Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কর্ণাটক সঙ্কটে ফের রিসোর্ট রাজনীতি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা অধিবেশনে আস্থা ভোটের মুখে ১৩ বিদ্রোহী এমএলের মধ্যে ১০ জনই যেয়ে উঠলেন মুম্বাইয়ের একটি বিলাসবহুল হোটেলে। এর মাধ্যমে মাত্র ১৩ মাস বয়সী কংগ্রেস-জেডি (এস) জোট সরকারের সঙ্কট আরো বাড়িয়ে ফিরে এলো রিসোর্ট রাজনীতি।

কংগ্রেস বিধায়কদের একটি প্রিয় গন্তব্য হচ্ছে বিদাদির গল্ফ রিসোর্ট ঈগলটন। বিজেপি আস্থা ভোটের ডাক দিতে পারে এই ধারণা থেকে কর্ণাটকের কংগ্রেস নেতৃত্ব তাদের এমএলএদেরকে ঈগলটনে নিয়ে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু রিসোর্টর্টির এক অংশে সংস্কারের কাজ চলায় ও অন্যান্য কক্ষ একটি জুনিয়র ক্রিকেট দলকে আগে থেকেই বরাদ্দ দিয়ে রাখায় সেটি সম্ভব হয়নি। কংগ্রেস সেখানে ৮০টি রুম চেয়েছিল, কিন্তু রিসোর্টটিতে মাত্র ৩৫টি রুম খালি ছিল। জেডি (এস) রোববারের জন্য কোডাগু জেলার কুশলনগরের থান্ডুরের প্যাডিংটন রিসোর্ট ও স্পা’তে রুম বুক করেছিল। কিন্তু শনিবার সেই বুকিং বাতিল করে তারা। সোমবার বেঙ্গালুরু থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে দেবনাহাল্লীর প্রেস্টিজ গল্ফাশায়ারে তারা তাদের এমএলএদের নিয়ে রাখে।

২০১৮ সালের নির্বাচনে কোন দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারায় সৃষ্ট জটিলতা থেকেই শুরু হয় এই রিসোর্ট রাজনীতি। তথন থেকেই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ভোটের প্রয়োজন হলেই তাদেরকে নিয়ে রিসোর্টে রাখা শুরু হয়। শুধু ভোটের দিন তাদেরকে ভোট দিতে নিয়ে আসা হতো। গত বছরের মে মাসে বিএস ইয়াদুরাপ্পার ওপর অনাস্থা ভোটের সময় রিসোর্টর চাহিদা বেড়ে গিয়েছিলো। সে সময় সবচেয়ে বড় দল তাদের সব এমএলএদের হরিয়ানার গুরগাওয়ের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে নিয়ে রেখেছিল। কংগ্রেস তাদের এমএলএদের প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বিদায়ীর রিসোর্টে নিয়ে রেখেছিল।

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে সিএলপি’র একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আগে বিজেপি দলে ভেড়াতে পারে এই শঙ্কায় কংগ্রেস তাদের এমএলএদের আবার বিদায়ীতে নিয়ে রেখেছিল। গত বছর মহিশুর জেলার পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়, দলবদলের আশঙ্কায় বিজেপি এবং জেডি (এস) সদস্যরা কোদাগুতে একটি বিলাসবহুল রিসোর্টে যেয়ে উঠেছিল। তামিলনাড়ুতেও গত বছর জয়ললিতার মৃত্যুর পরে রাজনৈতিক সঙ্কট চরমে উঠলে ক্ষমতাসীন এআইডিএমকে পার্টি প্রায় ৫০ জন বিধায়ক কোদাগুর রিসোর্টে নিয়ে রাখে।

আশির দশক থেকেই কর্ণাটক ভারতের রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে ওঠে। এর শুরু হয় ১৯৮৪ সালে অন্ধ্রপ্রদেশে আস্থা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী এনটি রামা রাও তার বন্ধু ও কর্ণাটকের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী রামকৃষ্ণ হেগের সহায়তায় দলের বিধায়কদের এক মাস ধরে বেঙ্গালুরুর নন্দী পাহাড়ে নিয়ে রাখে।

২০০২ সালে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী ভিলাস্রো দেশমুখ আস্থা ভোটের মুখোমুখি হয়ে তার সমস্ত বিধায়ককে বেঙ্গালুরুতে সরিয়ে দিয়েছিলেন।
২০০৬ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে এইচডি কুমারস্বামী ও বিএস ইয়েদুরাপ্পা সরকারের সময়ে রিসোর্ট রাজনীতি চরমে পৌঁছে। বিজেপির সরকার বিদ্রোহের মুখোমুখি হলে ইয়েদুরাপ্পা তার অনুগত বিদায়কদেরকে নিয়ে একটি রিসোর্টে রাখেন। তার দাবি ছিল সদানন্দ জগদীশ শেটরের বদলে গৌড়কে মুখ্যন্ত্রীর পদ দিতে হবে। ২০১২ সালে তিনি আবার ডিগবাজি দিয়ে গৌড়কে সরিয়ে শেটরকে মুখ্যমন্ত্রী করার দাবিতে তার বিধায়কদের নিয়ে এক রিসোর্টে আস্তানা গাড়েন।

২০১৭ সালে, কর্ণাটক সংবাদ শিরোনামে চলে আসে যখন গুজরাটের রাজ্যসভা নির্বাচনে ডি কে শিবকুমারের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের নেতারা সফলভাবে বিধায়কদের দলে ভেড়ানোর জন্য বিজেপি’র প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন। সে সময় কংগ্রেস তাদের ৪৪ জন বিধায়ককে প্রায় এক সপ্তাহের জন্য বিদায়ীর রিসোর্টে নিয়ে রেখেছিল। সূত্র : টিওআই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ