বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
যাদুর দ্বারা কোনো কোনো সময় বস্তুর আসল রূপ বা মৌলিক আকৃতি পরিবর্তিত হতে দেখা যায়। যেমন- হাঁস, মুরগি, কবুতর, বিড়ালকে পাথর বা অন্য কোনো প্রাণীকে রূপান্তরিত করা ইত্যাদি। আসলে এই ব্যাপারটি শুধু নজরবন্দি পর্যায়ের হয়ে থাকে। যাদুকর লোকদের চোখে এমনি একটি প্রভাব ফেলে যে, মানুষ অনুপস্থিত বস্তুকে উপস্থিত; অস্তিত্বহীন বস্তুকে অস্তিত্বসম্পন্ন মনে করে আর এটাকেই বাস্তব রূপ বলে ধারণা করে। আবার যাদুকর কখনো কখনো কাল্পনিক ক্ষমতার দ্বারা উপস্থিত মানুষের মন মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। যার ফলে যা অনুভবযোগ্য নয় এমন বস্তুকে অনুভবযোগ্য বলে খেয়াল করতে থাকে।
এ প্রসঙ্গে আল্লামা বাগাভী রহ. সংক্ষেপে যা উল্লেখ করেছেন, তা খুবই প্রণিধানযোগ্য। তিনি উল্লেখ করেছেন, বলা হয়ে থাকে যে, কোনোও প্রাণীর অন্তরে প্রভাব ফেলে যাদুকর ছাগলকে গাধার রূপে, গাধাকে কুকুরের রূপে পরিবর্তিত আকারে দেখাতে পারে, এটাকে সম্মোহন বলে। তবে অধিকতর সঠিক কথা হলো এই যে, এ সবই কল্পনার সাথে সংশ্লিষ্ট। বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক এখানে নেই। (তাফসিরে বাগাভী : খন্ড ১, পৃ. ৯৯)।
যাদু ও দৃষ্টি দোষ বা দৃষ্টি বিভ্রাট সত্য। এর দ্বারা আকস্মাৎ মৃত্যু পর্যন্ত সংঘটিত হতে পারে। যাদুর প্রভাবে সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। যাদু মানুষের অন্তরে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে তার মানসিক ঝোক পরিবর্তন করে দিতে পারে। এমন কি কোনো দুষ্টু যাদুকর যাদুর দ্বারা অন্যকে হত্যা করতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। এর বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আল্লামা বাগাভী রহ. বলেছেন, বিশুদ্ধ কথা হলো এই যে, সিহির বা যাদু মূলত তামার ওপর স্বর্ণের ভুয়া রং তুল্য প্রতারণা ও ফাঁকিবাজি কারবার। ধোকা দেয়া, কল্পনায় প্রভাব ফেলে বিভ্রন্ত করাই এর আসল উদ্দেশ্য।
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের অভিমত হলো এই যে, যাদুর অস্তিত্ব আছে। জমহুর উম্মত ও অভিমতই পোষণ করেন। কিন্তু যাদুর আমল করা আন্যের ওপর যাদু করা কুফুরি কর্ম। যা নির্ঘাত হারাম! হারাম!! হারাম। যারা এই কুফুরি কর্মে পরিলিপ্ত তারা আদৌ ঈমানদারদের পর্যায়ভুক্ত নয়।
এ প্রসঙ্গে ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেছেন, যাদু কল্পনায় প্রভাব বিস্তার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে, প্রতারণা করে ও অুসস্থ করে তোলে। এমন কি কোনো কোনো সময় মৃত্যুর মুখেও ঠেলে দেয়। (তাফসিরে বাগাভী : খন্ড ১, পৃ. ৯৯)।
যাদুর কতিপয় কুফুরি বাক্য খুবই ক্রিয়াশীল। অনেক সময় মানুষ যাদুর কুফুরি বাক্যের প্রভাবেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ প্রসঙ্গে আল্লামা বাগাভী লেখেন, যাদুর কুফুরি বাক্যের প্রভাবে কিছু লোক মৃত্যুর মুখোমুখিও হয়েছে। যাদুর কিছু মন্ত্র এমনও আছে, যা সংক্রামক ব্যাধির মত মানুষের দেহে দারুণভাবে প্রভাব বিস্তার করে।
আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যাদুকর বা তাদের যাদুর প্রভাব অন্যের প্রতি বিস্তার করে।’ এতে করে যাদু দেহের ওপর রোগ-ব্যাধি, মস্তিষ্ক বিকৃতি ইত্যাদিরূপে ক্রিয়া করে। দেহ ও মনের ওপর যাদুর কথা বা মন্ত্রের তাছির ও প্রভাব পড়ে। মানুষ কখনো অনাকাক্সিক্ষত কিছু শুনে জরাক্রান্ত হয়ে পড়ে। কিছু কিছু লোক তাদের শ্রুত কথার ধাক্কায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে বলেও জানা যায়। সুতরাং যাদু এমন এক অদৃশ্য বস্তু ও সংক্রামক রোগস্বরূপ যা মানব দেহে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে থাকে। (তাফসীরে বাগাভী : খন্ড ১, পৃ. ৯৯)।
নবী ও রাসূলগণের ওপরও যাদু করা যায়। নবী ও রাসূলগণের ওপরও যাদু ক্রিয়া করতে ও প্রভাব বিস্তার করতে পারে। কারণ যাদু তো গুপ্ত ও গোপন কার্য কারণের আছর। আর কোনো কার্য কারণের প্রভাব প্রভাবিত হওয়া নবী ও রাসূলগণের পদ মর্যাদা ও শানের প্রতিবন্ধক নয়। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ওপর ইয়াহুদী মহিলা কর্তৃক যাদু করা, তার ওপর যাদুর আছর প্রকাশ পাওয়া, ওহীর মাধ্যমে তাকে এ বিষয়ে অবহিতকরণ, যাদুর ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া বিনষ্ট করার নীতি পদ্ধতি তাকে অবহিতকরণ ইত্যাদি বিষয় বিশুদ্ধ হাদীসসমূহে বিবৃত হয়েছে।
আর যাদুকরদের যাদুর দ্বারা প্রথম পর্যায়ে হযরত মূসা (আ.)-এর প্রভাবিত ও ভীত হওয়ার বর্ণনা কোরআনুল কারীমে বিদ্যমান আছে। সূরা ত্বাহা এর ৬৬-৬৮ নং আয়াতে এবং রাসূলুল্লাহ সা. কে ইয়াহুদী কর্তৃক যাদু করার ঘটনাটি আয়েশা (রা.)-এর বর্ণিত দীর্ঘ হাদীস সহীহ বুখারীর ১ম খন্ডে ৮৫৮ পৃষ্ঠায় সন্নিবেশিত হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।