Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমরা ঝুঁকিতে

বিশ্ব সম্প্রদায়কে পরিবেশ রক্ষায় আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের বিস্তৃতি এবং এর প্রভাব প্রশমন নিজেদের সক্রিয় উদ্যোগ সম্পর্কে আরো সচেতন হতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের সকলকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সচেতন থাকতে এবং নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের অনুরোধ করছি।

এ সময় বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। আমরা মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু তাদের কারণে পুরো বাংলাদেশ ঝুঁকিতে পড়েছে। কক্সবাজারের আমাদের যত পাহাড়ি এলাকা বা জঙ্গল ছিল সেগুলো কেটে-ছেঁটে বসতি স্থাপন করা হচ্ছে। এর ফলে এলাকাটি অনেকটা অনিরাপদ এবং ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। আমি বিশ্বাস করি, শিগগিরই রোহিঙ্গারা দেশে ফিরে যাবেন। তারা যত দ্রুত নিজ দেশে ফিরে যাবে ততই মঙ্গল।

গতকাল সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় দু’দিনব্যাপী জলবায়ু বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন’র (জিসিএ) ঢাকা বৈঠকে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের প্রেসিডেন্ট হিলদা সি. হেইন, গ্লোবাল কমিশন অন এডাপটেশন’র চেয়ারম্যান ও জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন এবং সম্মেলনের কো-চেয়ার এবং বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. ক্রিস্টালিনা জর্জিওভা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ নামে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে সরকার। এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে উপকূলের লোকজনের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।

তিনি বলেন, জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গত এক দশকে আর্থ-সামাজিক খাতে ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। সামনের দিনগুলোতে আর উন্নয়ন হবে।

তিনি বলেন, বর্তমান বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-উদ্ভাবন ও অর্থায়নের যুগে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় আমাদের অনেক সুযোগ রয়েছে যা সকলে সহজে কাজে লাগাতে পারি। তথাপি আমি বলতে চাই, অভিযোজনের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেজন্য সুষ্ঠু প্রশমন ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অভিযোজন প্রক্রিয়ার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্লোবাল কমিশন অব এডাপটেশন’র সহযোগিতায় আমরা জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় সঠিক অভিযোজন কৌশলের পাশাপাশি সাশ্রয়ী পন্থা ও ঝুঁকি নিরসন ব্যবস্থার সুবিধা পেতে চাই।
তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছি আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বানে অনুষ্ঠিতব্য ক্লাইমেট চেঞ্জ সামিটের প্রতিবেদনের সুপারিশগুলোর জন্য। ওই সম্মেলনে এলডিসিভুক্ত দেশসমূহ ও বাংলাদেশর পক্ষ থেকে আমাকে বক্তব্য দেয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশে একটি ‘রিজিওনাল অ্যাডাপটেশন সেন্টার’ স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, অভিযোজন প্রক্রিয়ায় অগ্রগামী দেশ হিসেবে বাংলাদেশে একটি আঞ্চলিক অভিযোজন কেন্দ্র স্থাপনের দাবী রাখে। আমি বাংলাদেশে একটি আঞ্চলিক অভিযোজন কেন্দ্র স্থাপনের বিষয় বিবেচনা করতে আপনাদের অনুরোধ জানাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন ঢাকা সম্মেলনের সার্বিক সাফল্য কামনা করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব অনুমিত সময়ের আগেই আমাদের প্রত্যেকের ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। সেজন্য, এর প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বকে বিনিয়োগে আরও বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, আমি শুধু নিজের দেশ নিয়ে ভাবি না। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে অনেক ছোট ছোট দ্বীপপুঞ্জ হারিয়ে যাবে। তখন সেখানকার মানুষেরা কোথায় যাবে, সে কথাও আমাদের ভাবতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বড় হুমকি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী পৃথিবীর উষ্ণতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, তার সরকারের অক্লান্ত পরিশ্রমে গত এক দশকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক খাতে যে বিশাল উন্নতি হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবে আজ তা হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। জনগণের জন্য অভিযোজন ব্যবস্থা তৈরি করতে তার সরকারের নিরলসভাবে কাজ করার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, গত এক দশকে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসমূহ অভিযোজনের মাধ্যমে নিরসনের জন্য বছরে প্রায় একশো কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করছি।

তিনি প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনের সাফল্য তুলে ধরে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় অর্থপূর্ণ সহযোগিতার জন্য ২০১৫ সালে প্যারিসে বিশ্ব সম্প্রদায় একটি সুদৃঢ় অবস্থান তৈরিতে সফল হয়েছে।

তিনি বলেন, অনেকের মত আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ এবং বৈশ্বিকভাবে আমাদের এটি সমাধান করতে হবে। প্যারিস চুক্তি হচ্ছে এই বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সবচেয়ে বাস্তবসম্মত এবং কার্যকর বৈশ্বিক চুক্তি। এ বিষয়ে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান আজকে সকলের সামনে উপস্থাপনের এক অনন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাবউদ্দিনও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ