Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মরা পদ্মায় বাড়ছে ঘোলা পানির স্রোত

রেজাউল করিম রাজু | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০১৯, ৩:১১ পিএম

মরা গাঙ্গ পদ্মায় বান ডেকেছে। ফারাক্কার বিরুপ প্রভাবের কারনে বছরের আট নয় মাস বালিচরের নীচে চাপা থাকলেও আষাঢ় শ্রাবনে ফের জেগে ওঠে। এবার একেবারে বিদায় লগ্নে আষাঢ় খানিকটা ভারী বৃষ্টি ঝরিয়েছে। সাথে ফারক্কার ওপারেও বিশেষ করে বিহার রাজ্য ও মালদায় পানির চাপ বাড়ায় ফারাক্কার কয়েকটি গেট খুলে দেয়ায় এবারের মরা পদ্মায় শুরু হয়েছে ঘোলা পানির ¯্রােত। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক জানান, পদ্মায় প্রতিদিন গড়ে ত্রিশ চল্লিশ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। গতকাল পানির মাপ ছিল প্রায় ১৩ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। বিপদসীমা হলো ১৮ দশমিক পঞ্চাশ সেন্টিমিটার। এখনো অনেক নীচেই রয়েছে পানির প্রবাহ। সাধারনত পানি বাড়ার প্রবনতা থাকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন পদ্মায় পানি বাড়া কমা সবকিছু নির্ভর করে ভারতের ফারাক্কা ব্যারেজের উপর। তারা সব নিয়ন্ত্রন করে। এপারের বর্ষন নদীর পানি বাড়ানোয় তেমন ভূমিকা নেই। রাজশাহী অঞ্চলে পদ্মা ও মহানন্দার পানি বৃদ্ধি পেলে বন্যা দেখা দেয়। যখন চীন ও ভারতে বেশী বৃষ্টিপাত হয় তখন পানির চাপ বাড়ে। ফারাক্কা সংলগ্ন জেলা মালদা ও বিহার রাজ্যে বন্যা দেখা দেয়। সেই বন্যার চাপ সামলাতে ফারাক্কার প্রায় সবকটি গেট খুলে দেয়া হয়। প্রবল বেগে ধেয়ে আসে পানি। আর গত সাড়ে চল্লিশ দশকে প্রমত্ত পদ্মার বুকে বালি জমতে জমতে নদীর তলদেশ আঠারো মিটার ভরে গেছে। ধারন ক্ষমতা হারিয়েছে। এক সময়ের প্রমত্ত পদ্মা নামের নদীটি বছরের দশ মাস খাল সদৃশ্য রুপ নিয়ে ক্ষীন ধারায় বয়ে চলে। ফলে বর্ষার সময় ওপারের আসা পানি ধারন না করতে পেরে দুকুল ছাপিয়ে যায়। একুটুতে দেখা দেয় বন্যা। ডোবে ফসলের ক্ষেত সাজানো সংসার। ফি বছরই এমনি হয়। এটাই পদ্মা পাড়ের মানুষের নিয়তি হয়ে দাড়িয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ওপারের বন্যার চাপ কমাতে ফারাক্কার সবকটি গেট এক সাথে খুলে দিলে যেমন আমাদের এখানে বন্যা হয়। আবার ওপারের বন্যার পানির চাপ কমে গেলে দ্রুত ফারাক্কার পাষান গেট গুলো ফের বন্ধ করে দেয়া হয়। এসময় ক্ষতিটা আরো বেশী হয়। কারন তাড়াতাড়ি পানি নেমে যাবার কারনে ভাঙ্গনের প্রবনতা বেড়ে যায়। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে মানুষ জমি বসতভিটা হারায়। এ সময়টা রাজশাহী নগরী পড়ে ভাঙ্গনের ঝুকিতে।
পদ্মা নদী সংলগ্ন রাজশাহী মহানগরীর পাশ দিয়ে শহর রক্ষা বাঁধ রয়েছে এগারো কিলোমিটার। সোনাইকান্দি থেকে বুলনপুর পর্যন্ত তীর সংরক্ষন করা হয়েছে। শ্রীরামপুর থেকে পঞ্চবটি পর্যন্ত তীর সংরক্ষন করা হয়েছে। কিন্তু পঞ্চবটি থেকে পূর্বে তালাইমারী পর্যন্ত তীর সংরক্ষন করা হয়নি। গ্রোয়েন টি-বাঁধ ও পঞ্চবটি আই বাঁধ দিয়ে নদীর ¯্রােতকে কোল থেকে দক্ষিনে ঠেলে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে রক্ষনা বেক্ষনের অভাবে নদী তীর সংরক্ষন ও গ্রোয়েন দুটির অবস্থা ভীষন নাজুক। প্রতি বছর বন্যার সময় ঝুকি হয়ে দেখা দেয়। সিসিব্লক জিও ব্যাগে বালির বস্তা ফেলে পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা চলে। রক্ষায় ব্যায় হয় কোটি কোটি টাকা। নগরবাসীকে শংকায় রেখে এটি আয় ও ব্যায়ের একটি ভাল খাত এমন মন্তব্য সচেতন মহলের। আবার বেশকিছু ঠিকদারের অভিযোগ জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিলেও মাসের পর মাস ঘুরে বিল পাওয়া যায়না।
গতকাল নগরীর তালাইমারী হতে সোনাইকান্দি পর্যন্ত নদীর তীর পর্যবেক্ষন করে দেখা যায় পদ্মার কোলে ঘোলা পানি জমতে শুরু করেছে। মূল নদীর ¯্রােত রয়েছে তীর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে। মাঝখানে কাশবনে ভরা বিশাল চর। নদীর কোলে পানি আসায় অনেকে মাছ ধরার চেস্টা করছে। মিলছে কুচো চিংড়ি ঘেড়ে বেলে ঘেড়ে জাতীয় মাছ। তালাইমারী হতে পঞ্চবটি আই বাঁধ পর্যন্ত তীর সংরক্ষন নেই। আবার উত্তরে শহর রক্ষা বাঁধও অবৈধ দখলে। পঞ্চবটি আইবাঁধ হতে সেখেরচক হয়ে শ্রীরামপুর পর্যন্ত তীর সংরক্ষন করা হয়েছে। সে গুলোর অবস্থাও নাজুক। ১৯৯৮ সালে নদীর তীর সংরক্ষনের কাজ করা হয়। এরপর কিছু সংস্কার কাজ ছাড়া আর কিছুই হয়নি। কোথাও ম্যাট্রেসিং করা তীর দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে নানা স্থাপনা। কোথাও দখলে অস্তিত্ব হারিয়েছে তীর সংরক্ষনের ম্যাট্রেসিং। শহর রক্ষা বাঁধ আর তীর দখলে নগরী রয়েছে ঝুকির মুখে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা স্বীকার করে বলেন ১৯৯৮ সালে তীর সংরক্ষন কাজ করার পর তেমন কিছুই আর করা হয়নি। শহর রক্ষা মূল গ্রোয়েন টি-বাঁধের পশ্চিমে বাঁধের অবস্থা ভীষন নাজুক। ক’বছর আগে বিশাল এলাকা মেট্রেসিং অবস্থায় ধ্বসে যায়। ঝুকির মুখে রয়েছে বাঁধ সংলগ্ন রাজশাহী পুলিশ লাইন ও মে্েরটাপলিটন পুলিশ ব্যারাক।
পুলিশ লাইনের সামনের শহর রক্ষা বাঁধের। বাঁধের অবস্থা সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, দেড়শো মিটার স্থান বেশ ঝুকিপূর্ন অবস্থায় রয়েছে। স্থানটি সম্পন্নভাবে নির্মানের জন্য পরিকল্পনা করে আটকোটি টাকার প্রকল্প মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছিল তা অনুমোদন পায়নি। তবে এবারো ঝুকি মোকাবেলর জন্য প্রস্তুতি রয়েছে।
টি-বাঁধ থেকে সোনাইকান্দি পর্যন্ত বেশ পানি দেখা যায়। কদিন আগে এলাকাটিতে ড্রেজিং করা হয়েছে। মরা পদ্মা জেগে ওঠা দেখতে সকাল বিকেল নদী তীর ভীড় বাড়ছে। বিনোদনস্পটগুলো সরগরম হচ্ছে। নদীর ঘোলা পানিতে নৌকায় করে ঘুরছে। গত রোববার টি-বাঁধ এলাকায় বিকেলে নৌকায় করে ঘুরতে গিয়ে বেঞ্চ উল্টো নদীতে পড়ে যায় দুই তরুনী। বেঞ্চ ধরে ভেসে থেকে তারা ডুবে যাবার হাত থেকে রক্ষা পান। নৌ ভ্রমনকারীদের জন্য ছোট বড় অনেক নৌকা দেখা যায়। তবে নজরে পড়েনি লাইফ জ্যাকেট। বিষয়টা নৌ পুলিশ ও প্রশাসন ভেবে দেখতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মরা পদ্মা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ