Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমশ শুকিয়ে আসছে চীনা অর্থ প্রবাহ

বাণিজ্য যুদ্ধের পরিণতি-১

নিউ ইয়র্ক টাইমস | প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১২:০০ এএম

চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অবিশ্বাস আমেরিকায় এক সময়কার চীনা অর্থের অবিরাম প্রবাহ মন্থর করে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর চীনা বিনিয়োগ প্রায় ৯০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
এর পরিণতি ব্যাপক ভাবে অনুভ‚ত হচ্ছে গোটা অর্থনীতিতে। যার কারণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিয়ন্ত্রক পরীক্ষা ও চীনা বিনিয়োগের প্রতি কম বন্ধুসুলভ পরিবেশ। পাশাপাশি বিদেশি ব্যয়ের ব্যাপারে বেইজিংয়ের কঠোর সীমাবদ্ধতা। এটা শিল্পের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এর মধ্যে রয়েছে সিলিকন ভ্যালি স্টার্টআপস, দ্য ম্যানহাটান রিয়েল এস্টেট মার্কেট ও অঙ্গরাজ্য সরকারগুলো যারা বছরের পর বছর চীনা বিনিয়োগ আকাক্সক্ষা করেছে। এখন পরিস্থিতি এটাই প্রদর্শন করছে যে কিভাবে বিশে^র দুই বৃহত্তম অর্থনীতি কয়েক বছরের ক্রমর্ধমান হৃদ্যতার পর এখন দূরে সরে যেতে শুরু করেছে।

আইএমএফ’র চায়না বিভাগের সাবেক প্রধান ঈশ্বর প্রসাদ বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ এত দ্রুত কমে যাওয়ার ব্যাপারটি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কের কত খারাপ ভাবে অবনতি ঘটেছে তারই প্রতীকী রূপ। যুক্তরাষ্ট্র এখন চীনাদের বিশ্বাস করে না। আবার চীনও যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বাস করে না।

কয়েক বছর অটো. টেক, এনার্জি, কৃষি খাতে অর্থ বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা বিনিয়োগ বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে মিশিগান, সাউথ ক্যারোলিনা, মিসৌরি, টেক্সাস ও অন্যন্য অঙ্গরাজ্যে নতুন নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। চীনের অর্থনৈতিক বিস্ফোরণের সাথে সাথে আমেরিকান কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় সরকারগুলো ওই চীনা তহবিলের কিছুটা সংগ্রহে দৃষ্টি দেয়। কিন্তু ট্রাম্পের অর্থনৈতিক ঠান্ডা লড়াই এই ধারাটিকে উল্টে দিতে সাহায্য করেছে।

অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রোডিয়াম গ্রুপের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রে চীনা বিনিয়োগের সর্বোচ্চ বছর ছিল ২০১৬ সাল। পরিমাণ ছিল ৪৬.৫ বিলিয়ন ডলার। গত বছর সে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫.৪ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রাথমিক হিসেবে দেখা যায়, যা শুধু চীনের মূল ভূখন্ডের কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগের হিসাব। গত বছরের চেয়ে সামান্য বেশি বিনিয়োগ হয়েছে অর্থাৎ ২.৮ বিলিয়ন ডলার।

বিদেশি বিনিয়োগ পর্যালোচনা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বেকার ম্যাকেঞ্জির আইনজীবী রড হান্টার বলেন, বিনিয়োগকারীদের সাথে আলোচনায় মার্কিন বাজার এখনো খোলা আছে কিনা তা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ দেখেছি। চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য সম্ভবত আপনাদের মধ্যে শৈত্য প্রভাব কাজ করছে।

বাণিজ্য, সংযুক্তি ও অধিগ্রহণ উপদেষ্টার মতে, শক্তির একটি সম্মিলন মনে হয় অপেক্ষমান। চীনে মন্থর অর্থনীতি ও কঠোরতর পুঁজি নিয়ন্ত্রণ চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য আমেরিকান কিছু কেনা অধিকতর কঠিন করে তুলেছে। চীনা পণ্যের উপর শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপের ট্রাম্পের ইচ্ছা এবং একটি ক্রমবর্ধমান শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক গ্রুপ যা কঠিন ভাবে বিদেশি বিনিয়োগ যাচাই বাছাই করবে। বিশেষ করে চীনা বিনিয়োগকারীদের উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের শঙ্কিত করে তুলেছে।

আমেরিকার পণ্যের উপর পাল্টা শুল্ক আরোপকারী চীন এখন বিনিয়োগ বন্ধ করে দিয়ে ট্রাম্পের অর্থনৈতিক দমনের প্রতিশোধ নিতে পারে। চীনা বিনিয়োগের ব্যাপারে আমেরিকার মতামত গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে উদ্বেগের অবনতি ঘটে। তালগোল পাকানো লেনদেনের কারণে যা যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক বিনিয়োগ কমিটির মারাত্মক যাচাই-বাছাইয়ের ফলে ভেঙে পড়ে। অর্থ বিভাগ পরিচালিত গ্রুপটি ২০১৮ সালে সম্প্রসারিত ক্ষমতা লাভ করে। যা গ্রুপটিকে টেলিকম্যুনিকেশনস ও কমপিউটিং-এর মত সংবেদনশীল প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ ও মাইনরিটি স্টেকসসহ লেনদেনের বৃহত্তর ক্ষেত্র বন্ধ করে দেয়ার ক্ষমতা প্রদান করে।

নতুন বছরের অব্যবহিত পরই চীনের এইচএনএ গ্রুপ ম্যানহাটানের গ্লাস ও অ্যালূুমিনিয়ামের একটি বহুতল ভবনের জন্য ৪১ মিলিয়ন ডলার ক্ষতির শিকার হয়। নিরাপত্তা উদ্বেগের জন্য আমেরিকান নিয়ন্ত্রকরা এই সম্পত্তি বিক্রি করতে তাদের বাধ্য করেন। কারণ এটির অবস্থান ছিলে ট্রাম্প টাওয়ারের সন্নিকটে, মাত্র কয়েকটি ব্লক দূরে।
মার্চে গ্রিন্ডর নামে একটি গে ডেটিং অ্যাপকে নিয়ন্ত্রকেরা বলেন যে তারা যেন কোম্পানির জন্য ক্রেতা খুঁজে বের করেন। ট্রাম্প প্রশাসন আশঙ্কা করেছিল যে বেইজিং ব্যক্তিগত তথ্য আমেরিকান কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সুবিধা আদায়ে ব্যবহার করতে পারে।

এ ঘটনাগুলো ঘটে ট্রাম্পের আমলে আগে সঙ্ঘটিত কয়েকটি বিশেষ ঘটনার পর। যেমন গত বছর কোয়ালকমের জন্য ব্রডকমের কোয়াশড বিড এবং চীনা ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবার একটি ইউনিটের কাছে মানিগ্রাম বিক্রি। ল্যাটিস সেমিকন্ডাক্টর এবং চীন সরকারের সাথে সম্পর্ক আছে বলে কথিত একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি চুক্তি বাতিল করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শীতলতা থেকে আমেরিকান কোম্পানিগুলো লাভবান হয়েছে। জুনে ‘ইউনাইটেডহেলথ’ হেলথ কেয়ার স্টার্টআপস ‘প্যাশেন্টসলাইকসমি’ কেনে যখন কমিটি এ কথা বলে যে স্বাস্থ্য তথ্যে চীনা মালিকের প্রবেশাধিকার প্রদান একটি নিরাপত্তা ঝুঁকি। ক্রয়মূল্য আজো প্রকাশ করা হয়নি।

কিন্তু ক্রমবর্ধমান তদন্ত চীনা বিনিয়োগকারীদের সাথে আমেরিকার শিল্পগুলোর দলবদ্ধ হওয়ার প্রচেষ্টা জটিল করে তুলছে এবং কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যয় সঙ্কোচের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রিয়েল এস্টেট সেক্টরটি বিগত দশকে চীনা বিনিয়োগকারীদের দ্বারা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হওয়ার কারণে এবং চীনা কর্মকর্তারা বিদেশি রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় তাতে চরম দুরবস্থা বিরাজ করছে।

মে মাসে এক রিপোর্টে কুশম্যান অ্যান্ড ওয়েকফিল্ড যুক্তরাষ্ট্রে চীনা বাণিজ্যিক রিয়েল এ্যাস্টেট বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ‘উন্মত্ত নিষ্পত্তি কর্মকান্ডের’ উল্লেখ করেছে। ২০১৮ সালে চীনা ক্রেতারা ২.৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ৩৭টি সম্পত্তি অধিগ্রহণ করেন। কিন্তু কমার্শিয়াল রিয়েল এস্টেটের বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩.১ বিলিয়ন ডলার। রিপোর্টে বলা হয়, এইচএনএর আচরণ এবং কঠোর বাণিজ্য আলোচনা চীনা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অবাঞ্ছিত উপলব্ধি সৃষ্টি করে। (আগামীকাল শেষ পর্ব)



 

Show all comments
  • Rajan Nath Rajan ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:৪৭ এএম says : 0
    চীনের পণ্য বর্জন করা উচিত কারণ তাদের প্রডাক্ট সবগুলো বাজে একদম বাজে চায়না একবার হারিয়ে ফেললে তা আর খুঁজে পাওয়া যায় না
    Total Reply(0) Reply
  • Abid Hassan ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:৪৭ এএম says : 0
    বাংলাদেশ যদি পারমাণবিক বালিশ রপ্তানি শুরু করে,১ দশকের মধ্যে তারা আমেরিকা,চীন সিংগাপুরের লেভেলে চলে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Saifur Sumon ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:৪৮ এএম says : 0
    Come to Bangladesh, donald trump & as well as like Bangladeshi garments
    Total Reply(0) Reply
  • M Abdullah Khan ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:৪৮ এএম says : 0
    চীন এবং রাশিয়া এই দুই দেশ শয়তানের দুই শিং। তলে তলে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা গনহত্যায় ইন্দন দিয়ে যাচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Foysal Sheikh ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:৪৮ এএম says : 0
    Come in Bangladesh
    Total Reply(0) Reply
  • বাবুল ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:৫০ এএম says : 0
    ‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍ আমার মনে হয় চিনের সিদ্ধান্ত সঠিক এতে করে বাংলাদেশের মতো ছোট দেশ গুলো বেশি লাভবান হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Md Golam Saklain ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১:৫০ এএম says : 0
    গত দশ বছরে, চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্র এর চেয়ে ৭ গুন বেশি হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • ash ২৫ জুলাই, ২০১৯, ৫:৩৩ এএম says : 0
    BANGLADESH AI SHUJOGTAKE TEMON KAJE LAGATE PARCHE NA, KINTU VIETNAM PUROPURI KAJE LAGACHE
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ