মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
কানে শোনা দূরত্বে যখন পেট্রোল বোমাটি বিস্ফারিত হল তখন বৌদ্ধ মঠাধ্যক্ষ তার মঠে পা আড়াআড়ি করে বসে ইসলামের খারাপ দিকের বিরুদ্ধে ভক্ত-অনুসারীদের কাছে জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখছিলেন। কিন্তু ভক্তিভাজন মঠাধ্যক্ষ আম্বালানগোদা সুমেধানন্দ থেরো বিস্ফোরণের দিকে দৃষ্টি দিলেন না। দক্ষিণ শ্রীলঙ্কার জিনটোটা শহরে রাতের বাতাসে উড়তে থাকা মশাগুলো হাত নেড়ে তাড়াতে তাড়াতে তিনি তার বক্তব্য অব্যাহত রাখলেন, মুসলিমরা সহিংস, মুসলিমরা লোভী।
তিনি বলে চললেন, মুসলমানদের লক্ষ্য আমাদের গোটা দেশ ও সব সম্পদ দখল করা। বৌদ্ধ দেশগুলোর পরিণতির কথা ভাবুন আফগানিস্তান, পাকিস্তান, কাশ্মীর ও ইন্দোনেশিয়া। ইসলাম সবগুলো দেশকে ধ্বংস করেছে। কয়েক মিনিট পরই মঠের এক সহযোগী দৌড়ে এলেন ও নিশ্চিত করলেন যে কেউ একজন কাছের মসজিদে একটি মলোটভ ককটেল ছুড়েছে। মঠাধ্যক্ষ হাতের আঙুলগুলো শূন্যে তাক করলেন ও কাঁধ ঝাঁকালেন। তার মাথাব্যথা শ্রীলঙ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের নিয়ে। মুসলিমরা, যারা শ্রীলঙ্কার জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ- তাদের নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই। সুমেধানন্দ থেরোর মত ক্যারিশমাটিক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কের দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়ে বৌদ্ধরা জঙ্গি উপজাতিবাদের যুগে প্রবেশ করেছে। নিজেকে উপস্থাপিত করছে ধর্মযোদ্ধা হিসেবে যারা বাইরের শক্তির বিরুদ্ধে নিজের ধর্মকে রক্ষা করে।
শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমার, এ দুই দেশই উগ্রপন্থী ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সম্মুখসারিতে। দুই দেশেই বৌদ্ধরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তা সত্তে¡ও কিছু বৌদ্ধ, বিশেষ করে যারা শুদ্ধপন্থী থেরাভাদা শাখার অনুসারী, তাদের ক্রমবর্ধমান ধারণা যে তারা অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখে। বিশেষ করে নিজের সহিংস রূপ নিয়ে অগ্রসরমান ইসলাম সম্পর্কে তারা ভীত।
বৌদ্ধবাদ ও ইসলামের টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ ঘটছে। বৌদ্ধদের একটি অংশ তাদের ধর্মের শান্তিপূর্ণ মতবাদ পরিত্যাগ করছে। গত কয়েক বছর ধরে বৌদ্ধ জনতা মুসলিম জনসংখ্যার বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে। বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী ভাববাদীরা তাদের সমর্থন জোরালো করার জন্য উগ্রপন্থী ভিক্ষুদের ধর্মীয় কর্তৃত্বকে ব্যবহার করছে।
২০১৭ সালে বৌদ্ধ জনতা কর্তৃক হামলার শিকার শ্রীলংকার জিনটোটার হিল্লুর মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ নাসির বলেন, বৌদ্ধরা কখনো আমাদের এত বেশী ঘৃণা করত না। এখন তাদের ভিক্ষুরা এ বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে যে আমরা এদেশের নই। অতএব আমাদেরকে এ দেশ ছাড়তে হবে। কিন্তু আমরা কোথায় যাব? এটাই তো আমাদের দেশ।
গত মাসে শ্রীলঙ্কায় এক ক্ষমতাশালী বৌদ্ধ ভিক্ষু অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। তার পরিণতিতে শ্রীলঙ্কা সরকারের মন্ত্রীসভার ৯ জন মন্ত্রীই পদত্যাগ করেন। ওই ভিক্ষু বলেন যে ইস্টার সানডেতে গির্জা ও হোটেলে বোমা হামলার সাথে মুসলিম রাজনীতিকদের যোগসাজশ রয়েছে।
মিয়ানমারে জাতিগোষ্ঠিগত নির্মূল অভিযানে দেশের বেশির ভাগ মুসলিমকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এখনো ইসলামী আগ্রাসনের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। যদিও মুসলিমরা মিয়ানমারের জনসংখ্যার ৫ শতাংশেরও কম। মে মাসে রমজান চলার সময় বৌদ্ধ জনতা মসজিদগুলো ঘেরাও করে মুসল্লিদের পালাতে বাধ্য করে।
বৌদ্ধধর্মের শান্তিবাদী ভাবমর্যাদার কারণে এ ধর্মের সাথে সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনকে তেমন যুক্ত করা হয় না। তবে শান্তি শব্দটি কোনো ধর্মেরই একচেটিয়া সম্পত্তি নয়। বৌদ্ধধর্মেরও নয়। বৌদ্ধরাও যুদ্ধ করে। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।