Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফাইনালে সেই নিউজিল্যান্ড

মো: জাহিদুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

সেমিফাইনালের আগমূহুর্ত পর্যন্ত ফেবারিট তত্তে¡র বিশ্লেষণে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার পাল্লাই ছিল ভারী। অথচ গ্রæপ পর্বের শীর্ষে থাকা দল দুটোই বাদ পড়েছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের হারের সমাপ্তিটা লড়াইয়ের মাধ্যমে হলেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যারন ফিঞ্চের দলের হারটা হয়েছে একপেশে ও হতাশজনক। কিন্তু তাতে বিশ্বসেরা মঞ্চের মাহাত্ব বেড়েছে বৈ কমেনি এক রত্তিও! কেন না, ক্রিকেট বিশ্ব যে পেতে যাচ্ছে তাদের নতুন চ্যাম্পিয়ন, ষষ্ঠ চ্যাম্পিয়ন!

ক্রিকেটের মর্যাদার আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ব্যাতীত কারোরই শিরোপা জয়ের ইতিহাস নেই। এই পাঁচ দলের কেউই নেই এবারের ফাইনালে। সুযোগ এসেছিল ২০১৫ বিশ্বকাপে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডকে সে ফাইনালে হেসেখেলে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তাই ১৯৯৬ সালের পর থেকে ২৩ বছর পের ফের একবার পালাবদল হচ্ছে ক্রিকেট সা¤্রাজ্যে, মুকুট উঠছে নতুন রাজার মাথায়। ১৯৭৫ সালে হওয়া বিশ্বকাপের প্রথম আসরের পর থেকে ষষ্ঠ চ্যাম্পিয়নের দেখা পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৪৪ বছর। শিরোপা উঁচিয়ে ধরার ১০ দলের লড়াই এখন ২ দলের। আগামীকাল ভারতকে বিদায় করা নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে বিদায় জানানো ইংল্যান্ড ক্রিকেটতীর্থ লর্ডসে লড়বে শিরোপা নিষ্পত্তির লড়াইয়ে। ক্রিকেটপ্রেমীরা পাবে নতুন চ্যাম্পিয়ন। লিখেছেন
-মো: জাহিদুল ইসলাম


বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে ভারতকে কাঁদিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে জায়গা করে নেয় নিউজিল্যান্ড। টসে জিতে ভারতের সামনে ২৪০ রানের লক্ষ্য দেয় কিউইরা। ভারতীয় লম্বা ও বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপের সামনে এই রান আর তেমন কি? আলোচনা চলছিল এমনই। কিন্তু কন্ডিশনের বিচারে এই রানটিই যে অনেক বড় তা বুঝিয়ে দিয়েছেন ম্যাট হেনরি- ট্রেন্ট বোল্টরা। ম্যাচ জয়ের পরও প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারতকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। সেই সঙ্গে বাস্তবতাটাও বুঝিয়ে দিলেন কিউই দলপতি, ‘ভারত বিশ্বমানের দল। ক্রিকেট খেলার ধরনটাই এমন পরিবর্তনশীল, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে হতে পারে যে কোনো কিছুই। ওদের দারুণ সব ক্রিকেটার আছে। গভীরতা অনেক বলে যোগ্য হিসেবেই বিশ্বের ১ বা ২ দুই নম্বর দল তারা। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে জিততে পারে যে কেউ।’

বিশ্বকাপের আগে ইংল্যান্ড, ভারত, অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে যথেষ্ঠ আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আলোচনার টেবিলে কিউইরা ছিল উপেক্ষীত। অথচ আসরের শুরুতেই তাক লাগিয়ে দেয় উইলিয়ামসনের দল। টানা ছয় ম্যাচে অপরাজিত থেকেছে তারা। সেমির দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল তারা। কিন্তু হঠাৎ করেই ছন্দপতণ ঘটে কিউই শিবিরে। বিশ্বকাপে নিজেদের সপ্তম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে প্রথম হার দেখে উইলিয়ামসনের দল। পরের দুই ম্যাচেও হারের বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনি বø্যাকক্যাপসরা। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের কাছে হেরে যায় তারা। অবশ্য রান রেটে এগিয়ে থাকায় পাকিস্তানের সমান ১১ পয়েন্ট পেয়েও শেষ চারে যায়গা করে নেয় দলটি। আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে চার নম্বরে থাকা দলটি এবারের আসরের গ্রæপ পর্বের বৈতরণী পেরিয়েছে চারে থেকেই।

টানা দ্বিতীয় বারের মতো দলকে বিশ্বকাপের ফাইনালে নিতে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ৯ ম্যাচে ২টি সেঞ্চুরি ও ২টি হাফসেঞ্চুরিতে ৫৪৮ রান তার অধিকারে। এবারের আসরে কিউইদের মধ্যে তিনিই একমাত্র শীর্ষ পাঁচ রান সংগ্রাহকের তালিকায় আছেন। আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান রস টেলর আছেন দলের মধ্যে দ্বিতীয অবস্থানে। তিনটি পঞ্চাশোর্ধ রানের ইনিংস আছে তার নামের পাশে। সর্বোচ্চ ৮২ রান তোলা এই ব্যাটসম্যানের মোট রান ৩৩৫। একটি মাত্র অর্ধশতকে জিমি নিসামের সংগ্রহ ২১৩ রান। দুটি হাফসেঞ্চুরিতে কলিন ডি গ্রান্ডহোম করেছেন ১৭৪ রান। এবারের আসরে কিউই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মার্টিন গাপটিলের ব্যাট বারবারই হতাশ করেছে সমর্থকদের। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৭৩ রানের ইনিংসের পর তার কাছ থেকে কোন ভালো শুরু পায়নি দল। ৯ ম্যাচে ২০.৮৭ গড়ে তার মোট রান ১৬৭। যা ক্রমেই দু:চিন্তা বাড়াচ্ছে উইলিয়ামসনের।

কিউই দলের মূল শক্তি তাদের বোলিং। ব্যাট হাতে সফল না হলেও বোলারদের দক্ষতায় পাস নম্বর পেয়েই ফাইনালে উঠেছে দলটি। লোকি ফার্গুসন ও ট্রেন্ট বোল্ট এবারের আসরে শীর্ষ দশ উইকেট শিকারিদের তালিকায় আছেন। ১৮ উইকেট নিয়ে চতুর্থ স্থানটি দখল করে নিয়েছেন ফার্গুসন। আর এবারের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক নিজের নামের পাশে লিখে বোল্টের শিকার ১৭টি উইকেট। ম্যাট হেনরি এ পর্যন্ত প্রতিপক্ষ ১৩ ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়ে আছেন তারপরেই। গতির তারকাদের পাশে মিডিয়াম পেসার জিমি নিসামও তুলে নিয়েছেন ১২টি উইকেট। প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে উইলিয়াসন প্রায়ই তাকে ব্যবহার করে থাকেন। স্পিন আক্রমনে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করেন মিচেল স্যান্টনার। মাত্র ৪.৮৭ ইকোনমি রেটে ৬ উইকেট তুলে নিয়েছেন তিনি। এছাড়া কলিন ডি গ্রান্ডহোমও বিভিন্ন সময় আক্রমনে আসছেন। পিচে স্পিন আক্রমনে সুবিধা দেখলে নিজেও বল করছেন উইলিয়ামসন।

বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ছয়বার সেমিফাইনাল খেলা দল নিউজিল্যান্ড। শেষচারে অপয়া দল হিসেবেই দেখা হতো কিউইদের। সেই অপবাদ ঘরের মাঠে গত বিশ্বকাপ আসরেই ঘুচিয়ে দিয়েছে তারা। অবশ্য গত বিশ্বকাপের ফাইনালে তেমন একটা লড়াই করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। প্রবিবেশী অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে রানার্সআপ হয়ে থাকতে হয় তাদের। এবার যেহেতু তরতাজা ফাইনালের অভিজ্ঞতা নিয়ে মাঠে নামবে দলটি, তাই একটু বাড়তি অনুপ্রেরণাও পাবে কেন উইলিয়ামসনরা। তাছাড়া বিশ্বকাপের মুখোমুখি লড়াইয়েও এগিয়ে কিউইরাই। তবে কি উইলিয়ামসনের হাতেই উঠছে শিরোপা?

যেভাবে ফাইনালে
গ্রæপ পর্ব
প্রতিপক্ষ ফল
শ্রীলঙ্কা ১০ উইকেটে জয়ী
বাংলাদেশ ২ উইকেটে জয়ী
আফগানিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী
ভারত পরিত্যক্ত
দক্ষিণ আফ্রিকা ৪ উইকেটে জয়ী
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ রানে জয়ী
পাকিস্তান ৬ উইকেটে হার
অস্ট্রেলিয়া ৮৬ রানে হার
ইংল্যান্ড ১১৯ রানে হার
সেমিফাইনাল
ভারত ১৮ রানে জয়ী

 

 



 

Show all comments
  • Dr. S. M. Shamsur Rahman ১৪ জুলাই, ২০১৯, ৭:০৮ এএম says : 0
    One sided analysis ignoring the strength of England cricket team.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ