Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লাখ লাখ নাগরিককে বিদেশী ঘোষণা করছে ভারত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

প্রাগের চেয়েও গরম এখানে। চেক রাজধানীর মতো এখানে পাথুরে স্কয়ার বা সরু রাস্তাও নেই। রয়েছে টিনের ছাদঅলা ঘর আর ধানক্ষেত, যার মাঝখানে নারিকেল আর আমগাছ। এরপরও আসামে এই মুহূর্তে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন ফ্রাঞ্জ কাফকা। ২০১৬ সাল থেকে ভারতের এই পাহাড়ি চা উৎপাদনকারী রাজ্যে ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স (এনআরসি) তৈরির কাজ চলছে। সন্দেহভাজনদের মধ্য থেকে অনাকাক্সিক্ষত বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার জন্য এই প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। আপাত নির্দোষ এই প্রশাসনিক প্রক্রিয়া বহু মিলিয়ন মানুষকে একটা বর্বর অযৌক্তিক খেলার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।

অবৈধ অভিবাসীদের খুঁজে বের করে তাদেরকে নিষিদ্ধ না করে আসাম এখানকার ৩৩ মিলিয়ন মানুষের ঘাড়ে নিজেদের নাগরিকত্বের সত্যতা প্রমাণের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে, যাদের অনেকেই দরিদ্র ও অশিক্ষিত। যারা ব্যর্থ হবে, তাদেরকে বন্দীশিবিরে আটকা পড়তে হবে। প্রায় হাজার খানিক মানুষ এই মুহূর্তে ‘বিদেশী’ হওয়ার অপরাধে আসামের ছয়টি বন্দীশিবিরে আটক রয়েছে। কিছু ঘটনা শুনে ভারতের নাগরিকরা স¤প্রতি হতবাক হয়ে গেছে। একজন প্রবীন যুদ্ধফেরত সাবেক সেনা সদস্য ও ৫৯ বছর বয়সী বিধবাকেও বন্দীশিবিরে রাখা হয়েছে, কারণ তারা তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারেননি। কিন্তু আসামে আরও বহু এমন ঘটনা ঘটতে চলেছে। আরও দশটি এ ধরনের বন্দীশিবির স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

এরআরসির কাজের বর্তমান ধাপের কাজ শেষ হবে ৩১ জুলাই, যেদিন চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা প্রকাশের কথা রয়েছে। এরপর, যারা বাদ পড়েছে, তাদেরকে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এই ট্রাইব্যুনাল কোর্টগুলো হলো বিশেষ প্যারালাল কোর্ট যেখানে আপিলের কোন সুযোগ নেই। কতজনকে এই পরিণতি ভোগ করতে হবে, সেটা বোঝার উপায় নেই। গত বছর যখন খসড়া এনআরসি প্রণীত হয়, তখন চার মিলিয়ন মানুষের নাম বাদ পড়েছিল। জুনে আরও ১০০,০০০ জনকে সন্দেহভাজন বিদেশী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই বাংলাভাষী, কিছু হিন্দু থাকলেও এদের অধিকাংশই মুসলিম। অন্যান্য আসামীরা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তালিকায় জায়গা পেয়েছে, কারণ তাদের স্থানীয় বংশ পরস্পরার বিষয়টি বা তাদের নিজস্ব জাতের বিষয়টি স্পষ্ট।

অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, বাদ পড়াদের মধ্যে ৯৩ শতাংশই নিজেদের নাম পুণরায় অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন জানিয়েছেন এবং নিজেদের ভারতে জন্মগ্রহণের স্বপক্ষে প্রমাণ দাখিল করেছেন। কিন্তু আমলাতন্ত্রের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা - যেখানে জাতীয়তাবাদী ও ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রভাব বেশি, তারা যত বেশি নাম বাদ দেয়া যায়, সেই চেষ্টা করছে। জাতীয় সরকার এই প্রক্রিয়াটা বড় ধরনের সাফল্য হিসেবে ঘোষণা দিতে যাচ্ছে। দেশের বাকি রাজ্যগুলোতেও তারা এনআরসি এবং ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালকে স¤প্রসারিত করতে চায়। ভারতের ১.৩ বিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে ১৪ শতাংশ হলো মুসলিম। তারা আশঙ্কা করছে আসামের মতো অন্যান্য জায়গাতেও তাদেরকে আস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেলার চেষ্টা করা হবে। তাদের এ ধরনের আশঙ্কার কারণও রয়েছে।

কেউই মনে হচ্ছে জানে না যে, আসামের ‘বিদেশীদের’ শেষ পরিণতি কি হবে। তাদেরকে ফেরত পাঠানো যাবে না। পুরো বিষয়টিকে ভারতের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ। বহু মিলিয়ন মানুষকে ভারতের অন্য কোন রাজ্যেও স্থানান্তর করা যাবে না। কিছু মানুষের জন্য একটা সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছে বিজেপি, যেটা দেশের সেক্যুলার সংবিধানের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। সেটা হলো নাগরিকত্ব আইনে তারা একটা সংশোধনী আনতে চাচ্ছে, যেটার অধীনে হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ বা খ্রিস্টানরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবে, কিন্তু মুসলিমদের সেখানে বিশেষভাবে বাদ দেয়া হয়েছে। যারা এর পরও বাদ পড়বেন, তাদের জন্য একটা পরামর্শ দিয়েছেন আসামের গুয়াহাটি ইউনিভার্সিটির চেয়ার ও বিজেপি সমর্থক ননি গোপাল মাহান্ত। তিনি মনে করেন যে, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল হয়তো দ্রুত কাজ করবে না, তাদের মামলার পাহাড় নিষ্পত্তি করতে ২০ বছরের মতো লেগে যাবে। যারা অ-নাগরিক ঘোষিত হবেন, তাদেরকে রাষ্ট্রহীন করতে হবে, কিন্তু তাদেরকে হয়তো কিছু সময়ের জন্য নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা যেতে পারে। তিনি বলেন, “আপনার ভালো লাগুক বা না লাগুক, নাগরিকত্বের বিষয়টি খুব একটা গণতান্ত্রিক ধারণা নয়”। কাফকা অন্তত তার সাথে খুবই একমত হতেন। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ