Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

‘কাশ্মির সমস্যা সমাধানে ট্রাম্পের মধ্যস্থতা চেয়েছেন মোদি’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাত হয়েছে সফররত পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের। সোমবার ওই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন ইস্যুসহ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সবচেয়ে বিরোধপূর্ণ কাশ্মির সমস্যা সমাধানের প্রসঙ্গ উঠে আসে। এ নিয়ে ট্রাম্প যে মন্তব্য করেছেন তাতে ভারতে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, কাশ্মির ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন যে বিরোধ আছে, তা সমাধানে মধ্যস্থতা করতে তাকে অনুরোধ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

তবে ট্রাম্পের এমন মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। ওই বক্তব্যকে দৃঢ়তার সঙ্গে অস্বীকার করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভিশ কুমার। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি ওই রকম অনুরোধ করেননি। দীর্ঘদিন ধরে কাশ্মিরকে দ্বিপক্ষীয় ইস্যু মনে করে ভারত। এতে তৃতীয় কোনো পক্ষের মধ্যস্থতা বা ভ‚মিকা থাকতে পারে না বলে মনে করে তারা। খবর টিওআই।

সোমবার ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তাকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন ট্রাম্প। এ সময় একজন সাংবাদিক কাশ্মির সমস্যা সমাধানের বিষয়ে প্রশ্ন করেন। এর জবাবে ট্রাম্প বলেন, জাপানের ওসাকায় জি২০ সামিটে মোদির সঙ্গে আমার সাক্ষাত হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এ সময়ে তিনি প্রকৃতপক্ষে আমাকে বলেছেন, আপনি কি এ ইস্যুতে মধ্যস্থতা বা সালিসদার হতে পছন্দ করেন? তার এ প্রশ্নের জবাবে আমি জানতে চেয়েছি, কোথায়? তিনি বলেছেন, ইস্যুটি হলো কাশ্মির। সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আরো বলেন, কাশ্মির ইস্যুটি অনেক অনেক বছর ধরে চলমান। তার কথা শেষ না হতেই ইমরান খান যোগ করেন, সত্তর বছরের সমস্যা এটি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, আমি মনে করি তারা (ভারত ও পাকিস্তান) এই সমস্যার সমাধান চায়। আমি মনে করি আপনারাও এ সমস্যার সমাধান দেখতে চান। যদি আমি সহায়তা করতে পারি, তাহলে মধ্যস্থতাকারী হতে পছন্দ করবো আমি। এটা হওয়া উচিত নয়, আমি বলতে চাই, এটা বিশ্বাস করা অসম্ভব যে, দুটি চমৎকার দেশ, যারা অত্যন্ত স্মার্ট, অত্যন্ত স্মার্ট নেতৃত্ব রয়েছে যেখানে, তারা এই সমস্যা সমাধান করতে পারে না। কিন্তু আপনারা যদি আমাকে মধ্যস্থতাকারী বা সালিসকারী হিসেবে চান তাহলে আমি তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করছি। এ সমস্যাটির সমাধান হওয়া উচিত। তিনি আমাকে একই কথা বলেছেন। তাই আমি মনে করি, এখানে করার কিছু আছে। তাই হতে পারে আমরা তার সঙ্গে কথা বলবো অথবা আমি তার সঙ্গে কথা বলবো। আমরা দেখবো এক্ষেত্রে আমরা কিছু করতে পারি কি-না। কারণ, আমি কাশ্মির সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছি। কাশ্মির একটি চমৎকার নাম। এটা হলো বিশ্বের সুন্দর জায়গাগুলোর অংশ। কিন্তু ঠিক সেখানে এই মুহ‚র্তে সর্বত্র শুধু বোমা আর বোমা। তারা বলছেন, আপনি সেখানকার যেখানেই যাবেন দেখবেন বোমা আর এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। এ অবস্থা অনেক বছর ধরে চলছে। এক্ষেত্রে যদি আমার কোনো সহায়তা প্রয়োজন হয় তাহলে আমাকে জানাবেন।

অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিশ্চিত করেছেন, কাশ্মির সমস্যা সমাধানে তারা তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ চান। তিনি বলেন, আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আহ্বানকরছি। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। ভারত উপমহাদেশে শান্তি আনার ক্ষেত্রে তিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে পারেন। আপনারা জানেন, ভারত উপমহাদেশে সোয়া একশ’ কোটির বেশি মানুষের বসবাস। তারা কাশ্মির ইস্যুর কাছে জিম্মি হয়ে আছেন। আমি মনে করি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে সবচেয়ে শক্তিধর রাষ্ট্র শুধু যুক্তরাষ্ট্রই পারে এই দুটি দেশকে (ভারত ও পাকিস্তান) একত্রিত করতে।

ইমরান খান আরো বলেন, আমার অবস্থান থেকে বলছি, আমরা আমাদের সর্বোত্তম চেষ্টা করেছি। আমরা আলোচনা শুরুর জন্য, আলোচনার মাধ্যমে আমাদের মতবিরোধ মিটিয়ে ফেলতে ভারতের প্রতি সবদিক দিয়ে আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমরা কোনো সাড়া পাইনি। তবে আমি আশা করি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই প্রক্রিয়াকে সামনে এগিয়ে নিতে পারবেন। প্রেসিডেন্ট, আমি আপনাকে বলছি, ঠিক এই মুহ‚র্তে আপনি যদি এই সমস্যা সমাধানের মধ্যস্থতা করেন এবং সমস্যার সমাধান করেন তাহলে শত কোটিরও বেশি মানুষের দোয়া, আশীর্বাদ পাবেন।

জি নিউজ লিখেছে, কাশ্মির সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মধ্যস্থতা করার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে যে আহ্বান জানিয়েছেন বলে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের সেই বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভিশ কুমার এ নিয়ে সিরিজ টুইট করেছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য আমরা দেখেছি। তিনি বলেছেন, কাশ্মির ইস্যুতে যদি ভারত ও পাকিস্তান তাকে অনুরোধ করে তাহলে তিনি মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে এমন অনুরোধ করেননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারত এ বিষয়ে দৃঢ় অবস্থানে। তারা মনে করে, পাকিস্তানের সঙ্গে সব ইস্যুর সমাধান হতে হবে শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে। পাকিস্তানের সঙ্গে যেকোনো বিষয়ে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে আগে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস বন্ধ হতে হবে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে করার কথা বলা হয়েছে শিমলা চুক্তি ও লাহোর ঘোষণায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ