Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ইসকনকান্ডে তোলপাড় নিন্দা প্রতিবাদের ঝড়

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ-ইসকনের উদ্যোগে ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’ মন্ত্র পাঠে স্কুলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের প্রসাদ খাওয়ানোর ঘটনায় তোলপাড় চলছে। দৈনিক ইনকিলাবে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রশাসন নড়েচড়ে ওঠে।

ইসকনের পক্ষ থেকে যেসব স্কুলে প্রসাদ খাওয়ানো হয় সেসব স্কুলের প্রধানদের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে। কার অনুমতি নিয়ে এ ধরনের কর্মসূচি পালন করতে দেয়া হয়েছে তাও জানতে চাওয়া হয়। অন্যদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইসকনকে এ ধরনের কর্মসূচি না করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে নিয়েছি।

পুরো ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আবু হাসান সিদ্দিকী জানান, খবর পাওয়ার পর আমরা এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। কিভাবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এ ধরনের কর্মসূচি পালন করা হল তাও আমরা খতিয়ে দেখছি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকদের অবশ্যই ব্যাখ্যা দিতে হবে।

এদিকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের খাবার বিতরণের নামে প্রসাদ খাওয়ানো এবং সেসাথে হিন্দু ধর্মের মন্ত্র পাঠে বাধ্য করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন সংগঠন এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার একটি প্রতিনিধি দল গতকাল ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্মারকলিপি পেশ করেছেন।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন ইসকনের তরফে দাবি করা হয়েছে নগরীর ৩০টি স্কুলে ৩০ হাজার শিক্ষার্থীদের তারা প্রসাদ খাইয়েছে। হিন্দুদের রথযাত্রা উপলক্ষে ১১ জুলাই থেকে সপ্তাহব্যাপী এ কর্মসূচি পালন করা হয়। যেসব স্কুলে এ ধরনের কর্মসূচি পালন করা হয়েছে সেসব স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রাম সরকারি স্কুলের একজন অভিভাবক আবুল কাশেম চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের কর্মসূচি পালনের অনুমতি দিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ চরম অন্যায় করেছে।

কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি করা দুঃখজনক। এর দায় স্কুল কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারেন না। কৃষ্ণ কুমারী স্কুলের এক ছাত্রীর বাবা বাদল রায় বলেন, কাউকে প্রসাদ খাওয়াতে হলে মন্দির কিংবা অন্য কোন ভেন্যুতে প্রোগ্রাম আয়োজন করা যেতে পারে। কিন্তু স্কুলে গিয়ে হিন্দু, মুসলমান নির্বিশেষে সবাইকে প্রসাদ খাওয়ানো এবং মন্ত্র পাঠ করা হিন্দু ধর্মের লোকেরাও সমর্থন করে না। ধর্মের ব্যাপারে হিন্দুদের মধ্যেও কোন জোর জবরদস্তি নেই।

ছাত্রসেনার স্মারকলিপি
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ- ইসকন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির উস্কানি দিচ্ছে অভিযোগ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ছাত্রসেনার নেতারা। ছাত্রসেনা চট্টগ্রাম মহানগর উত্তরের উদ্যোগে চট্টগ্রামে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেনকে দেয়া স্মারকলিপিতে এ দাবি জানান। স্মারকলিপিতে বলা হয়, চট্টগ্রামের বেশকিছু স্কুলে ‘ফুড ফর লাইফ’ কর্মসূচির অধীনে খাবার বিতরণ করেছে ইসকন।

তারা স্কুলের শিক্ষার্থীদের ‘হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম, রাম রাম হরে হরে, মাতাজি প্রসাদ কি জয়’ এই ধ্বনিগুলো দিতে বাধ্য করেছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই মুসলমান, চোখে মুখে অস্বস্তি নিয়ে এ ধ্বনি দিচ্ছে তারা। এরকম ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এটা নির্দোষ খাবার নয়, ‘প্রসাদ’। অর্থাৎ হিন্দু দেবদেবীর নামে উৎসর্গকৃত খাবার। যা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী কাউকে জোর করে খাওয়ানো অনৈতিক, অন্যায়ও বটে। সাধারণত দেব-দেবীদের জন্য উৎসর্গকৃত প্রসাদসহ যেকোন খাবার ইসলাম ধর্মে সম্পূর্ণ নিষেধ। আর কোমলমতি মুসলমান শিশুদের এরকম প্রসাদ খাওয়ানো ও বারবার হিন্দু ধর্মীয় শ্লোগান দেওয়ানো আমরা কখনও শুভ দৃষ্টিতে দেখছিনা।

এর মাধ্যমে তাদের ধর্মের প্রতি বাধ্য করা হচ্ছে, যা কখনও বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মুসলমান মেনে নিতে পারেনা। খাবারের লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশের স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের, যাদের মুসলমান, তাদের দিয়ে ‘হরে কৃষ্ণ’ বলানো, তাদের ধর্ম শেখানো এক জঘন্য পর্যায়ের অপরাধ, যা কোনও অভিভাবক ও সচেতন নাগরিক কখনোও মেনে নিতে পারেননা।

কোন প্রকার প্রশাসনিক অনুমতি ছাড়া সাধারণ মুসলমান শিশুদের অন্য ধর্মীয় ¯েøাগান শেখানো ধর্মীয় উসকানি যা বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি ধ্বংস করার এক আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র বলে আমরা মনে করছি। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য মডেল। এখানে সবাই স্ব স্ব ধর্মীয় অনুশাসনে পালন করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোমলমতি, অবোধ শিশুদের কৌশল করে ভিন্ন ধর্মের সবক দেয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এ ধরণের ঘটনা মিডিয়ায় প্রকাশের পর থেকে এক ধরণের চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এ ধরণের উসকানিকে কাজে লাগিয়ে যেকোন প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী দেশের মধ্যে উত্তেজনা, বিশৃঙ্খলাসহ বড় ধরণের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টিরও প্রয়াস চালাতে পারে। এ সময় ছাত্রনেতা মুহাম্মদ মাছুমুর রশীদ কাদেরী, মুহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, মুহাম্মদ তৌহিদুল হক, মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান, মুহাম্মদ ওসমান গণি কাদেরী, খালেদ বীন জাহাঙ্গীর, মুহাম্মদ আজাদ হোসেন, মুহাম্মদ সাহেদ হোসেন, মুরশেদুল আলম, শাহাদাত হোসাইন, কাজী শাহেদ, সাজ্জাদ হোসাইন, মনির উদ্দীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

হাটহাজারীতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ
হাটহাজারী উপজেলা সংবাদদাতা ; ইসকন কর্তৃক স্কুলে স্কুলে মন্ত্রপাঠ করিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রসাদ খাওয়ানোর প্রতিবাদে হাটহাজারীতে গতকাল প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। পৌরসভার ডাকবাংলো চত্বরে মুসলিম ছাত্র জনতা ঐক্য পরিষদ এ কর্মসূচির আয়োজন করেন। মিছিলটি পৌর এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় ডাকবাংলো চত্বরে এসে শেষ হয়।

মাওলানা কামরুল ইসলাম কাছেমী ও মুফতী মাসউদুর রহমান চৌধুরীর সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মাওলানা এমরান সিকদার। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন হাটহাজারী বড় মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মুহাদ্দিস আল্লামা মুমতাজুল করিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন মাওলানা মীর ইদরিস। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মাওলানা আহছানুল্লাহ, মাওলানা নাছিম, নুর মুহাম্মদ, মাওলানা হফেজ আব্দুল মামুদ, মাওলানা মহিউদ্দিন। বক্তারা বলেন, উগ্রবাদী সংগঠন ইসকন রথযাত্রা উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী ‘ফুড ফর লাইফ’ কর্মসূচির আড়ালে মুসলিম কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম, জয় শ্রীরাম’ মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে প্রসাদ গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে। তারা ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে থেকে ইসকন কর্তৃক এমন কৃতকর্মের জন্য জাতির কাছে প্রকাশ্যে অনুতপ্ত হওয়ার জোর দাবি জানান।



 

Show all comments
  • মেহেদী হাসান ১৯ জুলাই, ২০১৯, ২:১৪ এএম says : 0
    ওরা এখন সাধারণত অস্বীকার করবে, কিন্তু ওদেরকে সতর্ক করা না হলে আরো বেশী চওড়া হবে তারা!
    Total Reply(0) Reply
  • মেহেদী হাসান ১৯ জুলাই, ২০১৯, ২:১৪ এএম says : 0
    ওরা এখন সাধারণত অস্বীকার করবে, কিন্তু ওদেরকে সতর্ক করা না হলে আরো বেশী চওড়া হবে তারা!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঝড়

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ