পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অব্যাহত বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের উত্তরাঞ্চলে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ .ে মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির চাপ কমাতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া সুনামগঞ্জে সুরমা, লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলা, নেত্রকোণায় সোমেশ্বরী, ফেনীতে মহুয়া কহুয়া, দিনাজপুরে পুনর্ভবা, আত্রাই, ছোট যমুনা, বান্দরবানে সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। কোন কোন স্থানে প্রবল বর্ষণে পানিবদ্ধতা দেখা দেয়ায় অনেকটা বন্দী অবস্থায় রয়েছেন সে এলাকার বাসিন্দারা। বান্দরবান জেলার সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে অনেক স্থানে সীমিত পরিমাণে ত্রাণ সরবরাহের খবর পাওয়া গেলেও অধিকাংশ মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় তিন হাজার পরিবার। ভোররাত থেকে তিস্তা পাড়ের অধিকাংশ বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় অনেকে তিস্তার বামতীর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পূর্বাভাস সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করে নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে। সকাল ১০টা থেকে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যারেজের সবকটি (৪৪টি) কপাট খুলে রাখা হয়েছে।
এদিকে তিস্তা নদীপরিবেষ্টিত ডিমলা এবং জলঢাকা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের তিন হাজার পরিবারের বসতবাড়ীতে পানি উঠেছে। টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ময়নুল ইসলাম জানান, বন্যায় তার ইউনিয়নের প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দী রয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, টানা ভারী বর্ষণ ও উজানে ঢলে তিস্তা পানি বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি জানান, তিস্তা এলাকা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় তৎপর রয়েছে বোর্ডের সংশ্লিষ্ঠরা।
হাসান চৌধুরী, সুনামগঞ্জ থেকে জানান, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার ও সদর উপজেলার শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিকেলে ৩টায় সুরমা নদীর সুনামগঞ্জ ষোলঘর পয়েন্টে ৯৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
সুনামগঞ্জ শহরে সুরমা নদীর পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়াও শহরের কিছু এলাকায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সুনামগঞ্জের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ফরিদুল হক জানান, ৪ উপজেলায় আড়াই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ২শ’ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
মো, আইয়ুব আলী বসুনীয়া, লালমনিরহাট থেকে জানান, তিস্তা ও ধরলা নদীর চরাঞ্চলে বন্যা ও পানিবন্ধতা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৫ হাজার পরিবার। তিস্তা ব্যারাজ দোয়ানী পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার ৩ সে. মি. ওপর দিয়ে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কাপ্তাই (রাঙ্গামাটি) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, উপজেলার রাইখালী, রিফজিপাড়া প্রায় ৫ শতাধিক ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার বর্ষণের মধ্যে কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মফিজুল হক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশ্রাফ আহমেদ রাসেল ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান উমেচিং মারমা রিফজিপাড়ায় পাহাড়ের ঢালুতে এখনও যারা বসবাস করছে তাদের নিরাপদে সরে আশার জন্য জটিকা অভিযান চালান এবং উপজেলা প্রশাসন রাইখালী পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্থ বাসাবাড়ি পরিদর্শন করে এবং আশ্রয় কেন্দ্রে আসা লোকজনের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়।
সাদাত উল্লাহ, বান্দরবান থেকে জানান, জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অবিরাম বর্ষণ অব্যাহত থাকায় সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই দুই নদীর পানি বিভিন্ন ঝিরি ছড়া দিয়ে শহরে প্রবেশের ফলে বান্দরবানের সাঙ্গু নদীর তীরসহ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা বিভিন্ন বিদ্যালয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নিয়েছেন। এছাড়াও বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের বাজালিয়ার বড় দুয়ারা-কলঘর এলাকার রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গত তিনদিন থেকে বান্দরবানের সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
পাশাপাশি টানা ভারী বর্ষণের ফলে সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কাও রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে শহরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং অব্যাহত রয়েছে।
ফেনী জেলা সংবাদদাতা জানান, জেলার ফুলগাজী-পরশুরাম উপজেলায় অবস্থিত মহুরী কহুয়া নদীতে গত মঙ্গলবার রাতে বেড়িবাঁধের ১৪ স্থানে ভাঙন দেখা দিলে প্রায় ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়। এসময় মানুষের ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে যায়, রাস্তাঘাট ডুবে যায়, মাছের ঘের, আমন ধানের বীজতলা ও ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়। গতকাল পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, দুই উপজেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে বন্যার পানি কমলেও পুনরায় বৃষ্টি শুরু হলে ফের ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে গ্রামগুলো আবার প্লাবিত হতে পারে।
দিনাজপুর : আত্রাই, পুনর্ভবা, ছোট যমুনাসহ কয়েকটি নদীর আশপাশের এলাকাও প্লাবিত হয়েছে। এতে বিরল, চিরিরবন্দর, কাহারোলসহ কয়েকটি উপজেলার আমনের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
রাঙ্গামাটি : রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে উপজেলার বহু রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় দেড় হাজার পরিবার। উপজেলায় খোলা হয়েছে ২৪টি আশ্রয় কেন্দ্র। বাঘাইছড়ি পৌর এলাকার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলার পৌর এলাকাসহ ৮টি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ায় বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের সঙ্গে সড়ক যোগযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে মাইকিং করে জনসাধারণকে আশ্রয় কেন্দ্র ও নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে।
নেত্রকোণা : উজানের ঢলে দ্বিতীয় বারের মতো বাড়তে শুরু করেছে নেত্রকোণার সকল নদীর পানি। বুধবার সকাল থেকে বাড়তে শুরু করে সোমেশ্বরীর পানি। নদীর দুই তীর ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। উজানে আবহাওয়া খারাপ থাকায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ১৩০ সেন্টিমিটার এবং কংস নদের পানি জারিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।