Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুড়িগ্রাম পৌর সড়কের দশ পয়েন্টে লাঠিয়াল চাঁদাবাজ, কর্তৃপক্ষ নীরব

প্রতিদিন আদায় ৪ লাখ টাকা

প্রকাশের সময় : ৬ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে

কুড়িগ্রাম পৌরসভার পৃষ্ঠপোষকতায় শহরের ১০টি পয়েন্টে নানা অজুহাতে চলছে প্রাকশ্য চাঁদাবাজি। একদল লাঠিয়াল বাহিনী বড় বড় লাঠি উঁচিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির মধ্য দিয়ে চাঁদা উত্তোলন করলেও প্রশাসন নীরব-নির্বাক। রহস্যজনক এ নীরবতায় ক্ষতির শিকার বিভিন্ন পরিবহনের মালিক, শ্রমিক ও চালক। ট্রাক, ইজিবাইক (ব্যাটারিচালিত অটো), ট্রলি, নছিমন-করিমনসহ বিভিন্ন বাহন থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩ লাখ টাকার চাঁদা উত্তোলন করা হয়। এসব পরিবহনে যাতায়াতকারী যাত্রীরা শিকার হচ্ছে দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনার। আর মাল পরিবহনে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোগান্তির শিকার সাধারণ ভোক্তা নাগরিক। পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পরিপত্রের ভিত্তিতে কর আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন যানবাহন থেকে টোল আদায়ে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। আইনের মধ্যে থেকে তারা টোল আদায় করছে। তবে পুলিশের দাবি পৌরসভার ভিতর গাড়ি পার্কিং ছাড়া আর অন্য কোনভাবে পৌর কর্তৃপক্ষের টোল আদায়ের আইনগত ভিত্তি নেই। অনুসন্ধানে জানা যায়, কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়রের আত্মীয়স্বজন ও দলীয় লোকজন সিন্ডিকেট করে পানির দরে দরপত্র বাগিয়ে নেয়। তারপর শুরু হয় উচ্চ দরে টোল আদায়ের স্টিম রোলার। এ নিয়ে সাধারণ ঠিকাদার এবং ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। ভিকেল অ্যাক্টে বাহন নয়, অবৈধ বাহন-ব্যাটরি চালিত অটো, টলি, নছিমন-করিমন। এসব অবৈধ বাহনের উপর পৌরসভার টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানোর শামিল। অবৈধ বাহনের উপর অবৈধ টেন্ডারবাজি। কুড়িগ্রাম ধরলা ব্রিজপাড়ের একতা পাড়া মোড়, গড়ের পাড়, কুড়িগ্রাম বাসস্ট্যান্ড, নতুন রেলস্টেশন মোড়, কলেজ মোড়, জজকোর্ট মোড়, ডাকবাংলাপাড়া মোড়, ধরলা ব্রিজের পূর্ব প্রান্তে, কুড়িগ্রাম প্রধান ঈদগাঁ মাঠ, টেক্সটাইল মিলস মোড়, ধরলা ব্রিজের বাইপাস সড়কে লাঠি হাতে চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। বাহনভেদে ১০ টাকা থেকে ৭০ টাকা হারে টোলের নামে এ চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। পৌরসভার ইজারাদার আওয়ামী লীগ নেতা অসীম কুমার সরকারের নামে রশীদ ছাপিয়ে ৬/৭ স্থানে ১০ টাকা হারে নেয়া হয় অটো রিকশা, টেম্পু, নছিমন, করিমন, টলিসহ বিভিন্ন অবৈধ বাহনে। একই স্থানে বিভিন্ন সমিতির নামে তোলা হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকা। গরু/মহিষবাহী ট্রাক প্রতি নেয়া হচ্ছে ৭০ টাকা ২টি স্থানে। এছাড়া মালবাহী সকল প্রকার ট্রাক ও পরিবহন থেকে তোলা হয় ৭০ টাকা করে। ফলে মালামাল পরিবহনের ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরেজমিন দেখা যায়, কুড়িগ্রাম ধরলা ব্রিজপাড়ের একতা পাড়া মোড়ে টাকা তুলছেন, জনি, রওশন, আকাশসহ ৫ যুবক। রওশন জানায়, তারা অসীম কুমার সরকারের কাছ থেকে সাব কন্ট্রাক নিয়েছে এই পয়েন্টে অটোরিক্সা, টেম্পু, নছিমন, করিমন, টলিসহ বিভিন্ন বাহন থেকে টাকা উত্তোলনের। গড়ে প্রতিদিন পৌর টোল বাবদ ৪/৫ হাজার টাকা এবং সমিতির চাঁদা প্রায় আড়াই হাজার টাকা। এখানেই কথা হয় অটোচালক আবুল কাশেমের সাথে। কাশেম জানায়, নাগেশ^রী উপজেলার কালিগঞ্জ ইউনিয়ন থেকে কুড়িগ্রাম পৌরসভা সংলগ্ন ঈদগাঁহ মাঠ পর্যন্ত আসতে ভাড়া উঠে ১৫০ টাকা। অথচ ঘাটে ঘাটে লাঠিয়াল বাহিনীকে চাঁদা দিতে হয়েছে ৫৫ টাকা। কালিগঞ্জে চেইন ১০ টাকা, নাগেশ^রী পৌর এলাকায় সমিতির নামে ১০ টাকা, ধরলা ব্রিজে ১০ টাকা, ধরলা ব্রিজের পশ্চিম প্রান্তে একতা পাড়া মোড়ে পৌর টোলের নামে ১০ টাকা, কল্যাণ সমিতির চাঁদা ৫ টাকা এবং কুড়িগ্রাম ঈদগাঁহ মাঠে এসে দিতে হয় আরো ১০ টাকা। তার টিকে ৯৫ টাকা। এর থেকে ব্যাটারী চার্জ ও অন্যান্য খরচ বাদ দিলে ৬০/৭০ টাকার বেশি টিকে না। ফলে যাত্রী কম হলে ভাড়া বেশি তুলতে হয় যাত্রীদের কাছ থেকে। একই অবস্থা অন্য সকল পয়েন্টে। তথ্য মতে, গড়ে প্রতিদিন পৌর টোলের নামে এক লাখ, কয়েকটি কল্যাণ সমিতির নামে ৭০/৮০ হাজার টাকা এবং অটো স্ট্যান্ডে চেইন বাবদ উঠে এক লাখ টাকা। গরু/মহিষের ট্রাক থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার এবং অন্যান্য বালবাহী ট্রাক ও অন্যান্য বাহন থেকে গড়ে ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয় অবৈধ চাঁদাবাজির মাধ্যমে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কাউন্সিলর জানান, দিনে ৩ লাখ টাকা হলেও বছরে কম পক্ষে ৯০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। অথচ এসব খাতে পৌরসভা দরপত্রের মাধ্যমে আয় করে মাত্র ৬/৭ লাখ টাকা। এর নেপথ্যে পৌর মেয়র মোটা অংকের বিনিময়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রফাদফা করেন। ফলে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। অভিযোগে জানা যায়, আগামী অর্থ বছরের জন্য গরু/মহিষ বোঝাই ট্রাকের টোল আদায়ের ইজারা দরপত্র আহ্বান করা হয়। ১৭ মে ছিল দরপত্র দাখিলের শেষ দিন। আর দরপত্র দাখিলের সময় নির্ধারণ করা হয় ১৮ মে সকাল ৯টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত। মেয়রের নিকট আত্মীয়রা টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করায় দরপত্র দাখিল দেখানো হয় মাত্র ৩টি। উচ্চ দরদাতা তৈমুর রহমানকে লাঞ্ছিত করে দরপত্র প্রত্যাহার পত্রে স্বাক্ষর নেয়া হয়। ফলে নি¤œদর দাতা নির্বাচিত হন গোলাম আযম টিটু। তার দর ছিল ৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা। তার সাফোর্টিং এ ছিল এটিএম মাসুদ যার দর ছিল ২ লাখ এবং মনিরুজ্জামান জনির ছিল ৩ লাখ ১ হাজার টাকা। অথচ দরপত্র বিক্রি হয় ১০টি। ঠ্যাক পার্টির কারণে ৫ জন দরপত্র দাখিলই করতে পারেননি। অথচ টেন্ডারবাজদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা দরে তৈমুর রহমান দরপত্র দাখিল করলেও টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটি তা আমলে নেয়নি। ফলে ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে পৌরসভার রাজস্ব আদায়। মজার ব্যাপার হলো গোলাম আযম টিটু মেয়রের নিকট আত্মীয় হওয়ায় দরপত্রের ২য় শর্তও ভঙ্গ করা হয়েছে। শর্তে বলা হয়-‘১ মার্চ ২০১৬ তারিখের পরিপত্র অনুযায়ী বিগত দরের উপর অতিরিক্ত ২৫% বৃদ্ধি করে দর দাখিল করতে হবে। গত অর্থ বছরের দর ছিল ৩ লাখ ৭ হাজার টাকা। এ টাকার অতিরিক্ত ২৫% দারায় ৭৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে ন্যূনতম দর হয় ৩ লাখ ৮২ হাজার টাকা। অথচ শর্ত ভঙ্গ করে এর চেয়ে ৬৫ হাজার টাকা কম দরে ওয়ার্ক অর্ডার দেয়ার পাঁয়তারা চলছে। একই সঙ্গে এই দর উচ্চ দরদাতা তৈমুর রহমানের চেয়ে এক লাখ ৯৮ হাজার টাকা কম। এ ভাবে অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করছে কুড়িগ্রাম পৌরসভা। এ দরপত্র কমিটির আহ্বায়ক নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল আহমেদ জানান, উচ্চ দরদাতা তৈমুর রহমান টেন্ডার বাক্স খোলার আগে প্রত্যাহার পত্র দেয়। ফলে তা দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির আমলে নেয়ার বিষয় না। ঐ দরপত্র আমলে নেয়া না নেয়ার এখতিয়ার প্রতিষ্ঠান প্রধান মেয়রের। কুড়িগ্রাম পৌর সভার প্যানেল মেয়র মাসুদুর রহমান জানান, শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে লাঠিয়াল বাহিনীর মাধ্যমে টোল আদায় করা আমি ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করি না। তবে আগামীতে নাম্বার প্লেটের মাধ্যমে ব্যাটারী চালিত অটোগুলোকে লাইসেন্স দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার ডাঃ তবারক উল্লাহ্ জানান, ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক (অটোরিক্সা) অবৈধ।তবে এটি চলাচলে সরকার বন্ধ করার কোন নির্দেশনা দেয়নি। যেহেতু ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সা থেকে কুড়িগ্রাম পৌরসভা টোল আদায় করে, তারাই বলতে পারবে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা চলাচল কতটুকু বৈধ।



 

Show all comments
  • Predoom ৬ জুন, ২০১৬, ১২:২৪ পিএম says : 0
    oooooooooooooooo
    Total Reply(0) Reply
  • asad ৬ জুন, ২০১৬, ৩:৪৭ পিএম says : 0
    good very good news.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুড়িগ্রাম পৌর সড়কের দশ পয়েন্টে লাঠিয়াল চাঁদাবাজ
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ