পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, পুঁজিবাজারকে শক্ত ভিত্তিতে দাঁড় করাতে কাজ করছে সরকার। পুঁজিবাজারে আমার কাজটা হবে একটা সুন্দর অবস্থান তৈরি করে দেয়া। যাতে পুঁজিবাজার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। এ জন্য বাজেটে নানা উদ্যোগের কথাও জানান তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজারের জন্য সরকারের তরফ থেকে যা করা দরকার করবো। কারণ এখনো হাজার হাজার মানুষ পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই তাদেরকে বাদ দিয়ে দেশের অর্থনীতি চিন্তা করতে পারি না। তাই তাদের সমর্থন দিতে আমরা কাজ করে যাবো। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, শেয়ারবাজারে আমার কাজটা হবে একটা সুন্দর অবস্থান তৈরি করে দেয়া। যাতে শেয়ারবাজার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। শেয়ারবাজারে লাভ-লোকশানের সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কেননা পুঁজিবাজারে সরকারের শেয়ার খুব কম রয়েছে। এখান থেকে সরকার শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে যাবে এমনটি নয়।
গতকাল সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, শেয়ারবাজার একটি বাজার। যারা এখানে বিনিয়োগ করবেন তারাই লাভবান হবেন। লাভও হতে পারে আবার লোকসানও হতে পারে। প্রত্যেক দেশেই পুঁজিবাজারে মাঝে মধ্যে শেয়ারের দাম কমে। এখন একটা ট্রেড দাম চলছে। সেটা খুব বেশি দিন থাকবে না। কথাবার্তা চলছে আগে যে অস্বাভাবিক অবস্থা ছিল সেটা আর নেই।
১৯২৯-৩৩ সাল পর্যন্ত চার বছরে একবার ট্রেড ওয়ার হয়েছিল। সে সময় ২০ হাজার আইটেমে উপর ট্যারিফ বসানো হয়েছিল। এ কারণে বিশ্বে তখন প্রায় ৬৬ শতাংশ বাণিজ্য কমে হয়েছিল। কয়দিন আগে চায়না-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটা সমস্যা সৃষ্টির কারণে ৪-৫ শতাংশের মত ট্রেড কমে গেছে। এসব জিনিস অনেক সময় শেয়ারবাজারে প্রভাব ফেলে। তবে সমস্যা দ্রæত সমাধান হয়ে আসছে।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, প্রত্যেক দেশের পুঁজিবাজারে শেয়ারের দাম কমে আবার বাড়ে। তবে পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার নজির নেই। ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভারতের পুঁজিবাজারে ইনডেক্স এসেছিল ১৮ হাজার থেকে ৭ হাজারে। সেখানে কমেছে আবার বেড়েছে। আমাদের এখানেও বেড়েছে আবার কমেছে। আমাদের পুঁজিবাজারে এখন খুব বেশি উঠা-নামা নেই। স্থিতিশীল রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজারের জন্য সরকারের যেটুকু করার সেটুকু করা হবে। আমাদের অর্থনীতি খুব শক্তিশালী এটা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। তাহলে অর্থনীতির প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়ছে না কেনো প্রশ্ন রাখেন তিনি। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, পুঁজিবাজারে এটার প্রভাব আশা উচিত। পুঁজিবাজারে শক্তিশালী বা বড় বিনিয়োগকারী ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী থাকা দরকার। তবে আমাদের পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সংখ্যাই বেশি।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা দিলে এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়ে। আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা শুধু লাভ করতে চায়। ট্রেড করে ছোট্ট লাভ করে বেরিয়ে যেতে চায়। এটা কিন্তু পুঁজিবাজার না। পুঁজিবাজারের দুটি পদ্ধতি আছে। একটা হচ্ছে আপনি ট্রেড করবেন লাভ করবেন। আবার আপনি ইনভেস্টমেন্ট ধরে রাখবেন যাতে ক্যাপিটাল গেইন পেতে পারেন। আমাদের এখানে দুঃখজনক যে ক্যাপিটাল গেইনের চিন্তাই করে না।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমার ১০০ টাকার শেয়ার কবে ১৫০ টাকা হবে এটা কেউ চিন্তা করে না। আমার কাছে যা ছিল পুঁজিবাজারের জন্য বাজেটে আমি তা করেছি। ডিভিডেন্টের উপর একাধিকবার করারোপ তুলে দেয়া হয়েছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত করছাড় দেয়া হয়েছে।
টেরাকোটা টাইলস রফতানির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করছে সাংবাদিকের এমন এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি সব ব্যবসায়ীকে চিনি। ব্যবসায়ীদেরও আমাকে চিনতে হবে। ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে দেশ এগোবে। শতভাগ ভাগ ব্যবসায়ী সৎ হবেন না। শতভাগ মানুষ সৎ হবেন না। কিন্তু সৎ মানুষও আছে। এই সংখ্যাও কম না।’
অর্থমন্ত্রী এই সময় সাংবাদিকদের কাছে জানতে চান, এই পদ্ধতিতে যিনি টাকা পাচার করছেন তাঁর সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে কি না। সাংবাদিকের এ সময় অর্থমন্ত্রীকে জানান, এসবি এক্সিম নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই কর্মকাÐের সঙ্গে জড়িত। শাহজাহান বাবলু নামের এক ব্যবসায়ী এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। শাহজাহানের বাড়ি কুমিল্লা। এ সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘যদি তিনি (শাহজাহান বাবলু) করে থাকেন, তিনি যেই হোন, যত শক্তিশালী হন, তাঁর বাড়ি যেখানেই হোক, তিনি যদি আমার পরিবারের সদস্যও হন, তবু তাঁকে আইনি প্রক্রিয়ায় আসতে হবে। তাঁর বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। আপনারার দেখতে পাবেন।’
বাংলাদেশের অর্থ পাচারের তদন্ত সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) অনুসন্ধান শেষে বলেছে, শাহজাহান বাবলু ব্যাংকের সহায়তায় বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। আবার রফতানি বিলের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন ১৯০ কোটি টাকা। রফতানির বিপরীতে সরকারি নগদ সহায়তা নেয়ারও চেষ্টা করেছিল।
শাহজাহান বাবলু ও কমার্স ব্যাংকের জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এ বছর বাংলাদেশকে এক বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি)। ইতিমধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে সংস্থাটি। বছর শেষে এই সহায়তা ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটিতে উন্নীত হবে।
মুস্তফা কামাল বলেন, যে বাজেটটি চলমান সেটি আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। বাজেট প্রণয়নের সময়ে বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। বাজেট বাস্তয়নেও তাদের সঙ্গে বসতে চাই। আগে আমরা শুধু বাজেট তৈরি করার সময় বসতাম। এখন প্রতিনিয়ত বাসবো। অন্তত ৬ মাস পর বাজেট বাস্তবায়নে আমরা কোথায় রয়েছি সেটা নিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করবো।
বেসিক ব্যাংকের বাচ্চুর বিষয়ে বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেক অনেক পুরনো হিসাব নিয়ে আসলে আমি পারবো না, অতীতের গুলো টেনে এনে আমাকে জরাজীর্ণ করবেন না। বর্তমানগুলোর দায়িত্ব আমার।
মশা আতঙ্কে অর্থমন্ত্রী :
চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু জ্বরে ভোগার পর রীতিমতো মশা আতঙ্কে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, এ জন্য তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে তার কার্যালয়ে যেতেও ভয় পাচ্ছেন। এ সময় ব্যক্তিগত শারীরিক অসুস্থতার বিষয়ে জানতে চইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অসুস্থ ছিলাম। এটা সংসদে নিজেই ঘোষণা দিয়েছি। সে অসুখ এখন আর নেই। এখন আর সমস্যা নাই। চোখে যে সমস্যা ছিলো সেটাও চলে গেছে। এখন চশমা ব্যবহার করি। যদিও লাগে না তবুও ডাক্তার ব্যবহার করতে বলেছে।’ এখন থেকে সচিবালয়ে অফিস করবেন কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অফিস দুই জায়গায় করবো (পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রীর কার্যালয়ে ও অর্থমন্ত্রণালয়)। কিন্তু ওখানে (পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রীর কার্যালয়) বেশি মশা। এ পর্যন্ত দু’বার কামড় দিয়েছে। একবার চিকুনগুনিয়া ও আবার ডেঙ্গু, এটা কথা হল নাকি। আমি ওই জন্য ভয়ে ওখানে যাচ্ছি না। আজকে সচিবালয়ে আসতে এক ঘণ্ট দুই মিনিট লেগেছে।
এরপর ভয়াবহ অসুস্থতার কথা গত ২৯ জুন সংসদে বলেন অর্থমন্ত্রী। নিজের সুস্থ হওয়ার গতি অনেক শ্লথ জানিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘সেদিন সংসদ শুরুর আগে যখন সংসদে প্রবেশ করি তখন থেকে পরবর্তী ৭-৮ মিনিট আমি সম্পূর্ণভাবে বø্যাঙ্ক ছিলাম। আমার কোনো কিছুই মনে পড়ে না।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১৩ জুন প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করি। কিন্তু সেদিনটি ছিল আমার জীবনের চরম কষ্টের দিন। কারণ এর তিনদিন আগে অর্থাৎ ১০ জুন ডেঙ্গু জ্বরে ভয়ানকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং হাসপাতালে ভর্তি হই। এ অসুস্থতা নিয়েই আমি গত ১৩ জুন সংসদে আসি। আমার বিশ্বাস ছিল, আমি প্রস্তাবিত বাজেটটি উত্থাপন করতে পারব। কিন্তু আমি যা ভেবেছিলাম বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। অধিবেশন শুরুর আগে যখন সংসদে প্রবেশ করি তখন থেকে পরবর্তী ৭-৮ মিনিট আমি সম্পূর্ণভাবে বø্যাঙ্ক ছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার কোনো কিছুই মনে পড়ে না। আমি কোনো রকমে গিয়ে আমার আসনে বসলাম। তখন আমার কেবল মনে হচ্ছিল প্রবল এক ভ‚মিকম্প পৃথিবীতে আঘাত হেনেছে। সেই ভ‚মিকম্পের কারণেই যেন ক্ষণে ক্ষণে আমার কম্পন হচ্ছিল। আমার মনে হচ্ছিল আমি সিট থেকে পড়ে যাচ্ছি। আমি তখন মনে মনে দোয়া পড়তে শুরু করলাম। মানুষ মানুষের জন্য, মানুষ সৃষ্টির জন্য। আমি ভাবতে শুরু করলাম আমার আশপাশের বন্ধুবান্ধব কেউ না কেউ ধরবেন, যেন আমি ছিটকে পড়ে আহত না হই। অতি অল্পসময়ের মধ্যেই আমার বন্ধুবান্ধব সব ছুটে আসলেন।’
তিনি বলেন, ‘কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে আমি স্বাভাবিক হই। মনে হলো আমার আর সমস্যা হবে না। আমি তখনই ২৫-৩০ মিনিটের মতো প্রস্তাবিত বাজেটের কিছু অংশ পড়লাম। তখন আরেকটি নতুন সমস্যা দেখা দিল। আমার হাতে, আঙুলে কোনো শক্তি ছিল না। বাজেটের পাতাগুলো উল্টাতে পারছিলাম না। তখন সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরী এগিয়ে এলেন। তিনি আমার বাজেটের প্রতিটি পাতা উল্টে দিলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ সেটাও রইল না। একটু পরই আমি চোখে কিছু দেখছিলাম না। তখন আর সময় না নিয়ে আমি স্পিকারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিকভাবে অনুরোধ করি। প্রধানমন্ত্রী নিজেও অসুস্থ ছিলেন। তারপরও আন্তরিকভাবে ও সুন্দরভাবে বাজেটটি পড়লেন।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।