Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

‘ভিক্ষুরা ফেসবুকে বিদ্বেষ প্রচার করছে’

শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারে বৌদ্ধ জঙ্গিবাদের উত্থান ৪

নিউ ইয়র্ক টাইমস | প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

খিন মার মার কি বলেন, আমি বহু বৌদ্ধ ভিক্ষুর সাক্ষাতকার নিয়েছি। এটা সুস্পষ্ট যে তারা তাদের বিদ্বেষ প্রচারে ফেসবুক ব্যবহার করছেন। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা জেনেছেন যে পাশ্চাত্যে ইসলামফোবিয়া বিরাজ করছে। তারা মনে করছেন তা তাদের মনোভাবকে যৌক্তিক প্রতিপন্ন করছে।

বৌদ্ধধর্ম একজাতি
সামাজিক মাধ্যমে গল্পটি এভাবে ছড়ানো হয়েছে- এক সময় এশিয়ায় বিশাল বৌদ্ধ সাম্রাজ্যের আধিপত্য ছিল। তারপর সাত শতকে মুসলিম আক্রমণকারীরা এশিয়া মহাদেশ ছিন্নভিন্ন করতে শুরু করে। বর্তমানের পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার বৌদ্ধ শাসকরা মুসলমানদের কাছে পরাজিত হন। এই অসম্মান এ শতকেও অব্যাহত থাকে যখন ২০০১ সালে তালিবানরা আফগানিস্তানের বামিয়ানে বিশাল বৌদ্ধমূর্তি বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেয়। তবে শুধু ভিক্ষুরাই তাদের ধর্মের রক্ষক নয়। এটাই মিয়ানমারে সামাজিক পরিবর্তনের যথাযথ সময়। বিশেষ করে কতিপয় নারী দেশের যুবসমাজের মধ্যে যে বস্তুবাদের উত্থান দেখছেন তার মোকাবেলার জন্য নৈতিক শক্তি কামনা করছেন। তাদের ভয় যে মঠগুলো আর পণ্যসজ্জিত মলগুলোর মত আকর্ষণীয় নয়।
এ উদ্বেগকে গুরুত্ব প্রদান করছে এমন একটি গ্রæপ হল জাতীয়তা ও ধর্ম সুরক্ষা কমিটি বা মা বা থা। এ চরম উগ্রবাদী নিষিদ্ধ সংগঠনটি রোববার স্কুল পরিচালনা ও অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যা গোটা মিয়ানমারে জনপ্রিয়। বৌদ্ধধর্মকে রক্ষার অঙ্গীকারে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত মা বা থা সফল ভাবে কিছু আইন চালু করেছে যা বৌদ্ধ মহিলাদের নিজ ধর্মের বাইরে বিয়ে করা কঠিন করেছে।

শ্রীলঙ্কায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে অন্তর্বাস তৈরির অভিযোগ রয়েছে যা বৌদ্ধ নারীদের বন্ধ্যা করে বা বৌদ্ধদের খাবার তরকারির মধ্যে জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি মিশিয়ে দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। তাই সেখানে তাদের ঘৃণা করা হয়। সে রকম মিয়ানমারেও বৌদ্ধরা প্রায়ই মুসলমানদের বিরুদ্ধে যৌন বিষয়ে ঘৃণা প্রকাশ করে থাকেন।
২০১২ সালে একজন মুসলিমের বিরুদ্ধে এক বৌদ্ধ নারীকে ধর্ষণের খবরের পর মিয়ানমারে মারাত্মক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়। উভয় দেশেই বৌদ্ধদের দাবি যে মুসলমানরা ‘প্রজনন জিহাদ’ শুরু করছে।

নরওয়েজিয়ান স্কুল অব থিওলজির রিলিজিয়াস স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক ইসেলিন ফ্রাইডেনলান্ড বলেন, মুসলিম পুরুষদের বহু স্ত্রীর সাথে উচ্চ প্রজনন ক্ষমতার একটি ধারণা প্রচলিত আছে। মা বা থা এটাকে ব্যবহার করেছে এবং খাঁটি বৌদ্ধ নারীদের জাতির প্রতীক করে তুলেছে যারা মুসলিম পুরুষদের দ্বারা ধর্ষিত হওয়ার বিপদে আছে।
আসলে তারা হচ্ছে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির বিদ্রোহের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ধর্ষণকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মারাত্মক অস্ত্র হিসেবে ঠান্ডা মাথায় যৌন নির্যাতন চালানোর জন্য মিয়ানমার সামরিক বাহিনীকে দায়ী করেছে।

মা বা থা ভিক্ষুরা এ ধরনের রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছে। ২০১৭ সালে তারা কার্যত নিষিদ্ধ হওয়া সত্তে¡ও তাদের বিদ্বেষী তৎপরতা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে। উ রারজা নামে এক মা বা থা ভিক্ষু রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে অপমানজনক ভাষা ব্যবহার করে বলেন, কেউ বাঙালি নারীদের ধর্ষণ করেছে বলে আমি ভাবতেও পারি না। কারণ তারা কুৎসিত ও বিরক্তিকর। (আগামীকাল শেষ পর্ব)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ