Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুয়াকাটায় ভূমি প্রশাসনের সহায়তায় কয়েক কোটি টাকার সরকারী খাস সম্পত্তি বেদখল

কলাপাড়া(পটুয়াখালী)সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০১৯, ১:২৬ পিএম

পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় আইনি জটিলতা আর ভূমি প্রশাসনের অবহেলার কারণে উদ্ধার করা যাচ্ছেনা সরকারের কোটি কোটি টাকার খাস জমি। অবৈধ দখলদাররা ২৪ শতাংশ রেকর্ডীয় জমির বিপরীতে দুই একর খাস সম্পত্তি দখল করে টিনের একচালা ঘর থেকে বহুতল ভবন নির্মাণ করে বছরের পর বছর ভোগদখল রেখেছেন একটি প্রভাবশালী মহল। মাঝে মধ্যে উদ্ধারের নামে চলে লুকোচুরি খেলা।

সরেজমিনে দেখা যায়, কুয়াকাটার জিরো পয়েন্টের খাস সম্পত্তিতে পর্যটন মার্কেটের নামে দখলদাররা অবৈধ ভাবে আবাসিক হোটেল,রিসোর্টসহ বহুতল ভবন নির্মাণ করে ব্যবসা বাণিজ্য চালিয়ে আসছে। এসব আবাসিক হোটেল ও বহুতল ভবনের সরকারী কোন অনুমোদন না থাকলেও দখলদারদের বিরুদ্ধে কোন আইনি পদক্ষেপ না নেয়ায় সরকারী সম্পত্তি দখলে আরো উৎসাহিত হচ্ছে এরা। ওই সরকারী জমিতে বর্তমানে আবাসিক হোটেল সী-কুইন কর্তৃপক্ষ বিশাল এলাকা দখল করে রির্সোট ও বহুতল ভবণ নির্মাণের কাজ করছে। সরকারী জমি দখল ও নির্মাণ কাজে স্থানীয় ভূমি অফিস বাধা দিয়ে আসলেও থেমে নেই নির্মাণ কাজ।

জানা যায়, ১৯৯৭ ইং সালে প্রথম দিকে এস এ ৬৪৪ খতিয়ানের ৫৩৭৫ দাগ থেকে মং মংচুমিন তালুকদার গংদের কাছ থেকে বেরীবাধঁ লাগোয়া ১একর ২০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন নাম মাত্র মুল্যে ক্রয় করেন হাজী চাঁন মিয়া হাওলাদার ও ইউপি সদস্য ফজলুল হক খাঁন গংরা। অথচ ৫৩৭৫ দাগে রেকর্ডীয় জমি রয়েছে মাত্র ২৪শতাংশ। ওই জমিতে দেড় শতাংশ করে ১৬টি প্লট তৈরী করা হয়। তৎকালীণ সংসদ সদস্য আনোয়ার উল ইসলাম ১৯৯৭ ইং সালের ২৩ মার্চ সেখানে পর্যটন মার্কেট নামে নাম করণ করে একটি মার্কেট উদ্ভোধন করেন। তখন সেখানে ছোট ছোট টিনের কয়েকটি ঘর ছিল। পরবর্তীতে টিনের ঘরের স্থলে আধাপাকা ও পাকা স্থাপণা গড়ে ওঠে। আস্তে আস্তে রেকর্ডীয় জমির পাশাপাশি পাউবো ও ভূমি প্রশাসনের খাস জমি কৌশলে দখলে নিয়ে যায় প্লট মালিকরা।

পরবর্তীতে এ প্লটের ও পাকা ভবনের মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে একাধিকবার। এসব জমি সরকারী দাবী করে ভূমি প্রশাসন ওয়ান ইলেভেনের সময় উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়। আবাসিক হোটেল তাজ, ক্যাসাব্যালাংকা, সান ফ্লাওয়ার,সী-প্যালেস,হোটেল সী-গার্লসহ কয়েকটি স্থাপণার আংশিক ভেঙ্গেও ফেলা হয়। মার্কেট মালিকরা তখন উচ্ছেদ ঠেকাতে রেকর্ডীয় জমি দাবী করে আদালতের স্বরণাপন্ন হলে আদালত উচ্ছেদে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। থেমে যায় সরকারী জমি উদ্ধার অভিযান। ২৪ শতাংশ রেকর্ডীয় জমির স্থলে দুই একরেরও বেশি জমি দখলে নিয়ে যায় দখলদাররা। যার মুল্য প্রায় একশো কোটি টাকা।

জানা যায়, এরই মধ্যে বিএস জরিপে ৭০ শতাংশ জমি দখলদারদের নামে দখল সত্বে জরিপ হয়েছে। উপজেলা ভূমি প্রশাসন এসব সরকারী জমিতে বহুতল ভবণ তৈরীর সময় বাধা দিলেও স্থানীয় তহসিলদারদের ম্যানেজ করে রেহাই পেয়ে যান দখলদাররা। দখল প্রক্রিয়া এভাবেই চলতে থাকে দিনের পর দিন। বছরের পর বছর। দিন যতই গড়িয়ে যাচ্ছে সরকারী জমি উদ্ধার তৎপড়তা ততই কঠিন হচ্ছে। আইনী মোকাবেলা করে এসব সরকারী জমি উদ্ধারে ভূমি প্রশাসন কিংবা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এ মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কেও ভূমি প্রশাসন কিছুই জানেন না।

আবাসিক হোটেল সী-কুইন মালিক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বর্তমানে পাউবো’র বেরীবাধের জমি ও ১নং খাস খতিয়ানের ২০ শতাংশেরও বেশি জমি দখল করে রির্সোট তৈরী করছেন। অথচ তিনি দখল সত্তে জমি কিনেছেন ৮শতাংশ। এ বিষয়ে কথা হয় মো.জাহাঙ্গীর আলমের সাথে। তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। মামলার ফয়সালা হলে মালিকানার জটিলতার নিরসন হবে। জমিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকাকালীন কিভাবে কাজ করছেন?,ভবন নির্মানের ক্ষেত্রে কোন অনুমোদন আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম জানান, আদালত থেকে এমন কোন নির্দেশনা নাই যে তিনি কাজ করতে পারবেন না। অতিরিক্ত জমি দখলের বিষয়ে তিনি বলেন আমার জমির দুই পাশে সরকারী জমি থাকলে তা আমার ভোগদখলে থাকবে এটাইতো নিয়ম। তিনি আরো বলেন,এ বিষয়ে পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্যের সাথে ঢাকায় বৈঠক হয়েছে। তিনি কাজ করতে বলেছেন।

সী-কুইন হোটেলের সাবেক শেয়ার হোল্ডার মো.জাহাঙ্গীর মোল্লা জানান, সাড়ে ৬ শতাংশ জমি ক্রয় করে সী-কুইন হোটেল নির্মান করি। পরবর্তীতে আঃ রহিম খান’র কাছ থেকে ৪ শতাংশ জমি ক্রয় করেন বর্তমান মালিক জাহাঙ্গীর আলম। বর্তমানে প্রায় ১ একর জমি দখল করে রিসোর্ট ও আবাসিক হোটেল নির্মান করছেন। এসব জমি সবই সরকারী। জাহাঙ্গীর মোল্লা আরো জানান, ৬৪৪ খতিয়ানের ৫৩৭৫ দাগে ২একর ৯৪ শতাংশ জমি ছিল। সেখান থেকে পাউবো বেরীবাধ নির্মানের লক্ষে ২ একর ৭০ শতাংশ জমি অধিগ্রহন করেন। ওই দাগে মাত্র ২৪ শতাংশ রেকর্ডীয় জমি অবশিষ্ট থাকলেও রাখাইনদের কাছ থেকে দলিল করার সময় ১একর ২০শতাংশ জমি দলিল করে নেয়া হয়। অসৎ উদ্দেশ্যে ৯৬ শতাংশ জমি অতিরিক্ত দলিল করা হয়।

কুয়াকাটা পৌর মেয়র আঃ বারেক মোল্লা বলেন,বহুতল ভবন নির্মানের অনুমোদণ দেওয়ার ক্ষমতা পৌর কর্তৃপক্ষের নেই। অবৈধ দখলদাররা বিভিন্ন জনের নাম ব্যবহার করে দখল কাজ চালিয়ে আসছে। তার কাছে অভিযোগ রয়েছে সী-কুইন কর্তৃপক্ষ অবৈধ ভাবে সরকারী জমি দখল করে ভবন নির্মাণ করছেন। তিনি উপজেলা সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বলেছেন।

কলাপাড়া উপজেলা সহকারী ভূমি কর্মকর্তা অনুপ দাস জানান, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নিতে পারছেন না তারা। তবে বর্তমানে সী-কুইন কর্তৃপক্ষের করা অবৈধ ভবণ নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব) মামুনুর রশিদ জানান,এ বিষয়ে তার জানা নাই। জমিতে কি ধরনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা তিনি জানেন না,উল্টো এ প্রতিবেধকের কাছে জানতে চান রায়ে কি লেখা রয়েছে। এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে আইনী ব্যবস্থা নিতে বলে দিবেন বলে তিনি জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ