বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোরআন মাজীদ তাকওয়া বা পরহেজগারীকেই নেকীর মূল উৎস ও সৎকর্মের প্রাণ বলে অভিহিত করেছে। সূরা বাকারায় ইরশাদ হয়েছে, ‘কিন্তু সততার তাৎপর্য তো শুধুমাত্র এই যে, কেউ আল্লাহকে ভয় করবে এবং তাকওয়া অবলম্বন করবে।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৮৯)। সূরা হজ্জে কোরবানির নির্দেশ দেয়ার পর ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের কোরবানির গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাম্যও নয়। আর তা আল্লাহর কাছে পৌঁছায়ও না; বরং অন্তরের যে প্রেরণা ও উদ্দীপনা কোরআনীর নির্দেশ পালনে উদ্বুদ্ধ করে অর্থাৎ, তাকওয়া, তা-ই শুধু কাম্য। আর তাই আল্লাহর দরবারে পৌঁছায় এবং গৃহীত হয়। বস্তুত সেটাই হলো আমলের প্রাণ। বলা হয়েছে, ‘তোমাদের কোরবানির গোশত এবং রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না। তার দরবারে যা কিছু পৌঁছায় তাহল তোমাদের অন্তরের তাকওয়া। (সূরা হাজ্জ : আয়াত ৩৭)।
এজন্য অন্য আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, আল্লাহ সেসব আমলই কবুল করেন যার কর্তার ভেতরে তাকওয়া বিদ্যমান থাকবে। সে আমল তাকওয়ার বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ হবে। অর্থাৎ, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং আখেরাতের ভাবনা সে আমলের উদ্দীপক হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ পরহেজগারদের আমলই কবুল করেন।’ (সূরা মায়েদাহ : আয়াত ২৭)।
কোরআন মাজীদে তাকওয়া বা পরহেজগারীর শিক্ষা ও দাওয়াত উৎসাহোদ্দীপক ভঙ্গিতেও দেয়া হয়েছে এবং ভীতিসঞ্চারক ভঙ্গিতেও। অর্থাৎ, অনেক ক্ষেত্রে তো মাগফেরাত (ক্ষমা-মার্জনা) ও রহমত এবং জান্নাত ও আল্লাহর সন্তোষ হেন সুসংবাদ শুনিয়ে মানুষকে তাকওয়ায় উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আবার অনেক আয়াতে তেমনিভাবে কেয়ামত ও আখেরাতের ভয়ঙ্কর দৃশ্যাবলীর কথা উল্লেখ করে মানুষের অন্তরে তাকওয়া ও খোদাভীতি সঞ্চারের চেষ্টা করা হয়েছে। প্রথমে কয়েকটি ভীতিসঞ্চারক আয়াত উদ্ধৃত করা হলো।
সূরা হজ্জে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আদম সন্তানগণ, নিজেদের পালনকর্তাকে ভয় কর। বিশ্বাস কর, কেয়ামতের ভ‚কম্পন হবে অত্যন্ত কঠিন ঘটনা। যেদিন সে কেয়ামত তোমাদের সামনে এসে উপস্থিত হবে (এবং তোমরা তার ভয়াবত দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে পারবে), তখন তোমাদের অবস্থা এমন হবে যে, কারও বিষয়ে কারও হুশ থাকবে না। এমন কি (সদ্যজাত) শিশুকে স্তন্যদাকারিণী মায়েরা স্তন্যদান করতে ভুলে যাবে। গর্ভবতীদের গর্ভপাত ঘটে যাবে। আর তোমরা সব মানুষকে দেখবে নেশাগ্রস্তের মত অজ্ঞান অবস্থায় অথচ তারা কোনো নেশায়া মত্ত থাকবে না। কিন্তু আল্লাহর আযাব অত্যন্ত কঠোর। (সে ভয়াবহতা ও ভীতি-আতঙ্কের দরুন তাদের এহেন অবস্থা হবে।)’ (সূরা হাজ্জ : আয়াত ১-২)।
সূরা লুকমানের শেষে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানুষগণ, তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর এবং সেদিনকে ভয় কর যেদিন কোনো পিতা তার পুত্রের পক্ষ থেকে কোনো দাবি বা চাহিদা পূরণ করতে পারবে না, নাই বা কোনো পুত্র নিজের পিতা-মাতার পক্ষ থেকে কোনো দাবি পূরণ করতে পারবে। (বরং প্রত্যেকেরই নিজ নিজ ভাবনা হবে।) বিশ্বাস কর, আল্লাহর অঙ্গীকার সম্পূর্ণ সত্য ও অটল। সুতরাং পার্থিব এ জীবন যেন তোমাদের প্রতারিত না করে। তেমনিভাবে আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে প্রতারক শয়তান যেন তোমাদের কোনো রকম ধোঁকায় না ফেলে। (সূরা লুকমান : আয়াত ৩৩)।
এ আয়াত দু’টিতে তাকওয়া তথা অন্তরে খোদাভীতি সৃষ্টি করার জন্য কেয়ামত ও আখেরাতের কঠোরতা ও ভয়াবহ দৃশ্যাবলী বিধৃত করা হয়েছে। (এটা নিঃসন্দেহে এমন এক বিবরণ যে, কোনো অন্তরে এ বিষয়টি শুনেও যদি খোদাভীতি ও আখেরাত চিন্তা সৃষ্টি না হয় তাহলে সে অন্তর নিঃসন্দেহে পাথরের অন্তর।)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।