Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি সাড়ে তিন লাখ মানুষ পানিবন্দী

বন্যার পানিতে ডুবে চার শিশুর মৃত্যু

কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০১৯, ৬:৫৭ পিএম

টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামে সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি ঘটছে। ধরলা, ব্রহ্মপূত্র,দুধকুমর ও তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার ৫৫টি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্লাবিত হয়েছে ৩৯০টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ। সিভিল সার্জন ডা: আমিনুল ইসলাম জানান, বন্যার পানিতে ডুবে ৪ শিশুর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের হাবিবুল্লাহ (৬), ফুলবাড়ীতে ১জন ও চিলমারী উপজেলায় ২ জন শিশু বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। দুর্গম এলাকায় এ মৃত্যুর ঘটনা হওয়ায় তাৎক্ষণিক ভাবে নাম নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এদিকে সোমবার সকালে কুড়িগ্রাম-নাগেশ^রী মহাসড়কের ৪/৫ জায়গায় হাঁটু পানি প্রবাহিত হওয়ায় ভারী যানচলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে দুরপাল্লার যাত্রীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে যাতায়াত করছে। নাগেশ^রীতে নদী তীর রক্ষা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এতে স্থানীদের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে কুড়িগ্রামে ৩টি পৌরসভাসহ ৭৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৫টি ইউনিয়নের ৩৯০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রলংকারী বন্যায় ৭৩ হাজার ৫১১টি পরিবারের প্রায় সাড়ে ৩লাখ মানুষ দুর্ভোগে পরেছে। বন্যায় ২৭৫ প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ২২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার রাস্তা ও ১৬টি ব্রীজ/কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ৯শ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ায় ৫২২ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নাগেশ^রীর বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মুড়িয়া এলাকায় দুধকুমর নদ তীররক্ষা বাঁধের একাংশ ছিঁড়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পরেছে এলাকার মানুষ। এছাড়াও হুমকীতে রয়েছে সদর উপজেলার বাংটুর ঘাট ও সারডোব তীররক্ষা বাঁধ। এখানে চর বড়লই বাংলাবাজার এলাকায় পাকা সড়ক ভাঙনের উপক্রম হয়েছে। নাগেশ^রী-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের পাটেশ^রী পুরাতন বাসস্টান্ড, উত্তর কুমরপুর মোড় ও চন্ডিপুর এলাকায় ধরলা নদীর পানি সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে রাস্তা রক্ষায় ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। কুড়িগ্রাম সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন সরজমিন পরিদর্শন করে এই ব্যবস্থার কথা সাংবাদিকদের জানান।
এদিকে উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের ব্যাপারীগ্রামে বাড়ীর পিছনে খেলতে গিয়ে হাবিবুল্লাহ (৬) নামে এক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। সে ওই গ্রামের কৃষক মাহবুরের পূত্র। হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো: রুমানুজ্জামান জানান, সোমবার বিকেল পর্যন্ত ধরলা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার ১১২ সে.মিটার, ব্রহ্মপূত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ১০৮ ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৭৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে তিস্তার পানি কমে গিয়ে ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে।
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো: হাফিজুর রহমান জানান, কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি সমন্বিতভাবে মোকাবেলার জন্য গতকাল রাতে পানি সম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের উপস্থিতিতে এক বিশেষ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সকল বিভাগকে সক্রিয় থেকে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সচিব প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা জানান। সোমবার জেলার ৩টি বন্যা দুর্গত এলাকায় সচিত ২ হাজার পরিবারের প্রতিজনকে ১৫ কেজি করে চাল বিতরণ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ