Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত

মুফতী ইমাদুদ্দীন | প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০১৯, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:০৪ এএম, ২৭ জুলাই, ২০১৯

ইবাদতের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত কোরআনুল কারীম তেলাওয়াত। (সহীহ বুখারী)। কোরআনুল কারীমের এক আয়াতের তেলাওয়াত একশত রাকাত নফল নামাযের চেয়ে উত্তম। (সুনানে ইবনে মাজাহ)। হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে, যে ঘরে কোরআন তেলাওয়াত হয় সে ঘরে আল্লাহ তাআলা অনেক কল্যাণ ও বরকত নাযিল করেন। যে ঘরে কোরআন তেলাওয়াত হয় না সে ঘরে কল্যাণ ও বরকত নাযিল হয় না। -মুসনাদে বাযযার
অন্য এক হাদীসে আছে, কোরআন তেলাওয়াতকারী প্রতি হরফে দশটি করে নেকী পায়। আমি এ কথা বলছি না যে, আলিফ-লাম-মীম সবগুলো মিলে এক হরফ; বরং আলিফ এক হরফ, লাম এক হরফ, মীম আরেক হরফ। -সুনানে দারেমী, ফাযায়েলে আ’মাল

আরেক হাদীসে আছে, যে অন্তরে কোরআনের কিছু অংশও নেই সে অন্তর যেন অনাবাদ ঘর। -সুনানে দারেমী, ফাযায়েলে আ’মাল
কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত সম্পর্কীয় আরও অনেক হাদীস আছে। বিস্তারিত ফজিলত জানতে চাইলে ফাযায়েলে কোরআন পড়–ন। কোরআন তেলাওয়াতের এত ফযীলত থাকতে আমরা কোরআন বাদ দিয়ে অন্যান্য যিকিরকে অযীফা বানিয়ে নিয়েছি। কোরআন তেলাওয়াত জানি না বা তেলাওয়াত করলাম না এর জন্য কোনো দুঃখ হয় না। কিন্তু যিকির ছুটে গেলে আফসোসের অন্ত থাকে না।

কোরআনের অর্থ বোঝাও জরুরি: কোরআনুল কারীমের অনেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা কোরআন বুঝে কোরআন সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করার জন্য সমগ্র মানবকুলকে আহ্বান জানিয়েছেন। এসব আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয়, প্রতিটি মানুষ কোরআনের ওপর গভীর চিন্তা-গবেষণা করুক এটাই কোরআনের দাবি। কাজেই কোরআন সম্পর্কিত চিন্তা-গবেষণা কিংবা পর্যালোচনা করা শুধু আলেম, ইমাম, মুজতাহিদগণেরই একক কাজ নয়, বরং তা সকল মুসলমানের কাজ।

অবশ্য জ্ঞান-বুদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ের মতোই চিন্তা-গবেষণা এবং পর্যালোচনারও বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে। ইমাম, মুজতাহিদগণ গবেষণা করে একটি আয়াত থেকে বহু মাসআলা উদ্ভাবন করবেন। ওলামায়ে কেরাম চিন্তা-গবেষণা করে এসব বিষয় উপলব্ধি করবেন। আর সাধারণ মুসলমানগণ নিজের ভাষায় কোরআনের তরজমা অনুবাদ পড়ে তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবেন। তাতে মনের ভেতর আল্লাহ তাআলার মহত্ত¡ ও বড়ত্বের উপলব্ধি এবং তাঁর প্রতি গভীর ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। এটাই হলো সফলতার মূল চাবি-কাঠি।

সাধারণ মুসলমানের জন্য ভুল বোঝাবুঝি ও বিভ্রান্তি থেকে মুক্তি লাভ করার জন্য পর্যায়ক্রমে কোনো বিজ্ঞ আলেমের কাছে কোরআন পাঠ করা উত্তম। তা সম্ভব না হলে কোনো নির্ভরযোগ্য তাফসীর অধ্যয়ন করবে। কোনো জটিলতা বা সংশয় দেখা দিলে নিজের মনমতো কোনো সমাধান করবে না; বরং বিজ্ঞ কোনো আলেমের সাহায্য নেবে।-মাআরেফুল কোরআন : ২৬৮
কোরআন বোঝা জরুরি: যে মুসলমান আপাতত কোরআনের অর্থ না বুঝেও তেলাওয়াত করে সে শব্দের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে না। তবে অর্থ বোঝার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখা জরুরি। যাতে প্রতিটি মুসলমান কোরআনের সত্যিকার নূর ও বরকত প্রত্যক্ষ করতে পারে এবং কোরআন অবতরণের আসল উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারে। মাআযাল্লাহ, কোরআনকে তন্ত্র-মন্ত্র মনে করে কেবল ঝাড়-ফুঁকে ব্যবহার করা একেবারেই অনুচিত।

না বুঝে তেলাওয়াত করলেও সওয়াব হয়: নিঃসন্দেহে কোরআনের অর্থ বোঝার গুরুত্ব অপরিসীম। এর অর্থ এই নয়, না বুঝে পড়লে কোনো সওয়াব নেই। কারণ, কোরআন দুনিয়ার আর সব গ্রন্থের মতো নয়- কোরআনের অর্থ যেমন উদ্দেশ্য তেমনি শব্দও একটি বড় উদ্দেশ্য। কোরআনের অর্থের যথাযথ হেফাযত ও সংরক্ষণ যেমন অতীব জরুরি এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তেমনি এর শব্দের হেফাযত ও সংরক্ষণও জরুরি। কেননা, কোরআনের শব্দের সাথেও বিশেষ বিশেষ বিধি-বিধান সম্পৃক্ত রয়েছে। শব্দের যথাযথ হেফাজতের জন্যই হলো তেলাওয়াত।
হাদীসে তেলাওয়াতেরও অনেক সওয়াব বর্ণিত হয়েছে। তাই তো সাহাবায়ে কেরাম কোরআন অনুযায়ী আমল করার জন্য একবার বুঝে বুঝে পড়ে নেওয়াই যথেষ্ট হওয়া সত্তে¡ও সারাজীবন তেলাওয়াতকে অন্ধের যষ্টি মনে করতেন। কোনো কোনো সাহাবী প্রতিদিন এক খতম তেলাওয়াত করতেন। আবার কেউ দু-দিনে, তিনদিনেও খতম করায় অভ্যস্ত ছিলেন। সপ্তাহে এক খতম করার রীতি তো সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে ব্যাপকভাবেই প্রচলিত ছিল। আর বছরে একবার করে খতম করতে না পারা তো ছিল একান্তই দুর্ভাগ্যের লক্ষণ। এসব আলোচনা থেকে এ কথাই সুস্পষ্ট যে, কোরআনের ব্যাপারে এ কথা বলা একেবারেই সঙ্গত নয়, অর্থ না বুঝে তোতা পাখির মতো শব্দ পাঠ করা নিরর্থক।

আমাদের দেশের কথিত কিছু ইসলামী চিন্তাবিদ কোরআনকে অন্যান্য গ্রন্থের সঙ্গে তুলনা করে দাবি করেন, না বুঝে কোনো গ্রন্থের শব্দাবলি পড়া ও পড়ানো একেবারেই নিরর্থক ও বৃথা কালক্ষেপণ বৈ কিছুই নয়। কোরআন সম্পর্কে তাদের এই ধারণা নিতান্তই ভুল। কারণ, শব্দ ও অর্থ উভয়টির সমন্বিত আসমানীগ্রন্থের নামই কোরআন। কোরআনের অর্থ বোঝা ও তার বিধি-বিধান পালন করা যেমন ফরয ও উচ্চস্তরের ইবাদত, তেমনিভাবে তার শব্দ তেলাওয়াত করাও একটি স্বতন্ত্র ইবাদত ও সওয়াবের কাজ। -মাআরেফুল কোরআন : ৬৪



 

Show all comments
  • তাইজুল ২৭ জুলাই, ২০১৯, ২:৪৪ এএম says : 0
    কোরআন তেলাওয়াত সব ইমানদারের সব সময়ের আমল। তবে রমজান মাসে এর গুরুত্ব আরও বেশি। কারণ এ মাসেই নাজিল করা হয়েছে মহিমান্বিত গ্রন্থ আল কোরআন।
    Total Reply(0) Reply
  • সাইমন ২৭ জুলাই, ২০১৯, ২:৪৪ এএম says : 0
    মহান আল্লাহ বলেন, ‘রমজান মাস, যে মাসে কোরআন নাজিল করা হয়েছে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)। সাহাবায়ে কিরাম, তাবেয়িন ও বুজুর্গানে দীন সবাই রমজান মাসে তেলাওয়াতের বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • মাহিন আদনান ২৭ জুলাই, ২০১৯, ২:৪৫ এএম says : 0
    কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত অফুরন্ত। এ সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস রয়েছে। উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ওই ব্যক্তি, যে নিজে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।’ (বুখারি)।
    Total Reply(0) Reply
  • বাহারুল ২৭ জুলাই, ২০১৯, ২:৪৫ এএম says : 0
    কোরআনের বেশি বেশি তেলাওয়াত, হিফজ ও গভীর ধ্যানের মাধ্যমে কোরআন তেলাওয়াত শ্রবণ করা, আর গভীরভাবে চিন্তা করা আমাদের অবশ্যই কর্তব্য।
    Total Reply(0) Reply
  • taijul Islam ২৭ জুলাই, ২০১৯, ৯:০৭ এএম says : 0
    কোরআন তেলাওয়াত সব ইমানদারের সব সময়ের আমল। তবে রমজান মাসে এর গুরুত্ব আরও বেশি। কারণ এ মাসেই নাজিল করা হয়েছে মহিমান্বিত গ্রন্থ আল কোরআন।
    Total Reply(0) Reply
  • taijul Islam ২৭ জুলাই, ২০১৯, ৯:০৮ এএম says : 0
    কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত অফুরন্ত। এ সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস রয়েছে। উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ওই ব্যক্তি, যে নিজে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।’ (বুখারি)।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Abdullah ২৭ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৮ পিএম says : 0
    I want reference with Hadith Number It will be help me
    Total Reply(0) Reply
  • শাহ আলম ১৯ মে, ২০২০, ৪:৩৪ এএম says : 0
    1966-1967 সনে নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন গ্রামের মৌলবীর নিকট কোরআন এর হাতে খড়ি। তখন দু একবার খতম করেছি। তারপর দীর্ঘদিন বিভিন্ন অজুহাত শয়তানের ধোকা অলশতায় আর কোরআন পাঠ হয়নি মনে মনে ভেবেছি কোরআন পাঠ অক্ষর জ্ঞান ভুলে গিয়েছি তাই কোরআন পাঠ আর হবে না। অজিফার দু চারটি ছুরাই শেষ সম্পদ ভেবে অন্তত অবসর জীবনের সঙ্গী করে চলছিলাম। তবে বিগত বৎসর দুই অতি সাহস করে শুরু করে দেখলাম অন্তত পাঠ করতে পারি হয়ত একজন আলেম কারী হাফেজদের মত সম্পূর্ন ব্যাকারন ভিত্তিক না হলেও পঠন যোগ্য।ভুল হতে পারে তবে নিয়মিত পাঠে উন্নীত হচ্ছে। মনে বাসা বেধেছে নিয়মিত সকালে কোরআন পাঠ করতে হবে। প্রতি ঘনটায় এক পাড়া পড়ার। দোয়া প্রাথী। মন আরও যা চায় তা এ বয়সে ধারন করা সন্ভব না। সে ধৈর্য শ্রৃতিশক্তি আর নেই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন