আলিমগণ বলেন, ‘বান্দা যেহেতু এ মাসের বিধানাবলি সুচারু রূপে পালন করে বিধায় আল্লাহতায়ালা তাঁর সমস্ত পাপকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ভস্ম করে দেন। তাই এ মাসকে ‘রমজান’ বলা হয়।
আমরা সাধারণত মনে করে থাকি রমজান মাসের বৈশিষ্ট্য শুধু ‘রোজা রাখা আর তারাবিহ পড়া। এগুলো রমজানের প্রধান দুটি ইবাদত বটে। এ ছাড়াও এ মাসটির রয়েছে ভিন্ন এক উদ্দেশ্য। যেমন আল্লাহ পাক মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ইরশাদ করেন, “আমি তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করেছি যেমনিভাবে করেছিলাম তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার’’। সুতরাং রমজানের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন। বিগত বছরের সব পাপাচার থেকে মুক্ত করে তোলাই হচ্ছে এ মাসের প্রধান পয়গাম। এ মাসটির ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে হযরত সালমান ফারসি (রা.) বলেন, একবার নবীয়ে করিম (সা.) শাবানের শেষ তারিখে আমাদেরকে সম্বোধন করে বলেন, “হে মানব জাতি! তোমাদের মধ্যে এমন একটি মোবারক মাস উপস্থিত হয়েছে যে মাসটির মাঝে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।”
মানব জাতির ধর্মীয় গ্রন্থ আল-কোরআন যে মাসে নাজিল হয়েছে এটা অবশ্যই কারো অজানা নয়। আর অজানাদের জন্য আল্লাহপাকের ঘোষণা রয়েছে “রমজান সেই মাস যে মাসে নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হেদায়ত এবং পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্যকারী”। (সুরা : ১,আয়াত : ১৮৫)
কোরআন নাজিলের ব্যাপারে আল্লাহপাক সুরা বাকারার ১৮৪ নং আয়াতে বলেন, ‘আইয়্যামাম মাদূদাত’ এ বাক্যটি ছিল সংক্ষিপ্ত। তারই ব্যাখ্যা করা হয়েছে উল্লিখিত আয়াতে। এ মাসটির অন্যতম ফজিলত হলোÑ ‘একে আল্লাহপাক স্বীয় ওহি এবং আসমানি কিতাব নাজিল করার জন্য নির্বাচিত করেছেন। সুতরাং রমজান মাসই হচ্ছে কোরআন নাজিলের মাস। পবিত্র কোরআনের ৩০নং পারার সুরা কদরে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, “নিশ্চয় আমি তা নাজিল করেছি কদরের রাতে”। আর কদরের রাত হলো রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত। উপরোল্লিখিত আয়াতের ভাষ্যানুযায়ী বোঝা গেল যে, ‘রমজান কোরআন নাজিলের মাস’।
এ পর্যায়ে আমাদের করণীয় সম্পর্কে মুখতাসারভাবে আলোচনা করব, যা ভালোভাবে অনুধাবন করলে এ মাসের করণীয় কী তা বোঝা মুশকিল হবে না।
মুসলমান হিসেবে যেমন ইসলামী শিক্ষা অর্জন করা সবার ওপর ফরজ, ঠিক তেমনিভাবে মুসলমানিত্ব বজায় রেখে যুগ চাহিদার খোরাক জোগাতে কলেজ-ভার্সিটিতেও পড়া সওয়াবের কাজ। রমজান ছাড়া প্রায় এগারোটি মাস আমরা সবাই স্কুল-কলেজ, ভার্সিটির লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাই। কোরআন তেলাওয়াত বা কেরাত চর্চার তেমন একটা সুযোগ মেলে না। রমজান মাসে খোদার তরফ থেকে যে বরকত প্রদান করা হয় তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে কোরআন তেলাওয়াত : কোরআন তেলাওয়াত শিখা ফরজে কিফায়া আর তাজবিদ সহকারে তেলাওয়াত করা ফরজে আইন। আর এ ফরজে আইনের শিক্ষাকে অর্জন করলে বিশুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করা যাবে, আর অন্যকে শেখানোও সম্ভব হবে।
তাজবিদ সংকলনের প্রেক্ষাপট : কোরআন তেলাওয়াতে ভুল হওয়া এটা কোনো নতুন ব্যাপার নয়, বরং হযরত ফারুকে আযমের জামানায় এক গ্রাম্য ব্যক্তি লোকমহলে কোরআন ভুল পড়েছিল। ঘটনাটি হযরত উমর (রা.) জানতে পেরে তাকে ডেকে এনে ভুলটি শুধরিয়ে দেন।
লক্ষ্য করুন হাল জামানায় আমাদের চারদিকে আলিম-উলামা, মুফতি-মুহাদ্দিস, ইমাম-মুয়াজ্জিন বিশুদ্ধভাবে কোরআনের খেদমত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তা আমাদেরকে ফারুকে আযমের সেই যুগকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
বিশুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াতে যে কেমন সওয়াব তা আমাদের কারো অজানা নয়, তদুপরি স্মরণ করিয়ে দেয়াকে আমি ঈমানি দায়িত্ব মনে করি। কোরআন শিখা আর শিখানো যে কত মর্যাদা এবং ফজিলতের কাজ। এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি যে নিজে কোরআন শিখে আর অন্যকে শিখায়”। অন্য রেওয়ায়তে বর্ণিত আছে যে, “ কোরআন তেলাওয়াতই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত”। উপরোক্ত হাদিসের দ্বারা বিশুদ্ধ তেলাওয়াতই উদ্দেশ্য।
মোবারক এ মাহিনায় বেশি বেশি করে কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, তাহাজ্জুদ-নফল সালাত আদায় করা একান্ত জরুরি। আমাদের কি কারো ইচ্ছে করে না যে আমিই সর্বোত্তম ব্যক্তি বিবেচিত হই। আর তা ঠিক তখনই সম্ভব হবে যখন নিজে বিশুদ্ধভাবে কোরআন শিখে অন্যকে শিখাব।
কোরআন নাজিলের এই মাসে পুণ্যভূমি সিলেটসহ সারা দেশে ‘মাদানিয়া কোরআন শিক্ষা বোর্ড, আঞ্জুমানে তালিমুল কোরআন, ফুলতলি কোরআন শিক্ষা ট্রাস্ট, কোরআন শিক্ষা পরিষদসহ আরো অনেক বোর্ডের অধীনে দিবানিশি সহিহ-শুদ্ধভাবে কোরআন প্রশিক্ষণের দারস চলে। এ ছাড়াও প্রতিটি গ্রাম-গঞ্জে, শহর-বন্দরের আনাচে-কানাচে কোরআন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।
আমাদের সিলেট শহরে ‘সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি ওয়ার্ডের মসজিদে কোরআন প্রশিক্ষণের যে ব্যবস্থা করা হয় তা সত্যিই কোরআন প্রেমের উজ্জ্বল নিদর্শন।
অতএব; আমাদের করণীয় হবে, আমরা নিজে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হাজির হয়ে এবং নিজ জিম্মায় নিজেদের ছেলেমেয়ে, ভাইবোন নিকটাত্মীয়দের পাঠিয়ে আল-কোরআনের মহান শিক্ষা অর্জন করে দুনিয়া ও আখেরাতের অফুরন্ত নেয়ামত এবং অশেষ কামিয়াবি হাসিল করুন।
আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে ভালো কাজে প্রতিযোগিতা করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : প্রাবন্ধিক, শিক্ষক, জামিয়া লুগাতিল আরাবিয়া, উপশহর সিলেট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রমজান কোরআন নাজিলের মাস ও আমাদের করণীয়
আরও পড়ুন