বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোরআনে পাঞ্জেগানা নামাজের ওয়াক্ত প্রসঙ্গে আমরা আলোচনা করছিলাম। গত আলোচনায় আমরা একটি আয়াতের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি। আজ আরও দু’টি আয়াত নিয়ে আলোচনা করতে চেষ্টা করব।
২. সূর্য ঢলে যাবার পর থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত (জোহর, আসর, মাগরিব ও এশা) নামাজ কায়েম কর এবং আদায় কর ফজরের নামাজ। নিশ্চয়ই ফজরের নামাজ ফেরেশতাদের উপস্থিতির সময়। (সূরা বনি ইসরাঈল আয়াত- ৭৮)
এ আয়াতেও পাঞ্জেগানা নামাজের উল্লেখ রয়েছে, বিভিন্ন তাফসির গ্রন্থ হতে যা স্পষ্ট। উদাহরণ স্বরূপ তাফসিরে ‘মাআরেফুল কোরআনে’ এ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা উল্লেখযোগ্য। তাতে বলা হয় : ‘পাঞ্জেগানা নামাজের নির্দেশ। অধিকাংশে তফসিরবিদের মতে এ আয়াতটি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ নির্দেশ। কেননা আয়াতটিতে ‘দুলুক’ শব্দের অর্থ আসলে ঝুকে পড়া। সূর্যের ঝুকে পড়া তখন শুরু হয়, যখন সূর্য পশ্চিমদিকে ঢলে পড়ে, সূর্যাস্তকেও দুলুক বলা যায়। কিন্তু অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ীগণ এ স্থলে শব্দের অর্থ সূর্যের ঢলে পড়াই নিয়েছেন’। (কুরতুবী, মাযহারী, ইবনে কাসীর)।
অতঃপর বলা হয়েছে: ‘ইলা গাসাকিল লাইল’- গাসাক শব্দের অর্থ রাত্রির অন্ধকার সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়া। ইমাম মালেক হযরত ইবনে আব্বাস থেকে এ তফসীর বর্ণনা করেছেন। এর শাব্দিক অর্থের পর বলা হয়- এভাবে ‘লিদুলুকিশ শামছি ইলা গাসাকিল লাইল’ এর মধ্যে চারটি নামায এসে গেছে। যোহর, আসর, মাগরিব ও এশা। এদের মধ্যে দুই নামাজের প্রথম ওয়াক্ত ও বলে দেয়া হয়েছে যে, যোহরের প্রথম ওয়াক্ত সূর্য ঢলার সময় থেকে শুরু হয় এবং এশার সময় ‘গাসাকে লাইল’ অর্থাৎ অন্ধকার পূর্ণ হয়ে গেলে হয়। এ কারণেই ইমাম আযম আবু হানিফা (রা.) সে সময় কে এশার ওয়াক্ত সাব্যস্ত করেছেন। যখন সূর্যাস্তের লাল আভার পর সাদা আভাও অস্তমিত হয়।
এটা সবারই জানা যে, সূর্যাস্তের পর পর পশ্চিম দিগন্তে লাল আভা দেখা দেয়। এর পর এক প্রকার সাদা আভা দিগন্তে ছড়িয়ে থাকে। এর পর এই সাদা আভাও অস্তমিত হয়ে যায়। বলাবাহুল্য, দিগন্তের আভা শেষ হয়ে গেলেই রাত্রির অন্ধাকার পূর্ণতা লাভ করে। এই আয়াতের এই শব্দের মধ্যে ইমাম আবু হানিফার মাযহাবের দিকে ইঙ্গিত রয়েছে। অন্য ইমামগণ লাল আভা অস্তমিত হওয়াকে এশার ওয়াক্তের শুরু সাবস্ত করেছেন এবং একই ‘গাসাকুল লাইল’-এর তাফসির ঠিক করেছেন।
আয়াতের উদ্ধৃতাংশে চার ওয়াক্ত নামাজের বর্ণনা পাওয়া যায়। আয়াতের পরবর্তী অংশে বাকি এক ওয়াক্তের উল্লেখ রয়েছে। তার ব্যাখ্যাও একই তাফসিরে এইভাবে প্রদান করা হয়েছে : ‘ওয়া কোরআনাল ফাজরি’- এখানে কোরআন শব্দ বলে নামাজ বোঝানো হয়েছে। কেননা কোরআন নামাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইবনে কাসীর, কুবতুবী, মাযহারী প্রমুখ অধিকাংশ তাফসিরবিদ এ অর্থই লিখেছেন। কাজেই আয়াতের অর্থ এই দাঁড়ায় যে, ‘লিদুলুকিশ শামছি ইলা গাসাকিল লাইল’ বাক্যে চার নামাজের পর বর্ণনা ছিল এবং এতে পঞ্চম নামাজের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। একে আলাদা করে বর্ণনা করার মধ্যে এই নামাজের বিশেষ গুরুত্ব ও ফযিলতের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে (আয়াত-৭৮৬ বাংলা সংস্করণ)। বর্ণিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজরের নাম উল্লেখ্য। এ নামাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
৩. তেমনি আয়াতে মধ্যবর্তী নামাজ ছালাতুল ওস্তা বলে আসরের নামাজকে বুঝানো হয়েছে। যা মানুষের কর্মব্যস্ততার সময় হওয়ায় এ নামাজ না পড়ার প্রবণতা সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং সংশ্লিষ্ট আয়াতে আসরের নামাজের প্রতি অন্যান্য নামাজের ন্যায় বিশেষ যত্মবান হবার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। আয়তটি হচ্ছে-‘হাফেযু আলাছ ছালাওয়াতি ওয়াছ ছালাতিল ওস্তা। ওয়াকুমু লিল্লাহি কানেতিন’। -(সূরা বাকারাহ, আয়াত ২৩৮) অর্থাৎ ‘তোমরা সালাতের প্রতি যত্মবান হবে বিশেষত মধ্যবর্তী সালাতের এবং বিনীতভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্য দন্ডায়মান হও’।
কোনো কোনো তরজমা এরূপ : তোমরা নামাজসমূহ ও মধ্যবর্তী নামাজকে সংরক্ষণ কর এবং বিনীতভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্য দন্ডায়মান হও। ছালাতুল ওস্তা বা মধ্যবর্তী নামাজ এটি কোনো সময়ের নামাজ, তা নিয়ে মতভেদ আছে, অধিকাংশের মতে আসরের নামাজকেই মধ্যবর্তী বলা হয়ে থাকে। (বোখারী ও মুসলিম)।
ইমামগণের মধ্যে হযরত ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এবং অধিকাংশ সাহাবী-এর মাজহাব এটা যে, এর দ্বারা আসরের নামাজ বুঝানো হয়েছে, হাদীসসমূহ এর প্রমাণ বহন করে। বিভিন্ন তাফসির গ্রন্থে ও একই মত বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং এ আয়াতে আসরের নামাজের বর্ণনা সরাসরি এবং স্পষ্টভাবে রয়েছে। পূর্বে সূরা হুদ ও সূরা বনি ইসরাইলে পাঞ্জেগানা নামাজের প্রত্যক্ষ বিবরণ ও রয়েছে। অতএব, বিনাদ্বিধায় বলা যায় যে, কোরআনে যেমন নামাজের সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে, তেমনি পাঞ্জেগানা নামাজের ওয়াক্তের বিবরণও প্রদত্ত হয়েছে। কাজেই এই ব্যাপারে আর কোনো সংশয় সন্দেহের অবকাশ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।