বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইসলামের মূল স্তম্ভসমূহের পঞ্চমটি হলো হজে বায়তুল্লাহ। ঈমান, নামাজ, জাকাত ও রোজার পরই হজের অবস্থান। হজ মূলত কায়িক ও আর্থিক উভয়ের সমন্বিত একটি ইবাদত। তাই উভয় দিক থেকে সামর্থ্যবান মুসলিমের ওপর হজ পালন করা ফরজ। অর্থাৎ হজ আদায়ে সক্ষম এমন শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচাপাতি ও আসবাবপত্রের অতিরিক্ত হজে যাওয়া-আসার ব্যয় এবং হজ আদায়কালীন সাংসারিক ব্যয় নির্বাহে সক্ষম, এমন সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর হজ আদায় করা ফরজ। হজ প্রত্যেক মুসলমানের ওপর সারা জীবনে একবারই ফরজ হয়। একবার ফরজ হজ আদায়ের পর পরবর্তী হজগুলো নফল হিসেবে গণ্য হবে।
এ সম্পর্কে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, হে মানব সকল! আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ওপর হজ ফরজ করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ করো।
এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! প্রতি বছর কি হজ করতে হবে? তিনি চুপ রইলেন এবং লোকটি এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস করল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে তা (প্রতি বছর হজ করা) ফরজ হয়ে যেত, কিন্তু তোমাদের পক্ষে তা করা সম্ভব হতো না। - সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৩৩৭ (৪১২)।
ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত অনুরূপ হাদিসে আরো বলা হয়েছে, হজ (ফরজ) হলো একবার। এরপরে যে অতিরিক্ত আদায় করবে তা নফল হিসেবে গণ্য। - সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৭২১।
হজ যেহেতু একবারই ফরজ, তাই যার ওপর হজ ফরজ হয়েছে সে যদি মৃত্যুর আগে যেকোনো বছর হজ আদায় করে, তবে তার ফরজ আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু হজ বিধানের মৌলিক তাৎপর্য, তার যথার্থ দাবি ও আসল হুকুম হচ্ছে হজ ফরজ হওয়ার সাথে সাথে আদায় করা। বিনা ওজরে বিলম্ব না করা। কারণ, বিনা ওজরে বিলম্ব করাও গুনাহ।
আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসূল ফরজ হজ আদায়ের প্রতি এমনভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন, কেউ যদি এই হজকে অস্বীকার করে বা এ বিষয়ে কোনো ধরনের অবহেলা প্রদর্শন করে, তবে সে আল্লাহর জিম্মা থেকে মুক্ত ও হতভাগ্যরূপে বিবেচিত হবে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বায়তুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের ওপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ করা ফরজ। আর কেউ যদি অস্বীকার করে তাহলে তোমাদের জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিজগতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন।’ সূরা আলে ইমরান : ৯৭।
তা ছাড়া যেকোনো ধরনের বিপদ-আপদ, অসুখ-বিসুখের সম্মুখীন হওয়া বা মৃত্যুর ডাক এসে যাওয়া তো অস্বাভাবিক নয়। তাই হজ ফরজ হওয়ার পর বিলম্ব করলে পরে সামর্থ্য হারিয়ে ফেললে বা মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ তায়ালার নিকট অপরাধী হিসেবেই তাকে হাজির হতে হবে। এ জন্যই হাদিস শরীফে হজ ফরজ হওয়া মাত্র আদায় করার তাগিদ ও হুকুম দেয়া হয়েছে।
ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি হজ করার ইচ্ছে করে, সে যেন তাড়াতাড়ি তা আদায় করে নেয়। কারণ, যেকোনো সময় সে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে বা বাহনের ব্যবস্থাও না থাকতে পারে অথবা অন্য কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। - সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৭৩২।
অন্য বর্ণনায় ইরশাদ হয়েছে, ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ফরজ হজ আদায়ে তোমরা বিলম্ব করো না। কারণ, তোমাদের কারো জানা নেই তোমাদের পরবর্তী জীবনে কী ঘটবে। - মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৮৬৭। উপরন্তু একটি হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ তায়ালা যে সচ্ছল সামর্থ্যবান ব্যক্তি সত্বর হজ আদায় করে না তাকে হতভাগা ও বঞ্চিত আখ্যায়িত করেছেন।
আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি আমার বান্দার শরীরকে সুস্থ রাখলাম, তার রিজিক ও আয়-উপার্জনে প্রশস্ততা দান করলাম। পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যদি সে আমার গৃহের হজের উদ্দেশ্যে আগমন না করে তবে সে হতভাগ্য, বঞ্চিত। - সহিহ ইবনে হিববান, হাদিস : ৩৬৯৫; তবারানী, হাদিস : ৪৯০।
শুধু তাই নয়, একসময় বায়তুল্লাহ উঠিয়ে নেয়া হলে মানুষ হজ করতে পারবে না এই আশঙ্কার কারণেও আল্লাহর রাসূল উম্মতকে তাড়াতাড়ি হজ করার হুকুম করেছেন। ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা হজ ও উমরার মাধ্যমে এই (বায়তুল্লাহ) গৃহের উপকার গ্রহণ করো। কেননা তা ইতিপূর্বে দুইবার ধ্বংস হয়েছে। তৃতীয়বারের পর উঠিয়ে নেয়া হবে। - মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস : ১৬৫২।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।