পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ১১৯৮৭৮ মামলা : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সীমান্ত হত্যাকান্ড বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ও ভারত। দুই দেশের সীমান্তরক্ষি বাহিনীর বার্ষিক সম্মেলনে এ অঙ্গিকার করা হয় প্রতি বছরই। কিন্তু সীমান্ত হত্যা থামছেই না। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী সীমান্তে প্রায়ই বাংলাদেশীদের হত্যা করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সংসদে সরকারি নিয়ন্ত্রিত বিরোধী পাপেট জাতীয় পার্টি, মাঠের বিরোধী দল বিএনপিসহ দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল দিল্লিতোষণ নীতি গ্রহণ করায় কেউ সীমান্ত হত্যকান্ডের প্রতিবাদ করছে না। এই সুযোগে নানা অজুহাতে বছরের পর বছর ধরে বিএসএফ সীমান্তে বাংলাদেশীদের উপর হত্যাতান্ডব চালিয়েই যাচ্ছে। গতকাল জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ‘সীমান্ত হত্যাকান্ডের ভয়াবহ চিত্র’ তুলে ধরেছেন। তিনি সংসদকে জানান গত ১০ বছরে (২০০৯-২০১৮) সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে ২৯৪ জন বাংলাদেশী হত্যার শিকার হয়েছেন। তবে তিনি দাবি করেন আগের তুলনায় সীমান্তে হত্যা অনেকটা কমে এসেছে।
সংসদে গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির এমপি হারুনুর রশীদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ তথ্য জানান। ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোটে ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী সীমান্তে প্রতিবছর হত্যাকান্ড ঘটছে। ভারতীয় সীমান্ত বাহিনীর হাতে ২০০৯ সালে ৬৬ জন, ২০১০ সালে ৫৫ জন, ২০১১ সালে ২৪ জন, ২০১২ সালে ২৪ জন, ২০১৩ সালে ১৮ জন, ২০১৪ সালে ২৪ জন, ২০১৫ সালে ৩৮ জন, ২০১৬ সালে ২৫ জন, ২০১৭ সালে ১৭ জন এবং ২০১৮ সালে ৩ জন বাংলাদেশী হত্যার শিকার হয়েছেন।
তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সীমান্তে হত্যা কিছুটা কমে আসছে। ২০০৯ সালে যেখানে হত্যা করা হয়েছিল ৬৬ জন বাংলাদেশী; ২০১৮ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৩ জনে। সীমান্তে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা বন্ধের বিষয়ে বিজিবি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে এবং সরকার কূটনৈতিক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে মন্ত্রী জানান। সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বিএসএফ একমত পোষণ করে আসছে বলেও জানান তিনি।
নেত্রকোনা-৩ আসনের অসীম কুমার উকিলের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সীমান্ত এলাকায় বিজিবি ও বিএসএফ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে যেসব স্থানে সমন্বিত টহল কার্যক্রমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখা হচ্ছে। এক বিওপি (সীমান্ত ফাঁড়ি) থেকে পার্শ্ববর্তী বিওপির মধ্যবর্তী দূরত্ব কমানোর জন্য ১২৮টি বর্ডার সেন্ট্রি পোস্ট (বিএসপি) নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া বিএসএফ সীমান্তের ৩১৮ কিলোমিটার এলাকাকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে আধুনিক ক্যামেরাসহ নজরদারির ব্যবস্থা করছে।
চট্টগ্রাম-১১ আসনের এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, সরকারের নির্দেশনায় সুন্দরবন এলাকায় ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩২টি বাহিনীর প্রধানসহ ৩২৮ জন জলদস্যু ও বনদস্যু ৪৬২টি অস্ত্র, ২২ হাজার ৫০৪টি গোলাবারুদ ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। ফেনী-২ আসনের নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ২০০৬ সাল থেকে জুন ২০১৯ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন অবস্থায় ১ হাজার ৫০ জন পুলিশ নিহত ও ৪ হাজার ৪৪০ জন আহত হয়েছেন। বেগম লুৎফুন নেসা খানের প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের যে মই রয়েছে তার মাধ্যমে ২০ তলা পর্যন্ত আগুন নেভানো ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব।
মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ১,১৯,৮৭৮ মামলা
বিএনপির হারুনুর রশীদের অপর প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর সব সংস্থা ২০১৮ সালে ১ লাখ ৬১ হাজার ৩২৩ জন মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৭৮টি মামলা দায়ের করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কোনও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ঘটেনি।
চট্টগ্রাম-৪ আসনের সরকার দলীয় এমপি দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত ১০ বছরে (২০০৯-২০১৮ পর্যন্ত) বিজিবি সীমানায় টহল ও অভিযান চালিয়ে ৬ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকার অন্তমূখী মাদক ও চোরাচালান দ্রব্য এবং ৬৯৮ কোটি টাকার বহির্মুখী চোরাচালান দ্রব্য আটক করতে সক্ষম হয়েছে। এ সময়ে বিজিবি ৫৭টি রিভলবার, ৪৮৩টি পিস্তল, ৪০২টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়াও ৪৫ লাখ ৩০ হাজার ৪৪৩ বোতল ফেন্সিডিল, ১ লাখ ৫৪ হাজার ১০৯ কেজি গাঁজা, ১৬ লাখ ১১ হাজার ২৪২ বোতল বিদেশি মদ, ১ লাখ ৪৩ হাজার ১৮ লিটার দেশি মদ, ৩ লাখ ৫ হাজার ৫৫৯ বোতল বিয়ার, ৩৬৭ কেজি হেরোইন, ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৪০ হাজার ৯৪০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৩ লাখ ৮৫ হাজার ১৫৬টি নেশার ইনজেকশন, ৩.০৭ কেজি আফিম, ৮.০৫৫ কেজি কোকেন আটক করেছে। এছাড়া অবৈধভাবে সীমান্ত পার হওয়ার সময় ৩ হাজার ৮শ ৫৫ জন নারী, এক হাজার ৫শ ৯১টি শিশু উদ্ধার এবং ১০৮ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে।
এর আগে সকালে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে। বিচারবিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি আমরা তার বিষয়ে বিভাগীয় তদন্তও করছি। তিনি দোষী প্রমাণিত হলে ছাড় পাবেন না। অপরাধ করে আগেও কেউ রেহাই পায়নি।
পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার অপরাধ প্রবণতার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যখনই আমরা কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি, আমরা দেরি না করে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।
দেশে এখন কোনো অপরাধই গোপন থাকছে না উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অপরাধগুলোর সচিত্র সংবাদ চলে আসছে। এখন চর কুকরি-মুকরি থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সর্বত্রই ইন্টারনেট যোগাযোগ রয়েছে। এতে লেখাপড়া জানা মানুষ ইন্টারনেটে সবকিছু শেয়ার করতে পারছেন। এটি অবশ্যই আমাদের সরকারের সাফল্য। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশের স‚চনা করেন। এর সুফল এখন আমরা পাচ্ছি। তিনি বলেন, দেশে সামাজিক শাসনব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যাওয়ায় নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো ঘটছে। এখানে মূল্যবোধের অভাবও রয়েছে। সামাজিক শাসনব্যবস্থা জোরদার করা এবং সামাজিক মূল্যবোধ বৃদ্ধির জন্য আমাদের সবারই ভূমিকা রাখতে হবে। সামাজিক মূল্যবোধ অনেক বড় একটি বিষয়। স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোর মাধ্যমে আমরা সামাজিক মূল্যবোধ বৃদ্ধির কাজ করতে পারি। এ জন্য অবশ্য শিক্ষামন্ত্রণালয় একটি বড় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সামাজিক মূল্যবোধ বাড়িয়ে সমাজকে সব ধরনের অপরাধ থেকে মুক্ত রাখতে সবারই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে। এ সময় বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েটস রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তপন বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদসহ ফোরামের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।