বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
পারস্পরিক লেনদেন কর্মকান্ডে যে নৈতিক মূল্যবোধ ও মর্যাদা কেন্দ্রীয় আসনের সাথে সম্পৃক্ত তা হচ্ছে দিয়ানতদারী এবং আমানত। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, মানুষ নিজস্ব কায়-কারবার ও ব্যবসা-বাণিজ্য এমনকি সামগ্রিক ক্ষেত্রে ঈমানদার হোক এবং যার নিকট যে পরিমাণ আমানত গচ্ছিত আছে তা দিয়ানতের সাথে অণু-পরমাণু পর্যন্ত প্রত্যর্পণ করবে, এই কর্মকান্ডকে আরবীতে আমানত বলে। মহান আল্লাহপাক নিজের শরীয়ত ভিত্তিক বাধ্যবাধকতাকে যা তিনি মানবজাতির ওপর সোপর্দ করেছেন, তাকেও আমানত শব্দের দ্বারা বিশ্লেষণ করেছেন। আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই আমি আমার আমানতকে আকাশসমূহের ওপর এবং যমিনের ওপর এবং পর্বতের ওপর উপস্থাপন করেছিলাম, কিন্তু সেগুলো তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে এবং তাকে ভয় করতে থাকে এবং মানুষ যে আমানতের বোঝা ধারণ করে। নিঃসন্দেহে তারা ছিল জালেম এবং মূর্খ।’
এই আয়াত হতে সুস্পষ্ট বোঝা যায় যে, আল্লাহর দেয়া এই পরিপূর্ণ শরীয়ত তার প্রদত্ত নেয়ামত বিশেষ। যা আমরা মানুষের ওপর সোপার্দ করা হয়েছে। এ জন্য আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে এই যে, আমরা এই আমানত মোতাবেক স্বীয় মালিক ও অধিপতির পরিপূর্ণ হক হক আদায় করব। এ ক্ষেত্রে এমনটি কখনো হতে পারে না যে, আমরা এই আমানতের খেয়ানত করব।
আল্লাহপাকের ফেরেশতামন্ডলী যারা তার পয়গামসহ আল্লাহর নির্দিষ্ট বান্দাদের ওপর অবতীর্ণ হবেন, তারাও আমানতের দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করতেন। যাতে করে আল্লাহপাকের নিকট হতে তার বান্দাদের প্রতি যেসব নির্দেশ আসত সেখানে কম-বেশি ছাড়া সেই নির্দেশ বান্দাদের কাছে পৌঁছানো হতো।
এ জন্য আল কোরআনে ফেরেশতাদের আল-আমীন নামে বিভ‚ষিত করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘এই পয়গাম নিয়ে আমানতদার রূপ অবতীর্ণ হয়েছে।’ অন্য এক জায়গায় বলা হচ্ছে, ‘তার কথা মান্য করা যায়, সেখানে আমানতদার অবস্থিত।’
অধিকাংশ পয়গাম্বরের গুণ বর্ণনা প্রসঙ্গেও আল কোরআনে এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। পয়গাম্বরগণ নিজ নিজ পরিচয় স্বীয় উম্মতদের কাছে ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন, ‘অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য আমানতদার বার্তাবাহক।’ এর মর্ম হচ্ছে এই যে, আল্লাহপাকের নিকট হতে যে পয়গাম আমি লাভ করেছি তা যথাযথভাবে তোমাদের নিকট আমি পৌঁছে দিচ্ছি। এর সাথে আমার তরফ থেকে কোনো কিছুই মিলানো যাচ্ছে না এবং এর কম-বেশিও করা হচ্ছে না।
রাসূলুল্লাহ সা.-কে নবুওয়াত লাভের আগে মক্কার অধিবাসীরা আল-আমীন খেতাবে ভ‚ষিত করেছিলেন। কেননা, তিনি স্বীয় কাজকর্মে দিয়ানতদার ছিলেন। যে ব্যক্তি যা কিছু তার কাছে গচ্ছিত রাখত, তিনি সেই গচ্ছিত আমানত যথাযথই প্রত্যাবর্তন করতেন। আমানতি দ্রব্যে তিনি মোটেও হস্তক্ষেপ করতেন না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।