বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হযরত আবু হুরাইরা রা. প্রিয় নবীর বিখ্যাত সাহাবি। যাঁর নাম আমরা সবাই জানি। বিশেষ করে যারা হাদিস পড়েন, তারা এ নামটির সঙ্গে খুবই পরিচিত। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনা করেছেন। হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে প্রায় ৫৩৭৫টি হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
হযরত আবু হুরায়রা রা. ৭ম হিজরীতে মুসলমান হয়েছেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি দিন-রাত দরবারে নববীতে পড়ে থাকতেন। ক্ষুধা-অনাহারে কাতর হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতেন, তবুও এই ভেবে কোথাও যেতেন না- এ সময়ে যদি রাসূলের ওপর কোনো ওহি নাযিল হয় আর আমি তা শুনতে না পাই।
প্রথমে তাঁর অবস্থা এমন ছিল, যা শুনতেন ভুলে যেতেন। একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাজির হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি যা পড়ি তা ভুলে যাই। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু হুরায়রা রা.-কে বললেন, তোমার চাদরটি আমার সামনে মেলে ধরো। তিনি মেলে ধরলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের দুই হাত ভরে পানি নেয়ার মতো করে তা আবু হুরায়রা রা.-এর চাদরে ঢেলে দিলেন। যেন তিনি হাত ভরে কোনো কিছু নিয়ে তার চাদরে ঢাললেন। এরপর বললেন, আবু হুরায়রা, চাদরটি তোমার বুকে জড়িয়ে নাও। তিনি তা জড়িয়ে নিলেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, এরপর আমি কোনো কিছু ভুলিনি।- সহীহ বুখারী : ১১৯।
এটা ছিল ইলমের বরকত। হযরত আবু হুরায়রা রা. নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সোহবত ও সান্নিধ্য পেয়েছিলেন মাত্র আড়াই বছর বা তার কিছু কম-বেশি। এ অল্প সময়েই তিনি বহু হাদিস মুখস্থ করেছেন। অল্প সময়ের মেহনতে অনেক বেশি ফল পেয়েছেন।
এরপর এলো ওই দুঃখজনক দিন, যেদিন হযরত উসমান রা.-কে নির্মমভাবে শহীদ করা হয়েছিল। খলীফার শাহাদাতের খবর শুনে আবু হুরায়রা রা. অস্থির হয়ে ছুটে গেলেন উসমান রা.-এর ঘরের দিকে। বহুদিন ধরে কাঁধে ঝুলিয়ে রাখা থলের রশি নরম হয়ে গিয়েছিল। সেদিন আবু হুরায়রা রা.-এর অস্থির ছোটাছুটিতে তা ছিঁড়ে পড়ে যায়। তিনি ঝুলিটি কাঁধে না পেয়ে আরও বেশি পেরেশান হয়ে পড়লেন। মদিনার অলিগলিতে তালাশ করেও আর তা পেলেন না।
তিনি তখন এ ঝুলিটি তালাশ করতেন আর এ কবিতা আবৃত্তি করতেন, যার মর্মার্থ এই, আজ তো মানুষের দুঃখ ও বেদনা একটি, তা হলো উসমান রা.-এর শাহাদতবরণ। আর আমার দুঃখ ও বেদনা দু’টি, একটি হলো উসমান রা.-এর শাহাদতের বেদনা আর আরেকটি হলো বরকতময় খেজুরের থলেটি হারিয়ে যাওয়ার বেদনা।
এটা ছিল হযরত আবু হুরায়রা রা.-এর রিযিকের বরকত। অল্প কয়েকটি খেজুর তিনি প্রায় ২৬ বছর নিজে খেয়েছেন। অন্যদেরও খেতে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
তো আল্লাহ পাক যখন বরকত দেন তখন এমনই হয়ে থাকে। তাই বরকত অনেক বড় নেয়ামত। এ নেয়ামত সকলে লাভ করতে পারে না। আমাদের তো সকল প্রকার বরকত প্রয়োজন। হায়াত ও সময়ের বরকত, আমলের বরকত এবং ইলম ও রিযিকের বরকত। সবগুলোরই মুখাপেক্ষী আমরা। তাই এ বরকত লাভের জন্য আল্লাহ পাকের কাছে বেশি বেশি দোয়া করা প্রয়োজন। আমরা সব সময় দোয়া করব, আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের সর্বপ্রকার বরকত দান করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।