বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
নামাজ পড়া ফরয। নামাজে কোরআন পড়াও ফরজ। সুতরাং নামাজ সহীহ হয়-মতো কোরআন সহীহ-শুদ্ধভাবে পড়াও ফরয। -ফাযায়েলে আ’মাল
নামাজের রূহ হলো খুশু-খুযু। একাগ্রচিত্তে মনোযোগী হয়ে নামায পড়ার নামই হলো খুশু-খুযু। নামাজে আমি আমার আল্লাহকে কী বলছি তা না বুঝলে এটা অনেকটা অসম্ভব।
সুতরাং নামাযের রূহ ঠিক করতে হলে, হাকিকী নামাজ পড়তে হলে কোরআনের অর্থ বোঝাও জরুরি।-ফাযায়েলে আ’মাল, যাদুল মা’আদ অত্যন্ত দুঃখের সাথেই বলতে হয়, এখন আমরা কোরআন পড়া ও বোঝাকে নফল বলেও মনে করি না। আমরা যারা কোনো পীরের মুরীদ, তারা সকাল-সন্ধ্যায় যিকির-আযকার, তাসবীহ-তাহলীল ও বিভিন্ন অযীফায় যতটুকু সময় ব্যয় করি এবং এগুলোকে যতটুকু গুরুত্ব দিয়ে থাকি, সাপ্তাহিক যিকিরের হালকায় শরীক হওয়া যতটুকু প্রয়োজন মনে করি এবং এগুলোকে যত বড় সওয়াবের কাজ মনে করি, কোরআন সহীহ করা ও কোরআন বোঝাকে আমরা এর কাছাকাছি পর্যায়েরও মনে করি না।
তাহাজ্জুদ, ইশরাক, আওয়াবীন খুব পড়তে চাই কিন্তু কিছু সময় ব্যয় করে কোরআন পড়া সহীহ করে নিতে চাই না। অথচ কোরআন সহীহ না হলে এ সবকিছু নিতান্তই বেকার। শরীয়তে তাহাজ্জুদ এসেছে কোরআন তেলাওয়াতের জন্য। এখন অধিকাংশই তাহাজ্জুদ পড়তে রাজি কিন্তু যার জন্য তাহাজ্জুদ, তা শিখতে রাজি নয়। এ কী মারাত্মক ভুলের শিকার আমরা! কোরআন বাদ দিয়ে শুধু অন্যান্য যিকিরকে অযীফা করে নিয়েছি।
এমনিভাবে আমরা যারা দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনত করি, তাদের কাছেও ফাযায়েলে আ’মালের যতটুকু গুরুত্ব, এর জন্য যতটুকু সময় ব্যয় করতে প্রস্তুত, গাশ্ত, তিনদিন, চিল্লা আর চার মাসকে যতটুকু জরুরি মনে করি, কোরআন পড়া, সহীহ করা ও কোরআন বোঝার গুরুত্ব আমাদের কাছে এর কিয়দংশও নেই। যার কারণে অনেকেই শুধু ফাযায়েলে কোরআন থেকে কোরআন পড়ার ফযীলত পড়ে পড়েই জীবন কাটিয়ে দেয়, কোরআন শেখা, পড়া আর কোরআন বোঝার ভাগ্য তাদের হয় না। কোরআন যদি না-ই পড়বে, না-ই শিখবে, না-ই বুঝবে, তাহলে আর ফাযায়েলে কোরআন পড়ে লাভ কী?
আমাদের দেশের অনেক ইসলামী চিন্তাবিদ, দার্শনিক ও গবেষকদের দেখা যায়, তারা কোরআনের বাংলা অর্থ বুঝে নেওয়াই যথেষ্ট মনে করেন। বাংলা কোরআন পড়েই তারা খুব সন্তুষ্ট। বাংলা বা ইংরেজি অনুবাদ পড়েই তারা নিজেদের ইসলামী চিন্তাবিদ, দার্শনিক ও গবেষক মনে করে থাকেন। আরবী শেখা, কোরআন তেলাওয়াত করা ও পড়ার এতটুকু গুরুত্ব তাদের কাছে নেই। বড়জোর এরা হয়তো কোরআনের বাংলা উচ্চারণ দেখে কোরআন পড়ে। আরবী শিখে কোরআন তেলাওয়াত করারও প্রয়োজন তারা বোধ করে না। এ চিন্তাবিদরা যখন কোরআনের তথ্যভিত্তিক ও তাত্তি¡ক আলোচনা করেন তখন সত্যিই খুব ভালো লাগে। কিন্তু পরক্ষণেই যখন রেফারেন্স দিতে গিয়ে কোরআনের আয়াতটুকু পড়েন, তখন মনে হয যেন বেচারা ‘ভালো’ বলতে গিয়ে ‘বালো’ বলে ফেললেন। আর দেখেই মনে হয় আয়াতটুকু পড়তে বেচারার অনেক কষ্ট হয়ে গেল। আবার এ কথা বুঝতেও বাকি থাকে না, আয়াতখানা নিশ্চয়ই বাংলা উচ্চারণ দেখে শেখা হয়েছে। এ লোকটিই আবার ইংরেজি বলতে শুরু করলে বোঝাই যায় না, লোকটি ইংরেজ না বাঙালি। তবে ব্যাপারটা কি এমন, ইংরেজি শেখার প্রয়োজন আছে, আরবী শেখার প্রয়োজন নেই?
আমাদের দেশের ওলামায়ে কেরাম কোরআনের তেলাওয়াত শেখার জন্য কম-বেশি গুরুত্ব দিলেও অর্থ বোঝার প্রতি তেমন গুরুত্ব দেন না। এ ব্যাপারে সাধারণ মুসলমানদের ততটা উৎসাহিত করেন না। মুখে না বললেও অবস্থা যেন এ কথাই বলে, কোরআন বোঝা সাধারণ মুসলমানের কাজ নয়। তাদের কাজ শুধু মন্ত্রের মতো পড়তে থাকা। কোরআন বোঝা নিষ্প্রয়োজন। সাধারণ লোকের জন্য কোরআন বোঝার চিন্তা করাও ঠিক না। তবে কি কোরআন শুধু আলেমসমাজের জন্য নাযিল হয়েছে?
এ জন্যই আমাদের দেশের অনেক নামাজী, মুসল্লি, পরহেযগার ব্যক্তি এমন রয়েছেন, যারা ৮০/৯০ বছর যাবৎ নিয়মিত নামায পড়ে আসছেন। এমনকি তাহাজ্জুদ, ইশরাক, আওয়াবীন কিছুই ছোটে না। তারাও নামাযের সবচেয়ে ছোট তাসবীহ ‘সুবহানা রাব্বিআল আযীম’ এর অর্থটুকুও জানেন না। সূরায়ে ফাতিহা যা প্রতি রাকাতে পড়া হয় এর অর্থটাও জানেন না। অথচ তাসবীহের অর্থ শিখতে প্রয়োজন হয় মাত্র দুই মিনিট। সূরা ফাতিহার অর্থ বুঝতে লাগে মাত্র পাঁচ মিনিট। দুই মিনিটের কাজটি নব্বই বছরেও কেন হলো না? এর কারণ হলো, এগুলো প্রয়োজন আছে বলে ধারণা আমাদের ওলামায়ে কেরাম দেননি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।