Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাঁচামরিচের ডাবল সেঞ্চুরি সবজির বাজারে আগুন

রাজধানীর কাঁচাবাজার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

সবজির বাজারে আগুন লেগেছে। রাজধানীর বাজারে বেড়েছে সব ধরণের সবজির দাম। এর মধ্যে কাঁচামরিচের ঝাল সবচেয়ে বেশি। সপ্তাহের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই মশলা জাতীয় পণ্যের দাম দ্বিগুনের বেশি বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে। একই সঙ্গে বেড়েছে শশাসহ বেশিরভাগ সবজির দাম।
এক সাপ্তাহ আগে হঠাৎ করে বৃদ্ধি পায় ডিম, পিঁয়াজ ও মাছের দাম। এ সাপ্তহে উচ্চমূল্যের বাজারে একটু স্বস্তি দিয়েছে ডিম, পিঁয়াজ ও মাছ। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম কমেছে ডজনে ১৫ টাকা, আর পিঁয়াজের দাম কমেছে ৫ টাকা। দীর্ঘদিন পর কমেছে বেশিরভাগ মাছের দাম। অপরিবর্তিত রয়েছে মাংসের দাম। তবে মুদিপণ্যের মধ্যে চিনির দাম ৫০-৫২ টাকা থেকে বেড়ে ৫৪ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ডাল, রসুন, আদার দাম বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর নয়াবাজার, রায়সাহেব বাজার, সূত্রাপুর বাজার, শ্যামবাজার, শান্তিনগর, যাত্রাবাড়ি, শনির আখড়া, সেগুনবাগিচা, ফকিরাপুলসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
দোকানীরাদের দাবি দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা ও টানা বৃষ্টির কারণে অনেক সবজির জমি নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে হঠাৎ করে কাঁচামরিচসহ অন্যান্য সবজির দাম এমন অস্বাভাবিক বেড়েছে। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ কার্যকরী বাজার তদারকি ব্যবস্থা না থাকায় হঠাৎ পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। সিÐিকেট করে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করায় এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী লাভবান হয়; বে বেকায়দায় পড়ে গেছে সীমিত আয়ের মানুষ।
সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বাজার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচমরিচের দাম বেড়েছে দ্বিগুনেরও বেশি। বাজারে ৫০ থেকে ৮০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি বিক্রি হতে দেখা যায়নি। তবে টমেটো, গাজর ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাঁচামরিচের দাম বাড়লেও পাইকারি ও খুচরা বাজারে দামের বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। পাইকারি বাজারের দ্বিগুন দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৬০ টাকা।
হঠাৎ কাঁচামরিচের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে শনির আখড়ার বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মনজুর আলী বলেন, দেশে বন্যা ও টানা বৃষ্টিতে মরিচসহ সবজির অনেক ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে দাম বেড়েছে। তবে বৃষ্টি থামলেও সহসা সবজির দাম কমবে না।
পিঁয়াজের ঝাঝ কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় বিক্রি হওয়া দেশি পিঁয়াজ কমে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নিম্নমানের দেশি পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকা কেজিতে, যা আগে ছিল ৫০-৫২ টাকা। আমদানি করা পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। যা আগে বিক্রি হয়েছিল ২৪ থেকে ২৮ টাকা। আমদানিকৃত চায়না আদা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি। দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। আমদানিকৃত রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি আর দেশি ১৩০ টাকা কেজি।
শুক্রবার সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায় সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শসা, টমেটো ও গাজর। বাজারভেদে শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো ও গাজর। শসা, টমেটো ও গাজরের মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ সবজি। গত সপ্তাহের মতো করলা, কাঁকরোল, উস্তা, করলা, ঝিঙা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়স; পেঁপে, পটল, কচুর লতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা; বেগুন, বরবটি ৬০ থেকে ৮০ টাকা; আলু ২০ থেকে ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। প্রতি আঁটি লাল শাক, মূলা শাক, কলমি শাক ২৫ টাকা; পুঁই শাক, লাউ শাক ৩০ টাকা; ধনে পাতা কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
মাংসের বাজার ঘুরে দেখা যায় ব্রয়লার মুরগির আগের সপ্তাহের মতো ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানি কক বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা কেজি। ২২০ থেকে ২৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে লাল লেয়ার মুরগি। গরুর মাংস বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি দরে।
আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল ও অন্যান্য মুদিপণ্যের দাম। বাজারে প্রতি কেজি ভালোমানের নাজির ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, মিনিকেট ৫৫ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, বিআর ২৮ নম্বর ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ২৬ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, লবণ ৩০ থেকে ৩৫, পোলাউর চাল ৯০ থেকে ১০০, খোলা ময়দা ২৮ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, ছোলা ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, খেসারি ডাল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, মসুর ডাল ১০০ থেকে ১২০ টাকা, বুট ৪০ থেকে ৪৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
রমজানের পর হঠাৎ মাছের বাজার চড়ে যায়। তবে এখন মাছের দাম একটু কমেছে। বন্যার পানি ছড়িয়ে পড়ায় সব জায়গায় এখন মাছ পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে এখন বেশিরভাগে মাছের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। খুচরা বাজারে তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে পাঙাশ মাছ। রুই মাছ ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, নলা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, পাবদা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, টেংরা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, শিং ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, মাগুর ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, বাইলা ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, আইড় ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, বোয়াল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, চিতল মাছ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। জানতে চাইলে মাছ ব্যবসায়ীরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই মাছের দাম খুব চড়া ছিল। বর্ষার পানি ও বৃষ্টি না হওয়ায় মাছের দাম কমেছে।

 

‘খাদ্যে ভেজাল পারমাণবিক বোমার চেয়েও ভয়ঙ্কর’
মানববন্ধনে বক্তারা
স্টাফ রিপোর্টার : দেশে খাদ্যে ভেজাল মহামারি আকার ধারণ করেছে। খাদ্যে এই ভেজালকারীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে নিরাপদ খাদ্য চাই নামের একটি সংগঠন। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে এ দাবি জানায় সংগঠনটি। সংগঠনের সভাপতি ডা. এম এ জাহেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর মুজিবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিভাগের প্রফেসর আলি আব্বাস খোরশেদ, ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার হোসেন প্রমূখ।
খাদ্যে ভেজালকারীদের কঠোর শাস্তির দাবি করে বক্তারা বলেন, খাদ্যে ভেজাল পারমাণবিক বোমার চেয়েও ভয়ংকর। পৃথিবীর কোথাও এমন ভেজাল পণ্য ও খাদ্যের সমাহার পাওয়া যাবে না। যারা খাদ্য ভেজাল করেন তারা মানবতার দুশমন। সারা দেশে খাদ্যে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক ও সচেতনতামূলক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
ডা. জাহের বলেন, ‘এই গণদুশমনদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলবে। তিনি আরো বলেন, খাদ্যে ভেজালের শিকার ছোটবড় ধনী গরীব সবাই। কাজেই সকলকেএ ভেজালের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আগুন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ